ঘরের মাঠে গোলে অভিষেক হামজা চৌধুরীর,অব্যবস্থাপনা বাফুফের

- আপডেট সময় : ১২:০১:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
- / ৫৬ বার পড়া হয়েছে
ভুটানের বিপক্ষে জয় প্রত্যাশা অনেক আগ থেকেই। সবার দৃষ্টি ছিলো হামজাদের খেলার দিকে। ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লীগের এই খেলোয়াড় বাংলাদেশের মাটিতে কতোটা নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন। দর্শক সমর্থকদের মন ভরাতে পারছেন তো? এমন সব প্রশ্নের শুরুতেই দিয়ে দিলেন হামজা হেডে দারুণ এক গোল করে। মাত্র ছয় মিনিটেই প্রস্তুতি ম্যাচে তার দেয়া হেডের গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। পরের হাফে আরও এক গোল, অবশ্য এই গোলটি করেছিলেন সোহেল রানা। অনেকটা দূর পাল্লার শটে তিনি দলের দ্বিতীয় গোলটি করেন।
এরপরেই ম্যাচটি যখন নিশ্চিত জয়ের দিকে গড়াচ্ছে তখন ফাহমিদুল, জামাল ভুঁইয়া এবং হামজা চৌধুরীদের নিরাপদে উঠিয়ে নেন কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরা। কোচ হয়ত শেষের দিকে ঝালিয়ে দেখলেন হামজাদের অনুপস্থিতিতে ভুটানের বিপক্ষে কতোটা নিরাপদ। বুঝতে যে তার অসুবিধা হয়নি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি হোজম করতে করতে বেঁচে যায় গোল কিপারের কল্যাণে। শেষ পর্যন্ত বুধবারের এই ম্যাচটিতে ২-০ গোলের জয় নিয়েই সিঙ্গাপুর ম্যাচের প্রস্তুতি সেরেছে বাংলাদেশ।
এমন একটি ম্যাচের মধ্যদিয়ে প্রায় সাড়ে চার বছর পর জাতীয় স্টেডিয়ামে ফুটবল গড়ালো। বলতে গেলে নতুন করে গড়ে উঠা নতুন মাঠে নতুনত্ব সব কিছুতেই। ফেভারিট দল হিসেবে বাংলাদেশ বেশ দাপুটে ফুটবল খেলেছে। তবে ফরোয়ার্ডরা আরও নিখুঁত হলে স্কোরলাইন হতে পারতো ভিন্ন। যা কিনা গ্যালারিতে বসে উপভোগ করেছেন কানাডা থেকে উড়ে আসা সোমিত সোম। একেবারেই মনোযোগ দিয়ে দেখলেন দেখলেন হামাজ-ফাহমিদুল ও জামাল ভুঁইয়াদের খেলা। তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো যেন তিনিও মাঠে নামার যেন তর সইতে পারছেন না। তবে আগামী ১০ জুন এই মাঠেই সোমিত সোম মাঠে নামবেন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। এতে যে দলটি আরও শক্তিশালী হতে যাচ্ছে তা বেশ পরিস্কার। ভুটানের সাথে হামজাদের নৈপুন্যের ব্যবধান যেন পরিস্কার বার্তা দিচ্ছে।
এই ম্যাচে হয়ত সবার ফাহমিদুলের কাছে গোলের প্রত্যাশা করেছিলেন। বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি হয়েছিলো। দূর্ভাগ্যক্রমে সে আক্রমন গুলো খুব একটা জোরালো হয়নি। যদিও খেলায় তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন, বলা যায়। বেশ কয়েকটি দারুণ ক্রস দিয়েছেন, শটও নিয়েছেন। নজর কেড়েছেন গতি আর ক্ষিপ্রতায়।
তার আগে হামজাদের খেলা দেখতে দর্শকদের উত্তেজনা ছিলো চরমে। গ্যালারির টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেলেও দেখা যায় প্রায় চল্লিশভাগ জায়গা ফাঁকা। টিকিট হাতে দর্শকরা মাঠে প্রবেশ করার জন্য লাইনে দাড়িয়ে বিব্রত হন। সঠিক সময় গ্যালারিতে ঢুকতে না পারার জ্বেদে গেইট ভেঙ্গে শেষ মাঠে প্রবেশ করেন অনেকেই, যা কিনা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর লোকজনই জানিয়েছেন।
গেট ভাঙার পর উত্তর গ্যালারি দর্শকে ভরে যায়। এরপরেও পশ্চিম গ্যালারির অনেক চেয়ার খালি থাকতে দেখা যায়। অথচ দর্শক টিকিট কিনতে চেয়ে কিনতে পাননি, এখন ঢুকতে এসেও বিড়ম্বনায় পড়েন তারা। মাঠের ভিতরেও ছিলো চরম অব্যবস্থাপনা। মাঠের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে হামজা চৌধুরীর সাথে দর্শকরা সেলফি তুলতে চলে যান।
অব্যবস্থাপনা ছিলো প্রেস বক্সেও। সঠিক সময় টেলিভিশন সেট না করা, আবার সেট করার পর সেগুলো কাজে না আসার মধ্য দিয়ে বাফুফে প্রথম ম্যাচ আয়োজনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
ষষ্ঠ মিনিটে জামাল কর্নার থেকে অসাধারণ এক ক্রস বাড়ান, যেটিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন হামজা। ২৭ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার দারুণ টাইমিংয়ে হেডে বলের সঙ্গে নিখুঁত সংযোগ ঘটান, যা ভুটান গোলরক্ষকের বাড়ানো হাত ছুঁয়ে জালে জড়িয়ে যায়। সেই গোলেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
২১তম মিনিটে তারিক কাজির ভুলে গোল হজম করতে পারতো বাংলাদেশ। কিংমা ওয়াংচুককে আটকাতে গিয়ে তপু বর্মন প্রথম দফায় না পারলেও দ্বিতীয় দফায় বল ক্লিয়ার করলে বেঁচে যায় তারা।
নয় মিনিট পর রাকিবের পাস থেকে কাজেম বল বাড়ান ফাহামিদুলকে। তার কোণাকোণি ঠেকান ভুটান গোলরক্ষক। একটু পর ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন জামালও। কিন্তু লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি তিনি।
৩৯তম মিনিটে হামজার বাড়ানো বল থেকে তাজের ক্রসে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার ঠিকভাবে ক্লিয়ার করতে না পারলে ফাঁকায় বল পেয়ে যান জামাল। ভালো শটও নেন। কিন্তু তার ডিফেন্ডার এসি গাইয়েলতেসেনের গায়ে লেগে ব্লকড হলে ব্যবধানে বাড়েনি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে তিনটি পরিবর্তন আনেন কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা। সিঙ্গাপুর ম্যাচের আগে হামজাকে তরাতাজা রাখেই হয়তো তাকে নামিয়ে ফেলেন। সঙ্গে কাজেম ও জামালকে তুলে নেন তিনি। তাদের পরিবর্তে মাঠে নামান মোহাম্মদ ইব্রাহিম, শেখ মোরসালিন ও মোহাম্মদ হৃদয়কে।
তবে হামজাকে ছাড়াও গোল পেতে মাত্র চার মিনিট সময় নেয় বাংলাদেশ। ৪৯তম মিনিটে প্রতিপক্ষ ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে বা পায়ের বুলেট গতির শটে লক্ষ্যভেদ করেন সোহেল। তবে পরের মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি রাকিব।
৫৯তম মিনিটে ফাহামেদুল ও রাকিবকে তুলে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ও আল আমিনকে মাঠে নামান কাবরেরা। তাতে শীর্ষ অপেক্ষার পর অভিষেক হয় আল আমিনের। গোল না পেলেও অল্প সময়ে নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছেন দারুণ পারফরম্যান্স করে।
৭৪তম মিনিটে ইয়েসির হেড অল্পের লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচের শেষ দিকে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন ইব্রাহিম পারেননি। তার শট সহজেই আটকান ভুটান গোলরক্ষক গাইয়েলতসেন জাংপো।
ম্যাচের যোগ করা সময়ে দারুণ এক সেভে জাল অক্ষত রাখেন গোলরক্ষক মিতুল মারমা। জিগমে নামগায়েলের শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকান তিনি। জিগমের ফিরতি শট বাইরে গেলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ।