ম্যাচ হারের পর মেজাজ ও হারিয়েছে মোহামেডানের সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ। এই বয়সেরও গ্যালারিতে গিয়ে দর্শকদের পিটাতে গেলেন। শান্ত স্বভাবের মাহমুদ উল্লাহ এমন চড়াও হওয়া মেজাজ ছিলো অবাক করা। যা কিনা ভালো চোখে নিতে পারেন নি ক্রিকেট ভক্তরা।

শিরোপা নিশ্চিত করণ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের এই ম্যাচে মোহামেডান এবং আবাহনী দু’দলেরেই ছিলো সুযোগ। যদিও দুই পয়েন্টের স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়েছিল আবাহনী লিমিটেড। রান রেটেও বড় ব্যবধানে এগিয়ে। কিন্তু হেড টু হেড বিবেচনায় পিছিয়ে ছিল দলটি। শিরোপা নিশ্চিত করতে মোহামেডানের বিপক্ষে সুপার লিগের শেষ ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না তাদের। আর সেখানে দারুণ এক জয়ে মোহামেডানকে হারিয়েই শিরোপার স্বাদ নিল আকাশী-নীল জার্সিধারীরা।

মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ রাউন্ডের ম্যাচে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ৬ উইকেটে হারালো আবাহনী লিমিটেড। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৪০ রান করে মোহামেডান। জবাবে ৫৬ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌছে যায় মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের নেতৃত্বাধীন আবাহনী দল। ম্যাচ সেরা তিন লাখ টাকার পুরস্কার পান অধিনায়ক মোসাদ্দেক।

১৬ ম্যাচে শেষে ১৪টি ম্যাচ জিতে আবাহনীর পয়েন্ট ২৮। অন্যদিকে সমান ম্যাচে মোহামেডানের সংগ্রহ ২৪ পয়েন্ট। প্রথম পর্ব শেষে দুই দলের পয়েন্টই ছিল সমান ১৮।

এ নিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো অর্থাৎ হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতল আবাহনী।  সবমিলিয়ে এ নিয়ে ২৪ বার এই আসরের চ্যাম্পিয়ন হলো তারা। মোহামেডান নয় বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেলেও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ লিস্ট-এ মর্যাদা পাওয়ার পর আর কোনো শিরোপা জিততে পারেনি।

এদিন বোলারদের সৌজন্যে মোহামেডানকে লক্ষ্যের মধ্যেই রাখে আবাহনী। মাঝারী পুঁজি নিয়ে মোহামেডান তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেনি। যদিও দলীয় ১০৮ রানের মধ্যে চার উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ছিলো তারা। কিন্তু এরপর বাকি গল্প শুধুই আবাহনীর। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মোসাদ্দেক ও মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটে আর প্রতিরোধ গড়তে পারেনি সাদাকালোরা।

ইনিংসের প্রথম ওভারেই ওপেনার শাহরিয়ার কমলকে তুলে মোহামেডানকে ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন ইবাদত হোসেন। কিন্তু এরপর পারভেজ হোসেন ইমনের সঙ্গে জিসান আলমের ৫৬ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে আবাহনী। ইমনকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন সাইফউদ্দিন। ২৮ রান আসে ইমনের ব্যাট থেকে। এরপর দ্রুত এসএম মেহেরব হাসানকে তুলে নেন নাসুম আহমেদ।

জিসান আলম এক প্রান্ত আগলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। ব্যক্তিগত ৫৫ রানে নাসুমের বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। তখন জমে উঠেছিল লড়াই। কিন্তু সেই লড়াই এক পেশে করে দেন মিঠুন ও মোসাদ্দেক। গড়েন অবিচ্ছিন্ন ১৩৫ রানের জুটি। ৬৫ বলে ৬টি চার ও ৫টি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৭৮ রান করে অপরাজিত থাকেন মোসাদ্দেক। আর ৭৯ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৬ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন মিঠুন।

এর আগে টস জিতে মোহামেডানকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় আবাহনী। তৌফিক খান তুষারকে নিয়ে শুরুটা ভালোই করেন রনি তালুকদার। তাদের ওপেনিং জুটিতে আসে ৫০ রান। এরপর ১৬ রানের ব্যবধানে ফিরে যান এ দুই ওপেনার। ব্যক্তিগত ৪৫ রানে রিপন মণ্ডলের শিকার হন রনি। এর আগে তৌফিককে আউট করেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী।

দলীয় একশ রান হওয়ার আগে মাহফুজুর রাব্বির শিকার হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন আনিসুল ইসলামও। ফরহাদ হোসেন চেষ্টা করেছিলেন। ব্যক্তিগত ৪২ রানে ফিরে যান মেহেরব হাসানের বলে। এরপর দলের হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল। গড়েন ১১৪ রানের জুটি। তাতেই মাঝারী পুঁজি পায় দলটি।

তবে ফিফটির পরপরই দুই ব্যাটার ফিরে গেলে স্লগ ওভারের সুবিধা নিতে পারেনি মোহামেডান। ব্যক্তিগত ৫০ রানে দুই ব্যাটারকেই ফিরিয়েছেন আবাহনী অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। শেষ পাঁচ ওভারে এসেছে কেবল ২৬ রান। আবাহনীর হয়ে দুটি করে উইকেট পেয়েছেন মোসাদ্দেক ও মৃত্যুঞ্জয়।