আওয়ামী লীগ নামে কেউ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না : সালাহউদ্দিন আহমেদ

- আপডেট সময় : ০৭:১৩:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ১০৭ বার পড়া হয়েছে
৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পর থেকে দেশে তার পেতাত্তারা চালাচ্ছে নানা ধরনের গুজব। গোটা দেশকে অস্থিরতার মধ্যে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে তারা গত ছয় মাসে নানা নামে দুইশতাধিক দাবি ও আন্দোলন চালিয়েছে। ছাত্র-জনসতার উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার অপচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। তাদের ঘৃনিত কর্মকান্ডের জন্য এখনো পর্যন্ত ক্ষমা চাওয়া হয়নি। এমমন কি দলটির নেতা-কর্মীরা হাসিনার ফ্যাসিজম সমর্থন করছেন। ফলে এই দলটি যে দেশের জন্য অমঙ্গলজনক তা প্রমান রেখে গেছে। তাই এই দলটির রাজনীতি যে দেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়, এমনটি বিশ্বাস করছেন দেশের সাধারণ জনগন।
সেই প্রেক্ষাপটেই আওয়ামী লীগ নামে কেউ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় ঐক্য ও বর্তমান বাস্তবতা’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে কোনো কর্মসূচি করার জন্য রাজপথে নামতে দেবে না বলেছে। এটা সমর্থন করি। কিন্তু, এইভাবে আওয়ামী লীগকে পুলিশ দিয়ে কতদিন ঠেকাবেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা বলবেন নির্বাচনে আমরা আওয়ামী লীগকে চাই না, আওয়ামী লীগ এদেশে রাজনীতি করতে পারবে না। কিন্তু কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন? আইনি কোনো পদক্ষেপ এই সরকার নিচ্ছে না।’
‘আমরা বলেছিলাম সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের ব্যবস্থা করা হোক। এছাড়া, এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের জন্য আমরা দাবি জানিয়েছিলাম, এ দেশের মানুষ দাবি জানিয়েছিল,’ বলেন তিনি।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরও বলেন, ‘এই সরকার অধ্যাদেশ ও আইন সংশোধনের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, হঠাৎ করে তারা কেবিনেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন এটা করা যাবে না। কেন? একদিকে আপনার চাইবেন আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হোক, আবার তাদের বিচার করবেন না এবং পুলিশ দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাধা দেবেন, এমন স্ববিরোধিতা ঠিক নয়।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি করছি। বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হোক বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি না, নির্বাচন করতে পারবে কি না। সংবিধানে বিধান সংযুক্ত আছে সেই অনুযায়ী আপনারা আইন প্রয়োগ করুন।’
তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে আমরা যে সাংবিধানিক রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, সেই সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেন প্রথমত নির্বাচনমুখী সংস্কার ইস্যুতে। নির্বাচনমুখী সংস্কারের জন্য যেসব সংস্কার স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়ন করা দরকার সেগুলো চিহ্নিত করুন। রাজনৈতিক দলসহ সব মহলের সঙ্গে আলোচনা করুন এবং সেটার আইনি সংস্কার করুন। আইনি সংস্কারের পর যদি প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দরকার হয়, সেটা অবশ্যই করবেন, সেজন্য কত সময় লাগবে সেটা আমরা জানি।’
‘বর্তমানে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ প্রায় সমাপ্ত করে এনেছে। আমাদের কাছে তালিকা আছে। মার্চের ২ তারিখের মধ্যে একটি পরিষ্কার ভোটার তালিকা প্রণয়ন হয়ে যাবে। এরপর শুনানি, আপত্তি এসব চলবে। মাস দুয়েকের ভেতরে এসব সম্পন্ন হয়ে যাবে। অন্যান্য নির্বাচন কার্যক্রম যেসব আছে, আইনি ছাড়া, এগুলোতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। আর এসব কাজ একইসঙ্গে চলতে পারে,’ বলেন তিনি।
সালাহউদ্দীন বলেন, ‘বেশি সময় ক্ষেপণের জন্য আপনারা কোনো কৌশল অবলম্বন করলে জাতি এটা মেনে নেবে না। নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আমরা বহু বছর সংগ্রাম করে আসছি। নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেটা তো আপনারা বহাল হয়েছেন। অন্তবর্তী সরকারের নামে সাংবিধানিকভাবে আপনারা শপথ নিয়েছেন।’
‘সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপনারা শপথ নিয়েছেন, বৈধভাবেই সরকার পরিচালনা করছেন। এখন কেউ কেউ মনে করছে তাদেরকে হয়ত লেজিটেমিস ক্রাইসিসে ভুগছেন, এর জন্য সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। এর জন্যও তো সংসদ লাগবে। সেই সংসদে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। আপনাদের শপথ গ্রহণ ও ১০৬ ধারার সরকারকে রেটিফিকেশন করতে হবে। আপনারা লেজিমিটিসি ক্রাইসিসে যেন না ভোগেন, এর জন্য চতুর্থ তফসিলে আপনাদেরকে বিধান করে স্থান দিতে হবে, যেন ভবিষ্যতে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন না হন। তার জন্যও নির্বাচিত সংসদ দরকার,’ বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সংসদ নির্বাচন দিতে দেরি করলে তার যৌক্তিকতা জনগণের সামনে তুলে ধরবেন। আপনারা কি যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন? আপনারা কি আমদের বক্তব্য কানে তোলেন? এখনো সময় আছে, আমি মনে করি সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রদান করুন। সেই রোডম্যাপ জনগণের সামনে আনুন, সেই রোডম্যাপ যদি যৌক্তিক হয় জনগণ মেনে নেবে।’
‘আমরা বলেছি জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব। তার আগেও ইনফ্যাক্ট নির্বাচন সম্ভব। আমরা কিছু আইনি সংস্কার করে, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করে, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার করে আমরা নির্বাচনে যেতে চাই। কেউ কেউ বলছেন সংস্কার প্রথমে, তারপর নির্বাচন। কেউ কেউ বলছেন নির্বাচন প্রথমে, সংস্কার পরে। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝির কোনো সুযোগ নেই। সংস্কার একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, চলমান প্রক্রিয়া, আজীবন সংস্কার করে যেতে হবে। সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দেব, এই বক্তব্য সঠিক নয়,’ বলেন তিনি।
সালাহউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্কার, আইনি সংস্কার, আরপিওতে সংশোধনী প্রয়োজন আছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ, বিচার বিভাগ ও প্রশাসন কিছু সংস্কার ও সংশোধনীর প্রয়োজন আছে। এসব করে নিরপেক্ষ ভূমিকা রেখে নির্বাচনের আয়োজন করুন। আমরা নির্বাচন নিয়ে বেশি কথা বললে, কোনো মহল থেকে বলা হয় এত নির্বাচন নির্বাচন করেন কেন? আচ্ছা নির্বাচন নির্বাচন না করে কী করব, এটি আপনারাই বলে দেন।’