ঢাকা ০৬:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

যমুনায় বৈঠকে ড.ইউনুসকে লিখিত বার্তা দিলো বিএনপি

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:১৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
  • / ৪৬ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে  বিএনপি। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এই বৈঠক শুরু হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তাঁর সঙ্গে স্থায়ী কমিটির আরও তিনজন সদস্য ছিলেন। তাঁরা হলেন, আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ। বৈঠকে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসকে লিখিত বার্তা দিয়েছে ।  দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলের পক্ষ থেকে এই চিঠি দেন।

বিএনপির লিখিত বার্তা

দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর অগণতান্ত্রিক বর্বরতম ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সাম্য, মানবিক মর্যাদা, বৈষম্যহীন ও সামাজিক ন্যয়-বিচারভিত্তিক একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে এদেশের মানুষ আপনার নেতৃত্বে একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে।

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসনের পতন হয়েছে, বিজয়ী হয়েছে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান; কিন্তু গত সাড়ে ৯ মাসে জনপ্রত্যাশা বা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু এর মধ্যে পূরণ হয়েছে তা একটি বিশাল প্রশ্নের সম্মুখীন। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। অথচ আগামীর বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি এই ঐক্যকে বজায় রেখে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। এই ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখার কথা। কোনো মহলকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অ্যাজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয় সেদিকে সচেতন থাকা উচিত ছিল। এই বক্তব্য আমরা আপনার সামনে বারবার উচ্চারণ করেছি। অথচ সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে জনমনে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

মানবিক করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে জাতীয় স্বার্থে রক্ষিত হচ্ছে কি না সেটা সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেওয়া দরকার ছিল। এছাড়াও এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের আছে বলে এদেশের জনগণ মনে করে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি। দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে যেন দেশে অস্থিতিশীল কোনো পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত কেবল জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার কর্তৃক জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হওয়াই সমীচীন।

অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব উপদেষ্টা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত বলে সবাই জানে ও বোঝে; উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে বলেই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদের অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এরই মধ্যে বিতর্কিত হয়েছেন, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি দিতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘সংস্কার সনদ’ তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যেই আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকা স্বত্বেও একই বিষয়গুলো নিয়ে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে একটি দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি আমাদের এবং সরকারকে বিব্রত করে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও একটি মহল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন চায়। সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সব ক্ষেত্রে আমাদের মতামত না নিলেও নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে এই কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন করায় নির্বাচন কমিশনকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করেছে সুতরাং আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা আশা করব দ্রুত সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র হিসাবে ইশরাক হোসেনকে শপথগ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নেবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পক্ষপাতমূলক আচরণ সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে।

নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ব্যবস্থা করা। এমন বাস্তবতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করার বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক ও রহস্যজনক।

জুলাই-ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিগগিরই জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম অ্যাজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সরকারের যা করণীয় তা যথাসময়ে না করে চাপের মুখে করার সংস্কৃতি এরই মধ্যে সরকারের সক্ষমতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে এবং অন্যদেরও একই প্রক্রিয়ায় দাবি আদায়ের ন্যায্যতা প্রদান করেছে। এই অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির দায় পুরোটাই সরকারের বলে আমরা মনে করি।

যেহেতু, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সঙ্গে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

আমরা যে বিষয়গুলো এই পত্রে উল্লেখ করেছি সেগুলো আমাদের আগের প্রস্তাব ও পরামর্শের মত উপেক্ষিত হলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক এবং অনিবার্যভাবেই তা আমাদের সরকারকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে পরামর্শ দিতে নিরুৎসাহিত করবে।

দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখতে, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সরকার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, এই প্রত্যাশা আমাদের সবার।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

যমুনায় বৈঠকে ড.ইউনুসকে লিখিত বার্তা দিলো বিএনপি

আপডেট সময় : ০৬:১৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে  বিএনপি। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এই বৈঠক শুরু হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তাঁর সঙ্গে স্থায়ী কমিটির আরও তিনজন সদস্য ছিলেন। তাঁরা হলেন, আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ। বৈঠকে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূসকে লিখিত বার্তা দিয়েছে ।  দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলের পক্ষ থেকে এই চিঠি দেন।

বিএনপির লিখিত বার্তা

দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর অগণতান্ত্রিক বর্বরতম ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের রক্তাক্ত ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সাম্য, মানবিক মর্যাদা, বৈষম্যহীন ও সামাজিক ন্যয়-বিচারভিত্তিক একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে এদেশের মানুষ আপনার নেতৃত্বে একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে।

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসনের পতন হয়েছে, বিজয়ী হয়েছে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান; কিন্তু গত সাড়ে ৯ মাসে জনপ্রত্যাশা বা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু এর মধ্যে পূরণ হয়েছে তা একটি বিশাল প্রশ্নের সম্মুখীন। ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। অথচ আগামীর বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি এই ঐক্যকে বজায় রেখে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। এই ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখার কথা। কোনো মহলকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অ্যাজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয় সেদিকে সচেতন থাকা উচিত ছিল। এই বক্তব্য আমরা আপনার সামনে বারবার উচ্চারণ করেছি। অথচ সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে জনমনে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

মানবিক করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে জাতীয় স্বার্থে রক্ষিত হচ্ছে কি না সেটা সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেওয়া দরকার ছিল। এছাড়াও এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের আছে বলে এদেশের জনগণ মনে করে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত কয়েকজন উপদেষ্টা যাদের বক্তব্যে এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের সরিয়ে দেওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি। দেশের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে যেন দেশে অস্থিতিশীল কোনো পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত কেবল জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার কর্তৃক জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গৃহীত হওয়াই সমীচীন।

অন্তর্বর্তী সরকারের যেসব উপদেষ্টা একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত বলে সবাই জানে ও বোঝে; উপদেষ্টা পরিষদে তাদের উপস্থিতি সরকারের নির্দলীয় নিরপেক্ষ পরিচিতিকে ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ করে চলেছে বলেই সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাদের অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এরই মধ্যে বিতর্কিত হয়েছেন, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তাকে অব্যাহতি দিতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘সংস্কার সনদ’ তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যেই আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকা স্বত্বেও একই বিষয়গুলো নিয়ে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে একটি দলের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি আমাদের এবং সরকারকে বিব্রত করে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হলেও একটি মহল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন চায়। সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহ পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সব ক্ষেত্রে আমাদের মতামত না নিলেও নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে এই কমিশন গঠন করেছে। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন করায় নির্বাচন কমিশনকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই দেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থান করেছে সুতরাং আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা আশা করব দ্রুত সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র হিসাবে ইশরাক হোসেনকে শপথগ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নেবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পক্ষপাতমূলক আচরণ সরকারের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে।

নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ব্যবস্থা করা। এমন বাস্তবতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করার বিষয়টি উদ্দেশ্যমূলক ও রহস্যজনক।

জুলাই-ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিগগিরই জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম অ্যাজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সরকারের যা করণীয় তা যথাসময়ে না করে চাপের মুখে করার সংস্কৃতি এরই মধ্যে সরকারের সক্ষমতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে এবং অন্যদেরও একই প্রক্রিয়ায় দাবি আদায়ের ন্যায্যতা প্রদান করেছে। এই অনভিপ্রেত ও বিব্রতকর পরিস্থিতির দায় পুরোটাই সরকারের বলে আমরা মনে করি।

যেহেতু, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সঙ্গে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

আমরা যে বিষয়গুলো এই পত্রে উল্লেখ করেছি সেগুলো আমাদের আগের প্রস্তাব ও পরামর্শের মত উপেক্ষিত হলে তা হবে দুর্ভাগ্যজনক এবং অনিবার্যভাবেই তা আমাদের সরকারকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে পরামর্শ দিতে নিরুৎসাহিত করবে।

দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখতে, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সরকার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, এই প্রত্যাশা আমাদের সবার।