মানবিক,গনতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র শপথের দিন আজ, রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা

- আপডেট সময় : ০৩:৫০:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
- / ৮৬ বার পড়া হয়েছে
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাত ৮টা ২০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি নিউজ ও বাংলাদেশ বেতার ভাষণটি একযোগে সম্প্রচার করবে।প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র জানিয়েছে, ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের কর্মকাণ্ড, জুলাই গণহত্যার বিচারের অগ্রগতি এবং চলমান সংস্কার কার্যক্রমের সারসংক্ষেপ তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের কোন মাসে অনুষ্ঠিত হবে—তা নির্দিষ্ট করে ঘোষণা করতে পারেন তিনি।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসকে শুধু অতীত স্মরণের দিন হিসেবে না দেখে সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথের দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন ।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা কোনো ধরনের নিপীড়নের কাছে মাথা নোয়াব না, আমরা প্রতিষ্ঠা করব একটি জবাবদিহিমূলক, মানবিক, গণতান্ত্রিক এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র। এমন রাষ্ট্র—যা সবসময় জনকল্যাণে কাজ করবে।’
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে দেশজুড়ে জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে সম্প্রচারিত এক ভিডিওবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। তিনি গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মত্যাগকে জাতির পথচলার প্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাদের স্বপ্নই হবে আগামী বাংলাদেশের নির্মাণরেখা।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘৫ আগস্ট শুধু একটি বিশেষ দিবস নয়, এটি একটি প্রতিজ্ঞা, গণজাগরণের উপাখ্যান এবং ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে জাতির পুনর্জন্মের দিন।’
তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করে বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরেও মানুষ তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে গত দেড় যুগের শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, এই সময়ে প্রতিটি খাতে মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করে একটি সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি করা হয়েছিল। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনীতি, এমনকি বিচারব্যবস্থা ও গণমাধ্যমেও এই সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরি হয়, যারা আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করত। তিনি বলেন, ‘গত ১৬ বছরে যারাই সরকারের সমালোচনা করেছে, নাগরিকদের অধিকারের পক্ষে কথা বলেছে, তাদের গ্রেপ্তার অথবা গুম করা হয়েছে।’
২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-আন্দোলনকে ষোল বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দেশের ছাত্রসমাজ, তরুণ প্রজন্ম, সাধারণ মানুষ—সবাই একত্রিত হয় এক নতুন দিনের প্রত্যাশায়। সমস্বরে তারা বলে ওঠে, এবার ফ্যাসিবাদকে যেতে হবে।’
তৎকালীন সরকারের দমন-পীড়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা নির্বিচারে গুলি করেছে, গ্রেপ্তার করেছে, ইন্টারনেট বন্ধ করে হত্যাকাণ্ডের তথ্য লুকাতে চেয়েছে। এমনকি গুলিবিদ্ধ আহতদের হাসপাতালেও চিকিৎসা নিতে দেয়নি। হাসপাতালগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যেন আহতদের ভর্তি না করা হয়। এ কারণে বহু মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে চিরতরে দৃষ্টি হারিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাইয়ে যারা আহত হয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন, দৃষ্টি হারিয়েছেন জাতির পক্ষ থেকে আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এ জাতির আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।’
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের কল্যাণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এখন পর্যন্ত ৮৩৬টি শহীদ পরিবারের মধ্যে ৭৭৫টি পরিবারকে ৯৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও মাসিক ভাতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, আহত ১৩ হাজার ৮০০ জন জুলাই যোদ্ধাকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ১৫৩ কোটি ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, গুরুতর আহত ৭৮ জনকে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, তুরস্ক এবং রাশিয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং এতে সরকারের ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
বক্তব্যের শেষে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘জুলাইয়ের মহানায়কদের আত্মত্যাগ তখনই সার্থক হবে, যখন এই দেশকে আমরা একটি সত্যিকারের জনকল্যাণকর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।’