সাগরিকায় সিলেট হারের মধুর প্রতিশোধ, দিনের নায়ক মিরাজ

- আপডেট সময় : ১২:০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫
- / ৪১ বার পড়া হয়েছে
চট্টগ্রামের সাগরিকায় প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন অল রাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। তার ভিতর দেশ সেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। বলাও শুরু করেদিয়েছেন বাংলাদেশের পরবর্তী সাকিব। যদিও নিজের মতো করে খেলে বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মিরাজ।
বুধবার সাগরিকায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলকে ইনিংস ও ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে হারানোর পিছনে বড় কারিগরটা যে ছিলেন তিনি। তাইতো দেশজুড়ে মিরাজ বন্দনা চলছে। চট্টগ্রাম টেস্টে বোলিং এবং ব্যাটিংয়ে দুই দিকেই সমান পারদর্শীতা দেখিয়েছেন মিরাজ।
তার অল রাউন্ড চমকে সিলেটের হারের মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে বাংলাদেশ দল। প্রতিপক্ষকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছেন শান্তবাহিনী। তৃতীয় দিনেই ম্যাচের লাগাম টেনে দিয়েছেন মিরাজ। অথচ অতিথি এই দলটির কাছেই সিলেটে ৭ উইকেটের হারের লজ্জায় পড়তে হয়েছিলো টাইগারদের। বন্দরনগরীতে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি জিম্বাবুয়ানদের। বাংলা দেশের প্রথম ইনিংসের বড় লিডেই বেসামাল জিম্বাবুয়ে। শুরুতেই ব্যাটিংয়ে পাঠানো জিম্বাবুয়েকে ২২৭ রানে বেধে ফেলার পর বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে দাড় করায় ৪৪৪ রানের বিশাল সংগ্রহ। তাতেই লিড ২১৭ রানের। তা টপকাতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে অতিথি দলটির ব্যাটাররা। প্রথম ইনিংসের ন্যায় দ্বিতীয় ইনিংসেও্র সেঞ্চুরিয়ান মিরাজ ভেলকিতে দ্রুত মাঠ ছাড়া হন জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা। দ্বিতীয় ইনিংসটি মাত্র ১১১ রানেই শেষ।
ম্যাচের এমন চিত্রায়নে মহানায়ক মিরাজ। একদিকে করেছেন সেঞ্চুরি, অন্যদিকে বল হাতে পেয়েছেন ম্যাচ উইনিং ৫ উইকেট। যদিও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তাইজুল ইসলাম (৬+৩) ৯ উইকেট।। কিন্তু সেঞ্চুরির পর পাঁচ উইকেট দখল করেই ম্যাচ সেরা হন মিরাজ। শুধু তাই নয়, দেশ সেরা দুই অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় ক্রিকেটার হিসাবে একই টেস্টে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট লাভের কৃতিত্ব অর্জন করেন।
একই ইনিংসে বাংলাদেশের ইনিংসে আরেক ব্যাটার সেঞ্চুরি করেন । তিনি হচ্ছেন সাদমান ইসলাম। এই দিন তার ব্যাট থেকেও এসেছিলো সেঞ্চুরি,সর্বোচ্চ ১২০ রানের ব্যক্তিগত ইনিংস।
জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে জোড়া আঘাত হানেন আগের ইনিংসে ছয় উইকেট নেওয়া তাইজুল ইসলাম। ব্রায়ান বেনেটকে (৬) দ্বিতীয় স্লিপে সাদমান ইসলামের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। একই ওভারে নিক ওয়েলচকেও ফেরান এই স্পিনার। তার অফ স্টাম্পে রাখা ডেলিভারি না খেলে ছেড়ে দেন ওয়েলচ। বল প্যাডে লাগলে জোরাল আবেদন করলেও সাড়া মিলেনি আম্পায়ারের কাছ থেকে। তবে রিভিউ নিলে রিপ্লেতে দেখা যায়, স্টাম্পে লাগত বল। খালি হাতে ফেরেন ওয়েলচ।
এরপর বল হাতে নিয়েই জিম্বাবুয়ে শিবিরে আঘাত হানেন নাঈম হাসান। তার অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরের বল ডিফেন্স করতে গেলে শন উইলিয়ামসের (৭) ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো সাদমানের হাতে। দলীয় ২২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে নিয়ে দলের হাল ধরেন বেন কারান। ৪৭ রানের জুটি গড়ে ভালো কিছুর আভাসও দিচ্ছিলেন এই দুই ব্যাটার। কিন্তু এ জুটি ভেঙ্গেই উইকেট প্রাপ্তির শুরু করেন মিরাজ।
মিরাজের বলে ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। এর আগে ব্যক্তিগত ১৬ রানে জীবন পেয়েছিলেন এই মিরাজের বলেই। তবে সেবার বেঁচে গেলেও তার সদ্ব্যবহার করতে পারেননি আরভিন। শেষ পর্যন্ত ৫৬ বলে করেন ২৫ রান। সে ওভারের শেষ বলে ওয়েসলি মাধেভেরেকেও তুলে সফরকারীদের বড় চাপে ফেলে দেন মিরাজ। তার অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে ভেতরে ঢোকা বলে ডিফেন্স করতে গেলে লাইন মিস করে লাগে প্যাডে। আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েছিলেন মাধেভেরে। কাজ হয়নি, খালি হাতে ফিরতে হয় তাকে।
পরের ওভারে ফিরে টাফাডজোয়া সিগাকেও ফেরান মিরাজ। আগের বলেই আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচেছিলেন সিগা। কিন্তু পরের বলেই শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে খালি হাতে ফিরে যান এই ব্যাটার। তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শূন্য রানে ফিরলেন সিগা। স্কোরবোর্ডে ২০ রান যোগ হতে বড় শটের চেষ্টায় কাটা পড়েন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা।
তবে এক প্রান্ত আগলে জিম্বাবুয়েকে আশা দেখাচ্ছিলেন কারান। তবে শেষ পর্যন্ত ফিফটি তুলে নেওয়ার আগেই তাকে ফেরান মিরাজ। একই সঙ্গে পূরণ করেন নিজের ফাইফারও। তার স্টাম্পের একই বাইরে রাখা বলে খোঁচা মেরে উইকেটরক্ষক জাকের আলীর হাতে ক্যাচ দেন কারান। ১০৩ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৪৬ রান করেন এই ওপেনার। এরপর রিচার্ড এনগাভারাকে ছাঁটাই করেন তাইজুল। আর ভিনসেন্ট মাসেকেসা রানআউট হলে শেষ হয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস। ইনিংস জয় পায় টাইগাররা।
এর আগে সকালে আগের দিনের ৭ উইকেটে ২৯১ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ তিন উইকেট হারিয়ে এদিন আরও ১৪৭ রান যোগ করে টাইগাররা। যার মূল কৃতিত্ব মেহেদী হাসান মিরাজের। অবশ্য ভালো সহায়তা পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম তানজিম হাসান সাকিবের। তাইজুলের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটির পর তানজিমের সঙ্গে গড়েন ৯৬ রানের জুটি।
শেষ পর্যন্ত ১০৪ রানের ইনিংস খেলে মাসেকেসার বলে আউট হন মিরাজ। ১৬২ রানের ইনিংসটি ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজান এই অলরাউন্ডার। ৮০ বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৪১ রানের ইনিংস খেলেন তানজিম। তাইজুল করেন ২০ রান।