সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতল বাংলাদেশ,নায়ক সেই রিয়াদ

- আপডেট সময় : ০৪:০১:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪
- / ২৩৮ বার পড়া হয়েছে
লুৎফুল আলম চৌধুরী :
লো স্কোর, সহজ ম্যাচ অতপর শ্বাসরুদ্ধকর ২ উইকেটের জয়। প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কাকে ১২৪ রানে আটকে দিয়েও যাই যাই দশা ছিলো টিম বাংলাদেশের। সেখানে আবারো দেশকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচালেন বুড়িয়ে যাওয়া মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ধ্যায় অন্ধকার তাড়িয়ে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটালেন দেশের ক্রিকেটের এই নিরব সৈনিক। বাংলাদেশও পেলো চলতি বিশ্বকাপে শুভ সূচনা। তাতে হতাশার অন্ধকারে ডুবিয়ে থাকা দলের সতীর্থরাও খুঁয়ে পেলো উজ্জীবিত হওয়ার নতুন পথ। যা কিনা পরের ম্যাচে, আগামী ১০ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টনিক হয়ে কাজে লাগতে পারে।
ম্যাচ জয়ের পর সাধারণত ব্যর্থতা হারিয়ে যায়। যেভাবে অতীত হওয়ার পথে সমসাময়ীক দলের ব্যর্থতার চিত্র। আজও দেখা দিয়েছিলো ব্যাটিংয়ের ভঙ্গুর দশা। ওপেনিং জুটিতে গত পাঁচ ম্যাচেও সোজা হয়ে দাড়াতে পারেনি সৌম্য, তানজিম তামিম ও শান্ত। ম্যাচ শেষে তাই প্রশ্ন উঠতেই পারে, আর কতোদিন সময় গেলো সৌম্যের ব্যাট হাসবে। নির্ভরতা প্রতীক হয়ে সবার উপর আস্থা হয়ে উঠবেন। ১২৫ রানের টার্গেট অনেকটাই কাছের পথ। অথচ বাংলাদেশের ব্যাটারদের চিত্র দেখে মনে হলো ছোট্ট স্কোরটিও যেন হয়ে ওঠলো বিশাল পাহাড়তুল্য। এই দূরত্ব অতিক্রম করতে গিয়ে একবার দাড়ায় তো আবার পা পিছলে পড়া দশা। শেষের দিকে মাহমুদ উল্লাহ হাল না ধরলে তো সবই গিয়েছিলো। হৃদয় আর লিটনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় বাংলাদেশ শুরুতে কঠিনে রুপ নেয়া ম্যাচটিকে উজ্জীবিত করে তোলে। হৃদয়ের আউটের পর ভরসায় ছিলেন সাকিব-রিয়াদ জুটি। বলের চেয়ে রানের দূরত্ব কমে যায় অনেক। কিন্তু সাকিব যেন নিজেই আউট হতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, হলেনও। এরপর টপাটপ আরো দুই উইকেটের পতনে বাংলাদেশের কব্জায় থাকা জয়টাই যেন হাত ছাড়া হওয়া দশা। হাতে দুই উইকেট, দুই ওভারে দরকার ১১ রান। সেখান থেকে মাহমুদ উল্লাহ হয়ে উঠলেন আস্থার প্রতীক। দলের দূরদীনে আবারো নিরব সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছেন। শেষ দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাকিয়ে হালকা করে দেন দলের সকল দূশ্চিন্তা। এরপর মাঠ ছাড়লেন বিজয়ের ব্যাট উচিয়ে। তার এই জয়টা যে কোচ হাথুরের সম্মান বাচিয়েছে সেটা বুঝতে পেরেছেন কোচ। তাই হয়ত খেলা শেষে মাহমুদ উল্লাহকে আলিঙ্গনে উচ্ছাসে মেতে ছিলেন।
অন্যদিকে সৌম্য নাম লিখালেন এবার শূন্যতে আউট হবার বিশ্বরেকর্ড। শ্রীলঙ্কার দেয়া টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ২ বল থেকে শূন্য রান করে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার শিকারে পরিণত হন সৌম্য। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবথেকে বেশিবার শূন্যতে আউট হওয়া ক্রিকেটার এখন তিনি। অবশ্য এ রেকর্ডে যে তিনি একা তা নয়, তার সঙ্গে আছে যৌথভাবে রয়েছেন আয়ারল্যান্ডের পল স্টার্লিং। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এ ফরম্যাটে দু’জনেই ১৩ বার শূন্যতে ফিরে যাওয়ার লজ্জার রেকর্ড গড়েছেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবশেষ তিন ইনিংসে সৌম্যর দ্বিতীয় শূন্য এটি।
স্টার্লিং ১৪৩ ইনিংস খেলে ১৩ বার শূন্য রানে আউট হলেও সৌম্যর লেগেছে ৮৩ ইনিংস। এ তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তিনি ১৪৪ ইনিংসে ১২ বার শূন্য রানে আউট হন। তার সঙ্গে আরও আছেন রুয়ান্ডার কেভিন ইরাকোজে ও আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েন। বাংলাদেশিদের মধ্যে সৌম্যর পরে আছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। তারা দুজন শূন্য রানে আউট হয়েছেন ৮ বার করে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সৌম্যর চতুর্থ শূন্য ছিল আজকের ম্যাচে। ১৬ ইনিংসে খেলে তার সংগ্রহ মাত্র ১৫১ রান। গড় ৯.৪৩, স্ট্রাইক রেট ৯৮.৬৯! পঞ্চাশ বহু দূরে, কোনো ইনিংসে পঁচিশও ছুঁতে পারেননি তিনি। সর্বোচ্চ ইনিংস ২১ রানের। অবশ্য বিশ্বআসরে শূন্যের রেকর্ডে শীর্ষে নন সৌম্য। তার চেয়ে বেশি খালি হাতে ফিরেছেন তিলকারাত্নে দিলশান ও শাহিদ আফ্রিদি। বিশ্বকাপে দুজনই রানের খাতা খোলার আগে আউট হয়েছেন ৫ বার করে।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই শূন্যের রেকর্ড গড়া সৌম্য সার্বিকভাবেও ছন্দে নেই। এই সংস্করণে অবশ্য কখনও তেমন ধারাবাহিক ছিলেন না সৌম্য। অভিষেকের পর প্রথম ২৬ ইনিংসে কোনো ফিফটি করতে পারেননি তিনি। তবে চল্লিশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেন পাঁচটি। স্ট্রাইক রেটও তখন ছিল সমীহ জাগানিয়া।
২০২১ সালে পাঁচ ইনিংসের মধ্যে তিনটি ফিফটি করে নিজের সামর্থ্যের জানান দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু এরপর থেকে শুধুই হতাশা। একের পর এক সুযোগ পেয়েও নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ তিনি।