ঢাকা ১২:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

জুলাই-আগস্ট হত্যাকান্ডের মামলাগুলো দ্য হেগে পাঠানোর আহবান জানিয়েছেন ক্যাডম্যান

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫
  • / ১০৪ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মামলা হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান কৌঁসুলির বিশেষ উপদেষ্টা টবি ক্যাডম্যান।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই সুপারিশ করেন ক্যাডম্যান।

বসনিয়া, কসোভো, রুয়ান্ডা, ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইউক্রেনের বিভিন্ন ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ায় কাজে অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ক্যাডম্যান সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ভূমিকা ও সহযোগিতার আলোচনা
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ কীভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে কাজ করবে সে বিষয়টি বিশদভাবে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা এবং ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে আদালতের ভূমিকা ও দায়িত্ব নিয়ে কথা হয়।

উল্লেখ করা হয় যে, কিছু পলাতক অভিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রের সুরক্ষা পাচ্ছে, ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে সহযোগিতা ও পরিপূরকতার ভিত্তিতে কাজ করা প্রয়োজন যাতে অপরাধীদের পুরোপুরি জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চ্যালেঞ্জ ও সংস্কারের আহ্বান
সাক্ষাৎকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা দিয়ে শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালটি মূলত শেখ হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত অপরাধ, বিশেষত জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনের সময়ের নৃশংসতা বিচার করছে। আলোচনায় বিচারের আইনি কাঠামো ও অতীত থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা হয়।

জি৩৭ চেম্বার্সের প্রধান ক্যাডম্যান আগের স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থেকে যেন বেরিয়ে আসতে পারে সে লক্ষ্যে আইসিটির আইনি ও বিধিবিধানগত কাঠামো পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তনের সুপারিশ করেন।

সাক্ষাতে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়, ন্যায়বিচারের মান উন্নত করতে প্রমাণের পদ্ধতিগত নিয়ম সংযোজন এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

অধ্যাপক ইউনুস আইসিটি প্রসিকিউশন দলের কাজের প্রশংসা করেন এবং বলেন, বিচারের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে, যাতে সঠিক বিচার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলাটি আইসিসিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
প্রধান উপদেষ্টা জানান, জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো হবে কি না সে ব্যাপারে বাংলাদেশ শিগগির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন, বিশ্বকে জানতে হবে, জুলাই বিপ্লবে ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী, আন্দোলনকারী ও শ্রমিক হত্যার নির্দেশ কে দিয়েছিলেন এবং কারা প্রধান অপরাধী ছিলেন। জাতিসংঘের তদন্ত মিশন বাস্তব সত্য উন্মোচন করেছে। এখন আমাদের অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার ও বিচারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
ট্রাইব্যুনাল এবং প্রসিকিউশনের জন্য সম্পূর্ণ প্রয়োজনীয় সম্পদ নিশ্চিত করা, সাক্ষীদের সুরক্ষা দেওয়া, অভিযুক্তদের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করা এবং বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখা-এসব বিষয়েও আলোচনা হয়।

সাক্ষাতে শেখ হাসিনার সরকারের সময় লুট হওয়া সম্পদ জব্দ ও দেশে ফেরানোর জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রক্রিয়াগত ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সাক্ষাৎ শেষে অধ্যাপক ইউনুস টোবি ক্যাডম্যানকে আর্ট অব ট্রায়াম্ফ: বাংলাদেশের নতুন ভোরের গ্রাফিতি বইটি উপহার দেন, যা বাংলাদেশের জনগণের নতুন যুগের আশা ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত।

তথ্য সূত্র : বাসস

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জুলাই-আগস্ট হত্যাকান্ডের মামলাগুলো দ্য হেগে পাঠানোর আহবান জানিয়েছেন ক্যাডম্যান

আপডেট সময় : ১২:১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ মার্চ ২০২৫

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মামলা হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠাতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রধান কৌঁসুলির বিশেষ উপদেষ্টা টবি ক্যাডম্যান।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই সুপারিশ করেন ক্যাডম্যান।

বসনিয়া, কসোভো, রুয়ান্ডা, ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইউক্রেনের বিভিন্ন ন্যায়বিচার প্রক্রিয়ায় কাজে অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ক্যাডম্যান সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ভূমিকা ও সহযোগিতার আলোচনা
সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ কীভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে কাজ করবে সে বিষয়টি বিশদভাবে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সম্ভাবনা এবং ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে আদালতের ভূমিকা ও দায়িত্ব নিয়ে কথা হয়।

উল্লেখ করা হয় যে, কিছু পলাতক অভিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রের সুরক্ষা পাচ্ছে, ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সঙ্গে সহযোগিতা ও পরিপূরকতার ভিত্তিতে কাজ করা প্রয়োজন যাতে অপরাধীদের পুরোপুরি জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চ্যালেঞ্জ ও সংস্কারের আহ্বান
সাক্ষাৎকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা দিয়ে শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালটি মূলত শেখ হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত অপরাধ, বিশেষত জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালে ছাত্র আন্দোলনের সময়ের নৃশংসতা বিচার করছে। আলোচনায় বিচারের আইনি কাঠামো ও অতীত থেকে বেরিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা হয়।

জি৩৭ চেম্বার্সের প্রধান ক্যাডম্যান আগের স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থেকে যেন বেরিয়ে আসতে পারে সে লক্ষ্যে আইসিটির আইনি ও বিধিবিধানগত কাঠামো পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তনের সুপারিশ করেন।

সাক্ষাতে মৃত্যুদণ্ডের বিষয়, ন্যায়বিচারের মান উন্নত করতে প্রমাণের পদ্ধতিগত নিয়ম সংযোজন এবং যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

অধ্যাপক ইউনুস আইসিটি প্রসিকিউশন দলের কাজের প্রশংসা করেন এবং বলেন, বিচারের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে, যাতে সঠিক বিচার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলাটি আইসিসিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
প্রধান উপদেষ্টা জানান, জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো হবে কি না সে ব্যাপারে বাংলাদেশ শিগগির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন, বিশ্বকে জানতে হবে, জুলাই বিপ্লবে ১ হাজার ৪০০ শিক্ষার্থী, আন্দোলনকারী ও শ্রমিক হত্যার নির্দেশ কে দিয়েছিলেন এবং কারা প্রধান অপরাধী ছিলেন। জাতিসংঘের তদন্ত মিশন বাস্তব সত্য উন্মোচন করেছে। এখন আমাদের অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

অবৈধ সম্পদ পুনরুদ্ধার ও বিচারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
ট্রাইব্যুনাল এবং প্রসিকিউশনের জন্য সম্পূর্ণ প্রয়োজনীয় সম্পদ নিশ্চিত করা, সাক্ষীদের সুরক্ষা দেওয়া, অভিযুক্তদের ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করা এবং বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখা-এসব বিষয়েও আলোচনা হয়।

সাক্ষাতে শেখ হাসিনার সরকারের সময় লুট হওয়া সম্পদ জব্দ ও দেশে ফেরানোর জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ও প্রক্রিয়াগত ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সাক্ষাৎ শেষে অধ্যাপক ইউনুস টোবি ক্যাডম্যানকে আর্ট অব ট্রায়াম্ফ: বাংলাদেশের নতুন ভোরের গ্রাফিতি বইটি উপহার দেন, যা বাংলাদেশের জনগণের নতুন যুগের আশা ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত।

তথ্য সূত্র : বাসস