ঢাকা ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

হুমকি-ধামকি, মিডিয়ার চাপ ঠেকাতে পারেনি মামদানির বিজয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:৫৩:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৮১ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইতিহাস তৈরি করে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর তার জয়ের পথে সবচেয়ে বেশি বাধা সৃষ্টিকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তিনি।

বিজয়ের পর তিনি বলেন, “আজ নিউইয়র্ক সিটি দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে হয়। কেউ যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে চান, তিনি এই শহরকে দেখতে পারেন।”

তবে মামদানিকে ঠেকাতে হুমকি-দামকিও মিডিয়া চাপ প্রয়োগ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শত বাধা তৈরি করেও নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির বিজয় ঠেকাতে পারেনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।  এমনকি, মামদানির জয় ঠেকাতে নিজের দলের প্রার্থীর পরিবর্তে বিরোধী শিবিরের বিদ্রোহী প্রার্থীকেও সমর্থন দিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু শেষপর্যন্ত কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। জনতার রায়ে শেষ হাসি হেসেছেন মামদানিই। নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হয়ে ইতিহাস গড়েছেন ৩৪ বছর বয়সী এ নেতা।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক মামদানির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের চালানো প্রচারণা ও কৌশলগুলো:

১. শব্দবাণ
ট্রাম্প মামদানিকে বিভিন্ন সময়ে ‘কমিউনিস্ট’, ‘সাম্প্রদায়িক’, ‘পাগল’ বলে সম্বোধন করেছেন। এমনকি তার অভিবাসী পরিবারের সংযোগ এবং নাগরিকত্ব নিয়েও কটাক্ষ করেছেন।
ভোটারদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, আপনি যদি একজন কমিউনিস্টকে নিউইয়র্ক পরিচালনা করতে দেন, তাহলে আপনি আপনার অর্থ নষ্ট করছেন।

২. কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধের হুমকি
ট্রাম্প বলেছিলেন, নির্বাচনে মামদানি জয়ী হলে নিউইয়র্ক সিটির জন্য ফেডারেল সরকারের বরাদ্দ অর্থ কমানো অথবা আটকে দেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, আমি এই (মামদানি) পাগল কমিউনিস্টকে নিউইয়র্ক ধ্বংস করতে দেবো না।

৩. ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ
ট্রাম্প মামদানির সমর্থকাদের ‘মূর্খ’ বলে অপমান করেছিলেন। বিশেষ করে, মামদানির ইসরায়েল-সমালোচনা এবং ফিলিস্তিনি অধিকার সমর্থনের কারণে তাকে ‘প্রমাণিত ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে দাবি করেছিলেন।

৪. বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ছিলেন কার্টিস সিলওয়া। কিন্তু তার অবস্থান নড়বড়ে বুঝতে পেরে ট্রাম্প একপর্যায়ে মামদানির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে সমর্থন জানান। যদিও নিউইয়র্কের সাবেক এই গভর্নর একজন ডেমোক্র্যাট নেতা, তবু তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

৫. গ্রেফতারের হুমকি
মামদানি বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি এমন নীতি গ্রহণ করবেন, যা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্তৃপক্ষের অভিবাসীবিরোধী অভিযান ও স্থানীয় সহযোগিতা কমাবে। এর জবাবে ট্রাম্প হুমকি দেন, ‘তাহলে তো তাকে (মামদানি) গ্রেফতার করতে হবে।’

৬. মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচারণা
নির্বাচনীয় প্রচারণার শুরু থেকেই ট্রাম্পপন্থি মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জোহরান মামদানিকে নিয়ে কটাক্ষপূর্ণ প্রচার চালিয়েছে। তারা তাকে ‘চরম বামপন্থি’, ‘কমিউনিস্টপন্থি’ ও ‘আমেরিকা-বিরোধী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

কিছু গণমাধ্যম দাবি করেছে, মামদানি নির্বাচিত হলে নিউইয়র্ক ‘অরাজকতা ও অপরাধের শহর’ হয়ে উঠবে। তার অভিবাসন ও সামাজিক ন্যায্যতার নীতিকে এসব মাধ্যম ‘আইনবিরোধী’ ও ‘দেশবিরোধী’ বলে উপস্থাপন করেছে।

ট্রাম্প শিবিরের এসব হুমকি-ধামকি ও নেতিবাচক প্রচারণা মামদানির নির্বাচনী জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি। নির্বাচনে প্রায় ২০ লাখের বেশি ভোটার অংশগ্রহণ করেছে, যা গত ছয় দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এটিকে ট্রাম্পের হুমকির প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ৯১ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে, মামদানি পেয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুয়োমো পেয়েছেন প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার ভোট। আর রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস সিলওয়া পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ১৩৭ ভোট।
অর্থাৎ, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে প্রায় দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন মামদানি।

সর্বশেষ হিসাবে, মামদানির প্রাপ্ত ভোট ১০ লাখ ৩৬ হাজার ৫১টি, যা ১৯৬৫ সালের পর কোনো নিউইয়র্ক মেয়র প্রার্থী পাওয়া সর্বোচ্চ ভোট।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

হুমকি-ধামকি, মিডিয়ার চাপ ঠেকাতে পারেনি মামদানির বিজয়

আপডেট সময় : ০৯:৫৩:৪১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫

ইতিহাস তৈরি করে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর তার জয়ের পথে সবচেয়ে বেশি বাধা সৃষ্টিকারী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তিনি।

বিজয়ের পর তিনি বলেন, “আজ নিউইয়র্ক সিটি দেখিয়ে দিয়েছে, কীভাবে জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে হয়। কেউ যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করতে চান, তিনি এই শহরকে দেখতে পারেন।”

তবে মামদানিকে ঠেকাতে হুমকি-দামকিও মিডিয়া চাপ প্রয়োগ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শত বাধা তৈরি করেও নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির বিজয় ঠেকাতে পারেনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।  এমনকি, মামদানির জয় ঠেকাতে নিজের দলের প্রার্থীর পরিবর্তে বিরোধী শিবিরের বিদ্রোহী প্রার্থীকেও সমর্থন দিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু শেষপর্যন্ত কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। জনতার রায়ে শেষ হাসি হেসেছেন মামদানিই। নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র হয়ে ইতিহাস গড়েছেন ৩৪ বছর বয়সী এ নেতা।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক মামদানির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের চালানো প্রচারণা ও কৌশলগুলো:

১. শব্দবাণ
ট্রাম্প মামদানিকে বিভিন্ন সময়ে ‘কমিউনিস্ট’, ‘সাম্প্রদায়িক’, ‘পাগল’ বলে সম্বোধন করেছেন। এমনকি তার অভিবাসী পরিবারের সংযোগ এবং নাগরিকত্ব নিয়েও কটাক্ষ করেছেন।
ভোটারদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেছিলেন, আপনি যদি একজন কমিউনিস্টকে নিউইয়র্ক পরিচালনা করতে দেন, তাহলে আপনি আপনার অর্থ নষ্ট করছেন।

২. কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধের হুমকি
ট্রাম্প বলেছিলেন, নির্বাচনে মামদানি জয়ী হলে নিউইয়র্ক সিটির জন্য ফেডারেল সরকারের বরাদ্দ অর্থ কমানো অথবা আটকে দেওয়া হতে পারে। তিনি বলেন, আমি এই (মামদানি) পাগল কমিউনিস্টকে নিউইয়র্ক ধ্বংস করতে দেবো না।

৩. ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ
ট্রাম্প মামদানির সমর্থকাদের ‘মূর্খ’ বলে অপমান করেছিলেন। বিশেষ করে, মামদানির ইসরায়েল-সমালোচনা এবং ফিলিস্তিনি অধিকার সমর্থনের কারণে তাকে ‘প্রমাণিত ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে দাবি করেছিলেন।

৪. বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ছিলেন কার্টিস সিলওয়া। কিন্তু তার অবস্থান নড়বড়ে বুঝতে পেরে ট্রাম্প একপর্যায়ে মামদানির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে সমর্থন জানান। যদিও নিউইয়র্কের সাবেক এই গভর্নর একজন ডেমোক্র্যাট নেতা, তবু তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

৫. গ্রেফতারের হুমকি
মামদানি বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি এমন নীতি গ্রহণ করবেন, যা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্তৃপক্ষের অভিবাসীবিরোধী অভিযান ও স্থানীয় সহযোগিতা কমাবে। এর জবাবে ট্রাম্প হুমকি দেন, ‘তাহলে তো তাকে (মামদানি) গ্রেফতার করতে হবে।’

৬. মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচারণা
নির্বাচনীয় প্রচারণার শুরু থেকেই ট্রাম্পপন্থি মার্কিন গণমাধ্যমগুলো জোহরান মামদানিকে নিয়ে কটাক্ষপূর্ণ প্রচার চালিয়েছে। তারা তাকে ‘চরম বামপন্থি’, ‘কমিউনিস্টপন্থি’ ও ‘আমেরিকা-বিরোধী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

কিছু গণমাধ্যম দাবি করেছে, মামদানি নির্বাচিত হলে নিউইয়র্ক ‘অরাজকতা ও অপরাধের শহর’ হয়ে উঠবে। তার অভিবাসন ও সামাজিক ন্যায্যতার নীতিকে এসব মাধ্যম ‘আইনবিরোধী’ ও ‘দেশবিরোধী’ বলে উপস্থাপন করেছে।

ট্রাম্প শিবিরের এসব হুমকি-ধামকি ও নেতিবাচক প্রচারণা মামদানির নির্বাচনী জয়ের পথে বাধা হতে পারেনি। নির্বাচনে প্রায় ২০ লাখের বেশি ভোটার অংশগ্রহণ করেছে, যা গত ছয় দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এটিকে ট্রাম্পের হুমকির প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ৯১ শতাংশ ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে, মামদানি পেয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুয়োমো পেয়েছেন প্রায় ৮ লাখ ৫০ হাজার ভোট। আর রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস সিলওয়া পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ১৩৭ ভোট।
অর্থাৎ, নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে প্রায় দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন মামদানি।

সর্বশেষ হিসাবে, মামদানির প্রাপ্ত ভোট ১০ লাখ ৩৬ হাজার ৫১টি, যা ১৯৬৫ সালের পর কোনো নিউইয়র্ক মেয়র প্রার্থী পাওয়া সর্বোচ্চ ভোট।