ঢাকা ০৩:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে হুমকির মুখে পড়বে সরকারের স্থিতিশীলতা : বিএনপি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:২৬:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১০৬ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চারিদিকে চলছে বাড়ি ভাঙ্গার কালচার। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার এক বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভাঙ্গলো ৩২ নাম্বরের বাড়ি। এরপর ‍শুরু হয়েছে একে একে উগ্র সকল আওয়ামী লীগের বাড়ির উপর হামলা ও ভাংচুর।

বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভাংচুরের এই কালচার চলছেই।   সরকার উদ্ভূত এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছে বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি। তাদের আশঙ্কা এই পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্রবিরোধী দেশী–বিদেশী অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যেই এই উপস্বর্গ দৃশ্যমান হচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে বিএনপি থেকে কথা বলা হয়েছে।

দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উসকানিমূলক আচরণ, জুলাই–আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে গতকাল বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙ্গে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকান্ডে উৎসাহিত হচ্ছে।’

একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। বলা হয়, ‘অথচ জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ নানান ধরণের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন তখন সড়কে ”মব কালচারের” মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।’

জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদান এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, পরাজিত ফ্যাসিস্টদের উসকানিমূলক তৎপরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মতো ‘জরুরি’ কাজগুলোতে দৃশ্যমান এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন দায়িত্বে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এখনও প্রশাসনকে পতিত ফ্যাসিস্ট শাসকের দোসরমুক্ত করা হয়নি, বিচার বিভাগে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বিদ্যমান, পুলিশ প্রশাসনে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত। এমতাবস্থায় সরকার জনআকাঙ্খা পূরণে সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে।’

বিএনপির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের নিত্যদিনের দু:খ দুর্দশা লাঘব করা জরুরি, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রেণী পেশার মানুষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা গায়েবি মামলার কোনো সুরাহা এখনও হয়নি। গণতন্ত্রকামী জনগণ ফ্যাসিবাদী আমলের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় এখনও হয়রানির শিকার হচ্ছে, অথচ এ বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখেনি।’

এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্র সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনমুখী জরুরী সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। অথচ জনআকাঙ্খা উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরাই এই অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে হুমকির মুখে পড়বে সরকারের স্থিতিশীলতা : বিএনপি

আপডেট সময় : ১২:২৬:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

চারিদিকে চলছে বাড়ি ভাঙ্গার কালচার। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার এক বক্তব্যে ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভাঙ্গলো ৩২ নাম্বরের বাড়ি। এরপর ‍শুরু হয়েছে একে একে উগ্র সকল আওয়ামী লীগের বাড়ির উপর হামলা ও ভাংচুর।

বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া ভাংচুরের এই কালচার চলছেই।   সরকার উদ্ভূত এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছে বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি। তাদের আশঙ্কা এই পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্রবিরোধী দেশী–বিদেশী অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যেই এই উপস্বর্গ দৃশ্যমান হচ্ছে বলে এক বিবৃতিতে বিএনপি থেকে কথা বলা হয়েছে।

দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উসকানিমূলক আচরণ, জুলাই–আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে গতকাল বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙ্গে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকান্ডে উৎসাহিত হচ্ছে।’

একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। বলা হয়, ‘অথচ জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ নানান ধরণের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন তখন সড়কে ”মব কালচারের” মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।’

জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা প্রদান এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, পরাজিত ফ্যাসিস্টদের উসকানিমূলক তৎপরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মতো ‘জরুরি’ কাজগুলোতে দৃশ্যমান এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন দায়িত্বে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এখনও প্রশাসনকে পতিত ফ্যাসিস্ট শাসকের দোসরমুক্ত করা হয়নি, বিচার বিভাগে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বিদ্যমান, পুলিশ প্রশাসনে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত। এমতাবস্থায় সরকার জনআকাঙ্খা পূরণে সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে।’

বিএনপির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের নিত্যদিনের দু:খ দুর্দশা লাঘব করা জরুরি, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রেণী পেশার মানুষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা গায়েবি মামলার কোনো সুরাহা এখনও হয়নি। গণতন্ত্রকামী জনগণ ফ্যাসিবাদী আমলের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় এখনও হয়রানির শিকার হচ্ছে, অথচ এ বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখেনি।’

এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্র সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনমুখী জরুরী সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। অথচ জনআকাঙ্খা উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরাই এই অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’