মিয়ানমারের কাচিন অঞ্চলে ব্যাপক মজুত ‘দুর্লভ’ খনিজ, নিয়ন্ত্রন চায় যুক্তরাষ্ট্র

- আপডেট সময় : ০৯:২৯:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
- / ৫২ বার পড়া হয়েছে
এখনো অনেক খনিজজাত দ্রব্য রয়েছে যা কিনা চীনের উপর নির্ভর থাকতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। সে নির্ভরতা কাটাতে মিয়ানমারের দিকে চোখ পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। কারণ মিয়ানমারের কাচিন অঞ্চলে ব্যাপক মজুত রয়েছে সেই দূর্লভ খনিজ পদার্থ। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন মিয়ানমারের রেয়ার আর্থ বা দুর্লভ খনিজ সম্পদ নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছে। এসব খনিজ চীনের উপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরতা কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে ট্রাম্প প্রশাসন।
সূত্র বলছে, হোয়াইট হাউজ এখন এমন কিছু প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে, যা বাস্তবায়ন হলে দীর্ঘদিনের যুক্তরাষ্ট্র-মিয়ানমার নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।
সূত্র জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে এখন দুটি ধরনের মত উঠে এসেছে। একটি পক্ষ বলছে, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের (জান্তা) সঙ্গে কথা বলে কাচিন বিদ্রোহীদের (কেআইএ) সঙ্গে শান্তিচুক্তি করিয়ে খনিজ উত্তোলনের পথ খুলে দিতে হবে। অন্যপক্ষ চাইছে জান্তার সঙ্গে কথা না বলে সরাসরি কাচিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করুক।
কাচিন অঞ্চলেই মিয়ানমারের সবচেয়ে বেশি ‘দুর্লভ’ খনিজের মজুত রয়েছে। এই খনিজ দিয়ে যুদ্ধবিমান ও উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র তৈরি হয়। চীন এই খনিজ ব্যবহার করে বৈশ্বিক বাজারে বড় অংশ দখল করে রেখেছে।
জানা গেছে, চলতি মাসেই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের অফিসে আয়োজিত এক বৈঠকে মিয়ানমারের খনিজ পদার্থ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে মিয়ানমারে ব্যবসা ও নিরাপত্তা খাতে কাজ করা কয়েকজন ব্যক্তি অংশ নেন। তারা পরামর্শ দেন, যুক্তরাষ্ট্র চাইলে মধ্যস্থতা করে মিয়ানমারে একটি আঞ্চলিক শান্তিচুক্তি করাতে পারে, যেটা খনিজ উত্তোলনের পথ খুলে দেবে।
তবে এখনো এসব বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। হোয়াইট হাউজ আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। মার্কিন কর্মকর্তারা শুধু বলেছেন, মিয়ানমার নিয়ে নীতিগত পর্যালোচনা চলছে এবং এখনই জান্তার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে না।
বিশ্লেষকদের মতে, খনিজ পাওয়ার লোভে যুক্তরাষ্ট্র যদি জান্তার সঙ্গে কাজ করতে চায়, তাহলে তা নৈতিক দিক থেকে বিতর্কিত হয়ে উঠতে পারে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে দুর্লভ খনিজ প্রক্রিয়াকরণের ৯০ শতাংশই হয় চীনে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র নিজের প্রয়োজনীয় খনিজের অনেকটাই আমদানি করে। এ কারণে ট্রাম্প প্রশাসন চায়, চীনের পরিবর্তে অন্য উৎস থেকে এই খনিজ পাওয়ার পথ খুঁজে বের করতে। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমার হতে পারে এর একটি বড় উৎস।
তবে মিয়ানমারের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এক্ষেত্রে প্রাথমিক বাধা। রোহিঙ্গা নিপীড়নের কারণে জান্তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কোনো সরাসরি সম্পর্ক রাখেনি।
তবে গত সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সেনা শাসক মিন অং হ্লাইংয়ের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তি ও সামরিক প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে বলে খবর পাওয়া যায়। জানা গেছে, এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যহারের আগে ট্রাম্পের প্রশংসায় একটি চিঠি লেখেন মিয়ানমারের জান্তা সরকারপ্রধান মিন অং হ্লাইং। তবে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ট্রেজারি বিভাগ এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো কারণ উল্লেখ করেনি এবং হোয়াইট হাউস থেকেও এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এএফপি বলছে, দুই সপ্তাহ আগে মিন অং হ্লাইং ট্রাম্পকে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে তিনি ট্রাম্পের শাসনামলের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি মিয়ানমারের সংঘাত নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমগুলো বন্ধ করার জন্যও ট্রাম্পের প্রশংসা করেন মিন।
মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার একটি নোটিশ প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, জান্তা ঘনিষ্ঠ কেটি সার্ভিসেস অ্যান্ড লজিস্টিকস, মিয়ানমার কেমিক্যাল অ্যান্ড মেশিনারি কোম্পানি এবং সানট্যাক টেকনোলজিস- এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনাকারী ব্যক্তিদের নামও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।