নতুন শুল্কনীতিতে বাংলাদেশের কৃষি ও তৈরি পোষাক খাত ঝুঁকির মুখে পড়বে

- আপডেট সময় : ০৯:৫৮:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
- / ৪১ বার পড়া হয়েছে
নতুন আমদানি শুল্ক বিশ্ব্যব্যাপী বানিজ্যের গতিশীলতাকে নতুন মাত্রা এনে দিবে। এতে অনেক উন্নয়নশীল দেশের উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। বাড়তে পারে বানিজ্যের খরচ। এতে করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আংকটাড) প্রকাশিত ‘স্প্যারিং দ্য ভালনারেবল: দ্য কস্ট অব নিউ ট্যারিফ বার্ডেনস’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে এমন সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনীতি বলতে বোঝানো হয়েছে স্বল্পোন্নত দেশ, ছোট দ্বীপ, উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ও স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন আমদানি শুল্কের একটি ঢেউ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের গতিশীলতাকে নতুন আকার দেবে এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাণিজ্য খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেবে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা অর্থনীতি—বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) ও ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো যদিও বৈশ্বিক বাণিজ্যে অতি সামান্য অংশীদার, তবু তারাই এখন সবচেয়ে উচ্চমাত্রার শুল্ক বৃদ্ধির মুখে পড়েছে।
২০২৫ সালের জুলাই থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২২টি উন্নয়নশীল দেশের আমদানির ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশের ওপরে বাড়াতে যাচ্ছে। এর মধ্যে সাতটি স্বল্পোন্নত দেশও (এলডিসি) রয়েছে। অথচ এসব দেশের বৈশ্বিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণ অতি সামান্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ২ এপ্রিল সব ধরনের আমদানির ওপর ১০ শতাংশ হারে সর্বজনীন শুল্ক আরোপ করেছে। জুলাইয়ে দেশভিত্তিক অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হবে। এই পদক্ষেপের ফলে পূর্ববর্তী বাণিজ্য চুক্তি ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মনীতি কার্যত উপেক্ষিত হচ্ছে। ফলে এমন সব দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যারা এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা পেয়ে আসছিল।
তথ্যানুসারে, এপ্রিল মাসেই এলডিসি দেশগুলোর ওপর শুল্ক দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ থেকে ৩২ শতাংশ, যা জুলাইয়ে বেড়ে হতে পারে ৪৪ শতাংশ। সম্প্রতি, ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কয়েকটি কোম্পানির জন্য শুল্কের হার বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এটি ৩৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যদিও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের জন্য নতুন হার ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ওপর শুল্ক ৪০ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ শতাংশে। এশিয়া ও ওশেনিয়ার দেশগুলোর জন্য শুল্ক বেড়েছে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত, যা জুলাইয়ে হতে পারে ২৪ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের কৃষি ও তৈরি পোশাক খাত সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির মাত্র শূন্য দশমিক ৩ শতাংশের জন্য দায়ী হলেও, নতুন শুল্কনীতি এসব দেশের রপ্তানি ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে মার্কিন বাজারে প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়বে এবং রপ্তানি সম্ভাবনা কমবে—বিশেষ করে পোশাক ও কৃষিপণ্যের মতো খাতগুলোতে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, ট্যারিফ রিলিফ নীতিমালা ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাজারে প্রবেশে সহজ শর্ত নিশ্চিত করা জরুরি। নতুবা বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন ধরনের বৈষম্য তৈরি হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে বৈশ্বিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।