জাতীয় পার্টিতে আবারো ভাবী-দেবর লড়াই

- আপডেট সময় : ১২:০৩:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
- / ৪৯ বার পড়া হয়েছে
জুলাই অভ্যূত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের রাজনৈতিক সফরসঙ্গী জাতীয় পার্টিও দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ে। তবে এতে থেমে নেই জাতীয় পার্টিতে ভাবী-দেবরের লড়াই। জাতীয় পার্টির মূল অংশের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের ও অপর অংশের চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ। দু‘জনের মধ্যে চলছে পারস্পারিক দ্বন্দ্ব ও ঠান্ডা লড়াই।
গত আটমাসে জিএম কাদেরকে বিভিন্ন সভা,সেমিনারে সক্রিয় হতে দেখা গেলেও নিষ্ক্রিয় ছিলেন রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা। তবে দীর্ঘ বিরতির পর একদিনে দুই অংশ বর্ধিত সভা করে আবারও লড়াইয়ে ফিরেছে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) জাপার জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশ দলটির বনানী কার্যালয়ে বর্ধিত সভা করেছে। একই সময়ে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানীর সেগুনবাগিচার জেকে টাওয়ারে।
‘একের পর এক ত্যাগী নেতাকর্মীরা অপমানিত হয়ে পদত্যাগ করছেন। এভাবে দল চলতে পারে না। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। রাহু গ্রাস থেকে পল্লীবন্ধুর আদর্শকে রক্ষা করতে হবে। এই সরকার যদি তাকে গ্রেপ্তারে কালক্ষেপণ করে তাহলে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে আটক করে আইনের হাতে সোপর্দ করবে।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাদের নিয়ে আমরা ভাবছি না। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে আমরাই মূল জাতীয় পার্টি, তাদের অস্তিত্ব নেই। এরা কি বলছে সেটা মাথায় নেওয়ার মতো সময়ও আমাদের নেই।’
রওশনপন্থি অংশের বর্ধিত সভায় অসুস্থতার কারণে রওশন এরশাদ উপস্থিত থাকতে পারেননি বলেও ঢাকা পোস্টকে জানান কাজী মামুন। তিনি বলেন, সে কারণে দলীয় প্রধানের চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়।
রওশনপন্থি এ নেতা আরও বলেন, আমাদের আগামী দিনের পরিকল্পনা হচ্ছে জাতীয় পার্টির নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক পুনরুদ্ধার করা। আগের নির্বাচন কমিশন আমাদের সঙ্গে অন্যায় করেছে। আশা করছি এই কমিশন আমাদেরকে দলের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দেবে।
রওশন এরশাদ অংশের বর্ধিত সভায় অংশ নেন দলের কো-চেয়ারম্যান সুনীল শুভ রায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, সাবেক সংসদ সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিক, শফিকুল ইসলাম শফিক, খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু, শাহ জামাল রানা, উপদেষ্টা হাফছা সুলতানা, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শারফুদ্দীন আহমেদ শিপু, আমিনা হাসান, আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব পীরজাদা জুবায়ের আহমেদ, সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম তরুণ, সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবু সালেহ চৌধুরীসহ বিভাগীয় ও জেলা-মহানগর শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক, সদস্য সচিবদের অনেকে।
অন্যদিকে বনানীর বর্ধিত সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে সব সমস্যা সমাধানের প্রথম স্টেপ। যত দ্রুত সম্ভব সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। তার আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো ঠিক করতে হবে। পুলিশ ও প্রশাসন যেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
‘সরকার যেন নিরপেক্ষভাবে কাজ করে সে নিশ্চয়তা থাকতে হবে। ডিসেম্বর বা ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন হলেও আমাদের আপত্তি নেই। অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচনে ডিসি ও এসপিরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবেন।’
বর্তমান সরকার তাদের দলের জন্য কি ভূমিকা নেবে তাও পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়ে জিএম কাদের বলেন, ‘একতরফা নির্বাচন করে কারোরই লাভ হবে না। একতরফা নির্বাচন হলে আবারো গণ্ডগোল হবে, এর একটা স্থায়ী সমাধান দরকার।’
বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থায় কেউ বাঁধা দিচ্ছে না। ক্ষমতাকে দীর্ঘায়ত করতে বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচন পেছানো হচ্ছে। বর্তমান সরকার বুঝতে পারছে না তারা নির্বাচন দীর্ঘায়ত করে দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। এই সরকার দেশ চালাতে পারবে না।’
‘এই সরকার বৈধ না, আবার অবৈধও না। কারণ আমরা মেনে নিয়েছি, তাই মাঝামাঝি হয়ে গেছে। নির্বাচিত সরকারকেই বৈধ সরকার বলা হয়। এই সরকার নির্বাচিত নয় কিন্তু হাইকোর্ট এই সরকারকে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা মেনে নিয়েছি। এই সরকার যে সংস্কারই করুক তা নির্বাচিত সংসদে পাস করতে হবে।’
যার ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করে জিএম কাদের বলেন, ‘দেশের ৫০ ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে এই সরকার যে সংস্কার করতে চাইছে তা কোনো দিনই কার্যকর হবে না। সংস্কার হচ্ছে নির্বাচন পেছানোর বাহানা। নির্বাচন পেছানোর কারণে তারা কত বড় গর্তে পড়বে তা তারা বুঝতে পারছে না।’
‘সামনের দিকে মহাসংকট আসবে, পয়সা থাকবে না, বিদেশ থেকে মালামাল কিনতে হবে, আমাদের চাল পর্যন্ত কিনতে হচ্ছে।’ দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বক্তব্য দেন।