ঢাকা ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজানের পানিতে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা, কুমিল্লা,বরিশাল-ভোলা এলাকা প্লাবিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৬:৪৫:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
  • / ৪৫ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজানের পানিতে ফেনী জেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল আবারও ডুবে গেছে। ফেনীর মোহুরি নদী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্রমাগত বাড়ছে পানি।  সেখানে জনজীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। গত বছরের ন্যায় আবারো সর্বস্ব হারিয়ে বসেছেন ফেনী অঞ্চলের মানুষ।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে ও জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। বুধবার (০৯ জুলাই) বাপাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হানের দেওয়া নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।

ভারি বৃষ্টিপাতে কুমিল্লা জেলা শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় ১২৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সিটি করপোরেশনে সমনের সড়ক, বিসিক শিল্পনগরী এলাকা, জেলা স্কুল সড়ক, ঈদগাহ এলাকা, ছাতিপট্টি, দক্ষিণ চর্থা, কান্দিরপাড়-রাণীর বাজার সড়ক, ঠাকুরপাড়া, ছায়া বিতান ও শুভপুরসহ নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে নগরীতে বসবাসকারী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। জলমগ্ন সড়কে দুর্ভোগে পড়া নগরবাসী কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এছাড়াও ভারি বর্ষনে দেশের উপকুলীয় অঞ্চল চট্টগ্রাম, খুলনা,বরিশাল ও ভোলা অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ দূর্ভোগের পড়েছেন।  পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উপকূলীয় ও পূর্বাঞ্চলীয় চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অতি-ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ বিরাজমান রয়েছে এবং ওই অববাহিকায় আগামী ১ দিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

ভোলার মনপুরা উপজেলার প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া, তজুমদ্দিন ও দৌলতখানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ভোলা জেলা প্রশাসন।

ভোলায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ইন্সপেক্টর মো. জসিম উদ্দিন জানান, উপকূলীয় এলাকায় চলাচলকারী সব লঞ্চ, বিশেষ করে হাতিয়া, লক্ষ্মীপুর, দৌলতখান ও বেতুয়াসহ দশটি রুটের ১৩টি সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ভোলার জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান জানান, জেলার নিম্নাঞ্চল, বিশেষ করে বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন ও মনপুরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া ফেনীর মুহুরী এবং সিলোনিয়া নদীসমূহের পানি সমতল বিপৎসীমার ৩২ ও ৮১ সেন্টিমিটার (আপডেট সময়— সন্ধ্যা ৬টা) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে ও ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে হ্রাস পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি লাভ করতে পারে। এই অববাহিকায় আগামী ২৪ ঘণ্টা ভারী ও পরবর্তী ২ দিন মাঝারি থেকে মাঝারি-ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

সেইসঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় হালদা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং চট্টগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে হ্রাস পেতে পারে।

বাপাউবো জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, সাঙ্গু ও গোমতী নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ১ দিন গোমতী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। অপরদিকে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং পরবর্তী ২ দিন ওই সব নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া সিলেট বিভাগের মনু, ধলাই ও খোয়াই নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ২ দিন নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে।

সংস্থাটি আরও জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। আগামী ২ দিন পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী ৩ দিন পর্যন্ত পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে ও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা আগামী ৫ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে; এই সময়ে নদীসমূহ বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এছাড়া সুরমা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৩ দিন ওই নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। এই অববাহিকায় আগামী ৩ দিন মাঝারি থেকে মাঝারি-ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজানের পানিতে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা, কুমিল্লা,বরিশাল-ভোলা এলাকা প্লাবিত

আপডেট সময় : ০৬:৪৫:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি আর ভারতের উজানের পানিতে ফেনী জেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চল আবারও ডুবে গেছে। ফেনীর মোহুরি নদী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ক্রমাগত বাড়ছে পানি।  সেখানে জনজীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। গত বছরের ন্যায় আবারো সর্বস্ব হারিয়ে বসেছেন ফেনী অঞ্চলের মানুষ।

আগামী ২৪ ঘণ্টায় সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে ও জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। বুধবার (০৯ জুলাই) বাপাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হানের দেওয়া নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।

ভারি বৃষ্টিপাতে কুমিল্লা জেলা শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে বুধবার (৯ জুলাই) বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় ১২৯.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, সিটি করপোরেশনে সমনের সড়ক, বিসিক শিল্পনগরী এলাকা, জেলা স্কুল সড়ক, ঈদগাহ এলাকা, ছাতিপট্টি, দক্ষিণ চর্থা, কান্দিরপাড়-রাণীর বাজার সড়ক, ঠাকুরপাড়া, ছায়া বিতান ও শুভপুরসহ নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে নগরীতে বসবাসকারী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। জলমগ্ন সড়কে দুর্ভোগে পড়া নগরবাসী কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এছাড়াও ভারি বর্ষনে দেশের উপকুলীয় অঞ্চল চট্টগ্রাম, খুলনা,বরিশাল ও ভোলা অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ দূর্ভোগের পড়েছেন।  পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উপকূলীয় ও পূর্বাঞ্চলীয় চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অতি-ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপ বিরাজমান রয়েছে এবং ওই অববাহিকায় আগামী ১ দিন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

ভোলার মনপুরা উপজেলার প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া, তজুমদ্দিন ও দৌলতখানের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ভোলা জেলা প্রশাসন।

ভোলায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) ইন্সপেক্টর মো. জসিম উদ্দিন জানান, উপকূলীয় এলাকায় চলাচলকারী সব লঞ্চ, বিশেষ করে হাতিয়া, লক্ষ্মীপুর, দৌলতখান ও বেতুয়াসহ দশটি রুটের ১৩টি সি-ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে।

ভোলার জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান জানান, জেলার নিম্নাঞ্চল, বিশেষ করে বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন ও মনপুরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া ফেনীর মুহুরী এবং সিলোনিয়া নদীসমূহের পানি সমতল বিপৎসীমার ৩২ ও ৮১ সেন্টিমিটার (আপডেট সময়— সন্ধ্যা ৬টা) ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে ও ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে হ্রাস পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি লাভ করতে পারে। এই অববাহিকায় আগামী ২৪ ঘণ্টা ভারী ও পরবর্তী ২ দিন মাঝারি থেকে মাঝারি-ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

সেইসঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় হালদা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং চট্টগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে হ্রাস পেতে পারে।

বাপাউবো জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, সাঙ্গু ও গোমতী নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে মাতামুহুরী নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ১ দিন গোমতী নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। অপরদিকে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং পরবর্তী ২ দিন ওই সব নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া সিলেট বিভাগের মনু, ধলাই ও খোয়াই নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ২ দিন নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে।

সংস্থাটি আরও জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। আগামী ২ দিন পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং পরবর্তী ৩ দিন পর্যন্ত পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে ও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা আগামী ৫ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে; এই সময়ে নদীসমূহ বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এছাড়া সুরমা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৩ দিন ওই নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে। এই অববাহিকায় আগামী ৩ দিন মাঝারি থেকে মাঝারি-ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।