বিসিবি নির্বাচনে সেই অদৃশ্যচাপ, ক্লাব সংগঠকদের বয়কটের হুঙ্কার, ১৫ ক্লাবের বৈধতা নিয়ে আদালতে মামলা
- আপডেট সময় : ১১:২৪:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৬৭ বার পড়া হয়েছে
গত পনের বছর ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে ছিলো অদৃশ্য থাবা তথা সরকারি চাপ। কথিত আছে, তৎকালীণ সরকারের আশির্বাদ পুষ্টরাই তখন অলংকার হিসেবে বিসিবি’র পরিচালক হতে পারতেন। গঠনতন্ত্রের বৈধতাকে পাস কাটিয়ে বিসিবি নির্বাচনে নানা সংস্কারের নামে দেখানো হয়েছিলো বৃদ্ধাঙ্গুলি। প্রকৃত সংগঠকদের বাদ দিয়ে পছন্দর লোকদের ভিড়ানো হয়েছিলো বিসিবিতে। সাধারণ ক্রীড়ানুরাগীদের প্রত্যাশা ছিলো জুলাই-আগস্টে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে এমন অনিয়ম আর দেখা যাবে না।
সামনে আসছে আবারো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন। তফসিল ঘোষনা অনুযায়ী আগামী ৬ অক্টোবর হতে যাচ্ছে বিসিবি’র ভোট। নির্বাচনের সব কিছুই এখন শেষ পর্যায়ে। তফসিল ঘোষনা করার পর মনোয়ন ফরম বিক্রি এবং বৈধতা-অবৈধতা প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করা হয়েছে। ষাটটি মনোনয়ন বিক্রি হয়। তাতে মোট জমা পড়েছিলো ৫১টি। তিনটি ক্যাটাগরির মধ্যে ক্যাটাগরি-০১ জেলা ও বিভাগীয় সংস্থায়- ২৮টি মনোয়ন বিক্রি হয়,জমা পড়ে ১৮টি। এই ক্যাটাগরিতে চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিতও হয়ে যান যথাক্রমে খুলানা, বরিশাল ও সিলেটের প্রতিনিধি। ক্যাটাগরি-০২ এ ৩২টি মনোনয়ন বিক্রি হয়। জমা পড়ে ৩০টি। ক্যাটাগরি-০৩ এ তিনটি জমা মনোনয়ন জমা পড়েছে।
কিন্তু যতই নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে ততই নাটকীয়তায় মোড় নিচ্ছেন । আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বিসিবি নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়েও। সর্বশেষ ১৫টি ক্লাবের কাউন্সিলর শীপের বৈধতা নিয়ে ঘোল-মাল বেধেছে। এছাড়া বিসিবি নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলে ১০-১২টি ক্লাবও নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে আওয়াজ উঠেছে।
যদিও জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর তালিকা থেকে বাদ পড়া দুইজন কাউন্সিল আপিলের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার নিজেদের কাউন্সিলর পদ ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে আদৌ কি বিসিবি’র নির্বাচন হবে?
এখানে সরকার এবং ক্লাব সংগঠকরা মুখোমুখি অবস্থানে। সরকার চাচ্ছে একরকম কিন্তু ক্লাব সংগঠকরা তা মেনে নিতে পারছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সংগঠক পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছেন, আমরা সারাটা জীবন ক্রিকেট উন্নয়নে স্থানীয় পর্যায়ে কিংবা ক্লাব পর্যায়ে কাজ করে চলেছি। সেখানে অপরিচিত মুখ যিনি কিংবা যারা কিনা ক্রিকেটের ১২টিক্লাব কিংবা জাতীয় দলের বারোজন খেলোয়াড়ের নামই বলতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে, তাদের অবৈধভাবে অর্ন্তভূক্ত করাটা আমরা মেনে নিতে পারি না।
তিনি আরও জানান, সবার প্রত্যাশা ছিলো অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বিসিবি’তে গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচন হবে। কিন্তু আমরা পরিস্কার দেখতে পাচ্ছি সরকারের উচ্চ পর্যায়ো চাপ রয়েছে। সরকার তার পছন্দের লোকদের প্রার্থী করে বিসিবিতে আনতে মরিয়া। এমন যদি হয়ে থাকে তাহলে ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে এই সরকারের আচরণের প্রার্থক্যটা কোথায়? অর্থাৎ ‘যাহা ষোল তাহাই সতের’। পরিবর্তিত বাংলাদেশের শাসকদের মধ্যেও লক্ষণীয় সেই আগের মতোই অনিয়মের উপর ভর করে চলার অভ্যাস।
সরকার চাইছে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বিসিবি’র সভাপতি করতে। যদিও সেই পথ অনেকটাই পরিস্কার। সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা ঢাকার বাহিরের বারো কাউন্সিলরের সবটাই পড়বে বুলবুলের বাক্সে। এরপর খালেদ মাসুদ পাইলটের ভোটটা পড়লে তেরটি হয়ে যায়। সুতরাং ২৫ ভোটের সর্বাধিক ভোট যে বুলবুল পাচ্ছেন সেটা অনেকটা নিশ্চিত। কিন্তু তার আগে নির্বাচন করে বুলবুলকে আসতে হচ্ছে বিসিবিতে।
তবে এর বাহিরেও আরো কিছু অপরিচিত মুখকে ক্রিকেট বোর্ডে পরিচালক হিসেবে সরকারের উচ্চ পর্যায়র চাপে মাথানত করছেন না ক্লাব সংগঠকরা। বিসিবি’র নির্বাচনে আপাতত বাধাটা সেখানেই।
বিসিবি নির্বাচন প্রতিবন্ধকতায় দুটি বিষয় এখানে পরিস্কার। নাজমুল হাসান পাপনের সময় তৃতীয়বিভাগ বাছাই ক্রিকে লিগ না খেলেই অবৈধভাবে ১৫টি ক্লাবকে কাউন্সিলর পদ দেয়া হয়েছিলো। যা নিয়ে বর্তমান সময়ে দুদকও তদন্ত শেষে দোষী সাব্যস্ত করে একটি রিপোর্টও প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের কাছে আপিলের ভিত্তিতে তা ফিরায়ে দেয়া হলেও এই রায়ের বিরুদ্ধে মামলা টুকে দিয়েছেন সাবেক বোর্ড প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ।
অন্যদিকে ১২টি ক্লাবের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সমঝোতার চেষ্টাও বিফলে যায়। সব মিলে বিসিবি নির্বাচন এখন নতুন নাটকীয়তা মোড় নিতে শুরু করেছে। পেন্ডুলামের মতো দুলছে বিসিবি’র নির্বাচন। বিসিবি’র নির্বাচনের সিদ্ধান্ত এখন আদালতের কাঠগড়ায়।




















