রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পরেই পরিস্কার হবে কতটুকু সংস্কার সম্ভব

- আপডেট সময় : ০১:১৫:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
- / ৪৩ বার পড়া হয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকার চাপে আছে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনের দাবিতে। দ্রুত নির্বাচন সম্পর্ণ করতে গেলে ভেস্তে যেতে পারে সংস্কার। দেশের জনগণের কাছ থেকে দুটো দাবি উঠছে জোরালোভাবে। তবে ইউনুস সরকার তার একটি দিক নির্দেশনা অবশ্য রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে তুলে ধরেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা। তিনি এর বেশি থাকতেও চান না বলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রকাশও করেছেন। কিন্তু এরপরেও কোথায় যেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যে দোসরদের রেখে গেছে তাদের পরিচ্ছন্ন করতে যে অনেক বেশি লেগে যাবে। তাই বলে নির্বাচন বন্ধ থাকবে! উপদেষ্টাদের কাছ থেকে নানা ধরণের বক্তব্যে রাজনৈতিক দলগুলো খুশি নয়।
তাই রাজনৈতিক দলগুলো থেকে জোরালো দাবি উঠছে নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কছে থেকে সুষ্পষ্ট বক্তব্যের। তবে নির্বাচনের পূর্বে তাহলে কতোটুকু সংস্কার সম্পন্ন করা সম্ভব! এ নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শেষ হবার পরেই স্পষ্ট হওয়া যাবে অন্তর্বর্তী সরকার কতটুকু সংস্কার বাস্তবায়ন করতে পারবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। শফিকুল আলম বলেন, ‘রাজনৈতিকদলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশন বিশদ সংলাপ করছে। এই সংলাপ শেষ হলে রাজনৈতিকদলগুলো একটা ঐকমত্যে পৌঁছাবে, তখন স্পষ্ট হবে কতটা সংস্কার আমরা করব এবং কতটা সংস্কার পরবর্তী সরকার করবে।’
প্রেস সচিব মনে করেন, সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের বিষয়টি নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের ওপর।
এদিন শফিকুল আলম আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিদেশ নীতি হচ্ছে প্রো-বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বার্থ যতটুকু অক্ষুণ্ন রাখা যায়, কূটনীতিতে সেটাই করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর–সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে শফিকুল আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা চাইছেন, সার্কের যত দেশ আছে, প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের যেন উন্নয়ন হয়। আমরা তো দক্ষিণ এশিয়ার পরিবারভুক্ত। সেই আলোকে পাকিস্তান আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার পরিবারভুক্ত, সার্কের অন্তর্ভুক্ত, তাই আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চাইছি। একই সঙ্গে আমরা ভারতের সঙ্গেও সম্পর্কের উন্নয়ন চাইছি। ভুটান, নেপালের সঙ্গেও চাইছি।’
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নেপালের জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। এ জন্য উত্তরবঙ্গে জমি দেখা হচ্ছে। সবার সঙ্গে উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে এটা হচ্ছে।
শফিকুল আলম বলেন, অধ্যাপক ইউনূস গত ৮ আগস্ট শপথ নেওয়ার পর বলেছিলেন, তাঁর বিদেশ নীতির অন্যতম একটা দিক হচ্ছে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করা এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো। তিনি সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার কথা অনেকবার বলেছেন বলে উল্লেখ করেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানান প্রেস সচিব।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত ড.আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের কারণে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না।
ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ করবে বাংলাদেশ। করোনা না হলে ২০২৪ সালেই এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটতো। এলডিসি উত্তরণে কোনো বাধা নেই। নীতিমালার মধ্যে কাজ করা হবে এবং সম্ভাব্য সমস্যার প্রস্তুতি ও সমাধান করা হবে।
বাংলাদেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবিধা উন্নত দেশগুলো বহাল রাখবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যে সমস্ত সুযোগ আমরা পাচ্ছি তার মধ্যে ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি সুবিধাসহ অনেক কিছুই বন্ধ হবে না। এর মধ্যে অনেক দেশেই নানা ধরনের সুবিধা অফার করছে। তাই এলডিসি উত্তরণে আমাদের বাঁধা নেই।
এ সময় ভিক্ষার মেন্টালিটি থেকে বের হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত বলেন, ‘ভিক্ষার মেন্টালিটি থেকে বের হতে হবে। আমরা এখন আর বিশ্ব-দরবারে চাইব না বরং দেব।’
বিশেষ দূত বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজে সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করবেন। এলডিসি থেকে উত্তরণে সব সমস্যা সমাধানে উচ্চপর্যায়ের সার্চ কমিটি গঠিত হবে। কমিটিতে সরকারি ও বেসরকারি বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।