
- আপডেট সময় : ১০:১৫:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১০৯ বার পড়া হয়েছে
এক বছরে কর্মক্ষেত্রে প্রাণ গেলো ৯০৫ শ্রমিকের, সবচে বেশি পরিবহনে
বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছর কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের মৃত্যুর হার কিছুটা কমেছে। এরপরও ৯০৫ জনের প্রাণ গেছে কর্মক্ষেত্রে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন পরিবহন খাতের শ্রমিকরা। শুধু এই খাতেই ৫২২ জন এক বছরে প্রাণ হারিয়েছেন।
গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ফাউন্ডেশন (ওশি) ‘কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২৪ প্রকাশ’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য দেন ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ড. এস এম মোর্শেদ।
এ সময় বিভিন্ন সেক্টরে নিহত ও আহতের হার গত বছরের (২০২৩) তুলনায় যথাক্রমে ৩৬.৮ এবং ৫৬.৬ শতাংশ কমেছে বলেও তথ্য দেওয়া হয়।
ওশি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের মাঠ পর্যায়ে সংগ্রহ করা তথ্য ও ১৫টি দৈনিক সংবাদপত্রের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
ড. এস এম মোর্শেদ জানান, চলতি বছরে অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের কারণে বিভিন্ন সেক্টরে নিহত হয়েছেন ৯০৫ জন শ্রমিক। আহত হয়েছেন ২১৮ জন শ্রমিক। আর বিগত ২০২৩ সালে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ৪৩২ জন এবং আহত হয়েছিলেন ৫০২ জন। ফলে গত বছরের তুলনায় শ্রমিক নিহতের সংখ্যা কমেছে ৫২৭ জন বা ৩৬.৮ শতাংশ এবং আহতের সংখ্যা কমেছে ২৮৪ জন বা ৫৬.৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে কর্মক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ১১৩ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ৭৫ জন। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ৭৯২ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ১৪৩ জন।
এদিকে প্রতিবেদনের সেক্টরভিত্তিক তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ ৫২২ জন শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন ও আহত হয়েছেন ৫২ জন। দিনমজুর নিহতের সংখ্যা ১৪৮ জন ও আহতের সংখ্যা ৭২ জন। নির্মাণ খাতে নিহত ৬২ জন ও আহত ৫ জন, কৃষিতে নিহত ৬১ জন ও আহত ১ জন, মৎস্য খাতে নিহত ২৫ জন ও আহত ১০ জন, পোশাক শিল্পে নিহত ৫ জন ও আহত ২৯ জন, বিভিন্ন সেবা খাতে নিহত ২৪ জন ও আহত ১ জন, জাহাজ ভাঙা খাতে (শিপ ব্রেকিং) নিহত ১১ জন ও আহত ৬ জন, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নিহত ৬ জন ও আহত ৩ জন, নিরাপত্তায় নিহত ৫ জন ও আহত ২ জন, গৃহস্থালির কাজে নিহত ৫ জন ও আহত ১ জন, চা শ্রমিক নিহত ৩ জন এবং অন্যান্য খাতে শ্রমিক ২৮ জন নিহত ও ৩৬ জন আহত হয়েছে।
ওশির প্রতিবেদনে কর্মস্থলে হতাহতের উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, ভবন বা স্থাপনা থকে পড়ে যাওয়া, বজ্রপাত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, গৃহ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, দেওয়াল-ভবন-ছাদ ধ্বস, বন্যপ্রাণীর আক্রমণ ও ভূমিধ্বসের কথা বলা হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য ১০ সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ১. শ্রম আইন ও বিধিমালার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা। ২. শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি সমন্বয়ে সেফটি কমিটি গঠন। ৩. কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিককে ৫ লাখ টাকা সহায়তা প্রদান। ৪. সব সেক্টরে ‘সেফটি অডিট’ চালু করা, সরকারিভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্যের সঠিক ডাটাবেজ তৈরি। ৫. সর্বজনীন পেনশন স্কিমে দুর্ঘটনায় নিহত/আহত শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্তি। ৬. শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে আধুনিকায়ন। ৭. কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (পিপিই) ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। ৮. পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিমালা সম্পর্কে শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের অবহিতকরণ। ৯. পেশাগত ব্যাধি নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল চালু করা। ১০. অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবার ও আহত শ্রমিককে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনাধীন ‘বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল’ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।