রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা ও সরকারের বক্তব্য

- আপডেট সময় : ০৭:৪১:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
- / ৪১ বার পড়া হয়েছে
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের দ্বায়িত্ব পালন করছে ড.ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। ইতিমধ্যে দ্বায়িত্বগ্রহনের প্রায় সাড়ে নয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে ফ্যাসিজম বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পরস্পর বিরোধী নানা বক্তব্য বিবৃত্তিতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে অন্তর্বর্তী সরকার সমর্থিত কিংস পাটি উদ্ভাবনের। যে দলটিকে সুবিধা দিতে গিয়ে নির্বাচনের রোড ম্যাপ,সংস্কারের রোড ম্যাপ তৈরীতে বিলম্ব করা হচ্ছে। পাশাপাশি কয়েকজন উপদেষ্টার বিতর্কিত বক্তব্যে ড.ইউনুস সরকারের ওপর সন্দেহের তীর বেধেছে রাজনৈতিক দলগুলোতে। এমন কি দেশে একটি ঘোলাটে পরিবেশ তৈরি হতে শুরু করে। দেশব্যাপী গুঞ্জন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড.ইউনুসও পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সকল বিষয় নিয়েই শনিবার রাতে রাজনৈতিক গুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড.ইউনুস। শনিবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠক করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে অন্তবর্তী সরকারের কাছে রাজনৈতিক গুলো নিজেদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। তবে সব কয়টি রাজনৈতিক দলই চায় ড.ইউনুসের অধীনেই আসন্ন জাতীয় সংসদের গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হোক। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় কোন দলের কি দাবি সেগুলো পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো…
বিএনপি’র বার্তা
বৈঠকে বিএনপি একটি লিখিত বার্তা দিয়েছে। যেখানে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে নির্বাচনকে। তারা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেখতে চায়। তাদের লিখিত বার্তায় অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-
ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখা। কোনো মহলকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অ্যাজেন্ডা যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ না হয় সেদিকে সচেতন থাকা। যে সকল উপদেষ্টার বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দেওয়া। অর্থাৎ জননিরাপত্তা উপদেষ্টা ও দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে বাদ দেয়া।
আদালতের রায় অনুযায়ী দ্রুত সরকার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মেয়র হিসাবে ইশরাক হোসেনকে শপথগ্রহণ করানোর ব্যবস্থা নেয়া। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
মানবিক করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে জাতীয় স্বার্থে রক্ষিত হচ্ছে কি না সেটা সর্বাগ্রে বিবেচনায় নেওয়া দরকার ছিল। এছাড়াও এমন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদি নীতি নির্ধারণী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের আছে বলে এদেশের জনগণ মনে করে না।
জামায়াতে ইসলাম
দুইটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। এক, নির্বাচনটা কখন হবে? সসরকার যে সময়সীমা দিয়েছে, এর ভিতরেই জনগণের কোনো বড় ধরনের ভোগান্তি না হয় তা বিচেনায় রেখে একটা কমফোর্টেবল টাইমে নির্বাচন আয়োজনের দাবি।
দুই, এই নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার এবং বিচারের কিছু দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনগণের সামনে আসতে হবে। সংস্কার শেষ না করে যদি কোনো নির্বাচন হয়, এই নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। আবার সব সংস্কার এখন করা সম্ভবও না। মাত্র ৫টা সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তারা হাত দিয়েছেন। এতটুকু নিষ্পত্তি করা দরকার সন্তোষজনকভাবে।
এনসিপি
জুলাই গণহত্যার বিচার, জুলাই সনদ প্রকাশ এবং গণপরিষদ ও আইনসভা নির্বাচন এই তিন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চাওয়া হয়। শেখ হাসিনার সময়ে হওয়া সব জাতীয় নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা’র দাবি জানানো হয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে না পারা।
আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানানো হয়। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের দাবি। সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা ছিল ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যেন ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়।
যারা অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ধীরগতিতে এগোচ্ছে। সঞ্চয়পত্র দেওয়ার কথা ছিল এখনও সব শহীদ পরিবার পায়নি, মাসিক ভাতা দেওয়ার কথা ছিল সেগুলো শুরু হয়নি। এগুলো বাস্তবায়নের দাবিও উপস্থাপন করেছে এনসিপি।
অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত
ইলেকশন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হবে। … এই জুন, ৩০ তারিখটা একটা সুনির্দিষ্ট ডেট। এর বাইরে যাবে না।
উপদেষ্টা পরিষদ
‘অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে। কিন্তু সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ড অর্পিত দায়িত্ব পালন করাকে অসম্ভব করে তুললে সরকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।’