ঢাকা ০২:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন ড.ইউনুস

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:২৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৫৭ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চীন সফরের ফলাফল নিয়ে জনমনে রাজ্যের কোতুহল থাকছেই। পাশবর্তী ভারত ড.ইউনুসের চীন সফরকে মোটেও ভালো চোখে দেখিনি। দেশ থেকে ইউনুস পতন প্রত্যাশা তাদের প্রতিনিয়ত। রাজনৈতিক দলগুলোর মতো ইউনুস সরকারকে পরিচালিত করতে পারছেন না তারা,এমন আওয়াজ দেশজুড়ে। সম্প্রতি ড.ইউনুসের চীন সফর তাদের আরও ভাবিয়ে তুলেছে।

ড.ইউনুস চীন সফরে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়ে আসেন। চীন সফরের পর্যালোচনা এবং বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার পরবর্তী পদক্ষেপের রূপরেখা তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার (২০ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি পরবর্তী পদক্ষেপের রূপরেখা তুলে ধরেন। বৈঠকে উভয়পক্ষ অবকাঠামো, বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতের আলোচনাকে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পে রূপান্তরের অভিন্ন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চীন সফরের সময় আমরা যে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছি তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, উদ্যোগের গতি যেন হারিয়ে না যায়।’

চীনা রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টার মনোভাবের প্রতিধ্বনি করে বলেন, ‘এটিও আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। চীনে আমাদের অন্যতম সর্বোচ্চ পর্যায়ের অ্যাজেন্ডা বৈঠক হয়েছে এবং আমরা চুক্তি সইয়ের জন্য আরও দুই থেকে তিন বছর অপেক্ষা করতে চাই না, আমরা তাদের দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাই।’

এর মধ্যে অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল মোংলা ও আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘প্রস্তুতি চলছে এবং সম্পন্ন হলে জোনগুলো বাস্তবায়ন শুরু করার জন্য ডেভেলপারদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

উভয়পক্ষ চীন থেকে চারটি নতুন জাহাজ কেনার পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করেছে, চীনা পক্ষ আশ্বাস দিয়েছে এই বছরের জুনের মধ্যে প্রক্রিয়াটি শেষ হবে।

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন এবং নতুন বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণে বিনিয়োগকারীদের ১০০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে আসবেন বলেও চীনা রাষ্ট্রদূত নিশ্চিত করেন।

এ সময় বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বলেন, ‘আমরা খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদার করতে চীনা বিনিয়োগকারীদের ওপর দৃষ্টি স্থির করে একটি ছোট বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করবো।’

আলোচনায় স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। চীন সফরের সময় প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে চীন। তারা চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে চলমান সহায়তার কথাও তুলে ধরেন।

চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, কুনমিং-চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে অগ্রগতি হচ্ছে এবং বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চিকিৎসা ভিসা ত্বরান্বিত করার চেষ্টা চলছে।

প্রধান উপদেষ্টা সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে তরুণদের চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। উভয়পক্ষ তিস্তা নদীর কাজসহ পানি ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি ৫০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।

প্রধান উপদেষ্টা চীনে পাট রপ্তানি সম্প্রসারণের সম্ভাবনা উত্থাপন করেন এবং লোকোমোটিভ খাতে আরও বেশি চীনা বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে লোকোমোটিভ উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব করেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিউর রহমান, বিডার চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ বিন হারুন, বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়ব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, এসডিজি সমন্বায়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন ড.ইউনুস

আপডেট সময় : ১২:২৩:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

চীন সফরের ফলাফল নিয়ে জনমনে রাজ্যের কোতুহল থাকছেই। পাশবর্তী ভারত ড.ইউনুসের চীন সফরকে মোটেও ভালো চোখে দেখিনি। দেশ থেকে ইউনুস পতন প্রত্যাশা তাদের প্রতিনিয়ত। রাজনৈতিক দলগুলোর মতো ইউনুস সরকারকে পরিচালিত করতে পারছেন না তারা,এমন আওয়াজ দেশজুড়ে। সম্প্রতি ড.ইউনুসের চীন সফর তাদের আরও ভাবিয়ে তুলেছে।

ড.ইউনুস চীন সফরে বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়ে আসেন। চীন সফরের পর্যালোচনা এবং বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার পরবর্তী পদক্ষেপের রূপরেখা তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার (২০ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি পরবর্তী পদক্ষেপের রূপরেখা তুলে ধরেন। বৈঠকে উভয়পক্ষ অবকাঠামো, বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতের আলোচনাকে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পে রূপান্তরের অভিন্ন প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চীন সফরের সময় আমরা যে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছি তা নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, উদ্যোগের গতি যেন হারিয়ে না যায়।’

চীনা রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টার মনোভাবের প্রতিধ্বনি করে বলেন, ‘এটিও আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। চীনে আমাদের অন্যতম সর্বোচ্চ পর্যায়ের অ্যাজেন্ডা বৈঠক হয়েছে এবং আমরা চুক্তি সইয়ের জন্য আরও দুই থেকে তিন বছর অপেক্ষা করতে চাই না, আমরা তাদের দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাই।’

এর মধ্যে অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল মোংলা ও আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ‘প্রস্তুতি চলছে এবং সম্পন্ন হলে জোনগুলো বাস্তবায়ন শুরু করার জন্য ডেভেলপারদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

উভয়পক্ষ চীন থেকে চারটি নতুন জাহাজ কেনার পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করেছে, চীনা পক্ষ আশ্বাস দিয়েছে এই বছরের জুনের মধ্যে প্রক্রিয়াটি শেষ হবে।

চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন এবং নতুন বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণে বিনিয়োগকারীদের ১০০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে আসবেন বলেও চীনা রাষ্ট্রদূত নিশ্চিত করেন।

এ সময় বিডা চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বলেন, ‘আমরা খাতভিত্তিক সহযোগিতা জোরদার করতে চীনা বিনিয়োগকারীদের ওপর দৃষ্টি স্থির করে একটি ছোট বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করবো।’

আলোচনায় স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। চীন সফরের সময় প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল নির্মাণে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে চীন। তারা চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে চলমান সহায়তার কথাও তুলে ধরেন।

চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, কুনমিং-চট্টগ্রাম সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে অগ্রগতি হচ্ছে এবং বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চিকিৎসা ভিসা ত্বরান্বিত করার চেষ্টা চলছে।

প্রধান উপদেষ্টা সাংস্কৃতিক বিনিময়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে তরুণদের চীনা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। উভয়পক্ষ তিস্তা নদীর কাজসহ পানি ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি ৫০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।

প্রধান উপদেষ্টা চীনে পাট রপ্তানি সম্প্রসারণের সম্ভাবনা উত্থাপন করেন এবং লোকোমোটিভ খাতে আরও বেশি চীনা বিনিয়োগের আহ্বান জানান। তিনি চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে লোকোমোটিভ উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব করেন।

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিউর রহমান, বিডার চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ বিন হারুন, বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়ব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, এসডিজি সমন্বায়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।