বিসিবিতেও অনিয়মের মহাউৎসব,পাপনের বিরুদ্ধে ২৭ ধরণের নথি তলব,৮০০ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন

- আপডেট সময় : ১২:৫১:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
- / ৪৫ বার পড়া হয়েছে
গত পনের বছর ধরে দেশের সব কিছুতেই ছিলো অন্যায় আর অনিয়মে মহাউৎসব। অনিয়মটাই যেখানে ছিলো নিয়ম। দেশ পরিচালনায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্দেশনাই যেমন চলত সব। তেমনি তারই আশির্বাদপুষ্ট নাজমুল হাসান পাপনের ইশারায় চলতো দেশের ক্রিকেট বোর্ড। যদিও প্রায়শই তিনি মিডিয়া কর্মীদের সামনে বলে থাকতেন কাজের চাপে তার আর বিসিবিতে থাকার আগ্রহ নেই। তিনি আর নির্বাচন করবেন না। কিন্তু দেখা যায় তিনি ছাড়া আবার বিকল্প লোকও সাহস পায় না বিসিবি সভাপতি পদে দাঁড়াতে। নিজের হাতকে শক্তিশালী করতে সে সময় জাতীয়তাবাদীমনা কিছু সংগঠক ও ক্রিকেটারদের বোর্ডে রেখে নিজের অবস্থান মজবুত করেন।
ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন, বছরে প্রায় দুইশত কোটি টাকা টার্ন ওভার হওয়া বিসিবিতে কখনো হিসাব নিয়ে প্রশ্ন উঠত না। এমনকি বার্ষিক সাধারণ সভাগুলোতে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারো সাহস ও ছিলো না। বিভিন্ন বিল-বাউচার হতো নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী। এও গুঞ্জন, বোর্ডে নাজমুল হাসান পাপনের ডান হাত হিসাবে পরিচিত একই কর্পোরেট হাউস বেক্সিমকোতে কাজ করা মল্লিকেরও ছিলো দোদন্ড দাপট। বিসিবি’র সকল লজিস্টিক কাজে তিনি ছিলেন প্রধান নির্দেশ দাতা। বিসিবিকে অঘোষিত একটি অর্থ আয়ের মন্ত্রণালয় বানিয়ে রেখেছিলেন তিনি। যেখান থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করার গুঞ্জন ছিলো।
তেমনি একটি অভিযোগের ভিত্তিতে কিছুদিন আগে বিসিবিতে গিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল। তারা সুস্পষ্টভাবে তিনটি বিষয়ে তদন্তের কথা জানিয়েছিলেন। এবার বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসানের দুর্নীতির খোঁজে পূর্বাচলে স্টেডিয়াম নির্মাণ, বিপিএলের খরচ, বিদেশি কোচ নিয়োগে খরচসহ ২৭ ধরনের নথি তলব করে বিসিবিকে দুদক চিঠি দিয়েছে। সোমবার সেই চিঠি বিসিবিতে পৌঁছায়।
২৭ ধরনের নথির মধ্যে রয়েছে আগের কমিটির আয়-ব্যয়ের সব অডিট রিপোর্ট, আইসিসি-এসিসি থেকে প্রাপ্ত অনুদান, লজিস্টিকস খরচ, বিপিএলের আয়-ব্যয়ের সব রেকর্ড, বিপিএল পরিচালনার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তদের তথ্য, ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব ১০০ অনুষ্ঠানের আয়-ব্যয়, এ আর রাহমানের কনসার্টের সব নথিপত্র, তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট, অডিট ফার্মগুলো নিয়ে আলোচনা।
এবং এজিএমের খরচ, বিসিবি পরিচালকদের বিদেশ সফরের খরচ, হেলিকপ্টারের খরচ, স্টেডিয়াম শোভাবর্ধন এবং সংস্কার খরচ, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিপিএলের খরচ, আয়ারল্যান্ড সফরে সিকিউরিটি প্রদানের খরচের হিসাব। এছাড়া বিসিবির কর্মকর্তা, পরিচালকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিও রয়েছে।
এছাড়াও নাজমুল হাসান পাপন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এমনকি প্রায় ৩২ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদেরও খোঁজ পেয়েছে। তাদের দুজনের নামে দুটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।
পাপনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), স্টেডিয়াম নির্মাণ, আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে, বিদেশী কোচ নিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে অর্থ আত্মসাতের বেশ বড় ধরণের অভিযোগ অনুসন্ধান চলমান রয়েছে বলে জানায় দুদক।
সম্প্রতি এসব অভিযোগে মিরপুর বিসিবিতে অভিযান চালিয়ে নানা অসঙ্গতি খুঁজে পায় দুদক। ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিশনে সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক পরিচালক এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রভাবশালী সাবেক সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিকের বিরুদ্ধে সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সম্প্রতি পাপনের নেতৃত্বাধীন বোর্ডের নানা দুর্নীতির তথ্য অনুসন্ধানে গিয়ে নানা অসঙ্গতি খুঁজে পায় দুদক। ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিশনে সুপারিশ করা হয়েছে।