ঢাকা ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

পাঠ্যবইয়ে গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে নেই আ.লীগ-হাসিনার নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১১:৪৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • / ১৩৪ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

অন্তবর্তী সরকারের  এই সময়েও থেমে নেই পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্ক। আদিবাসী শব্দ নিয়ে বিতর্ক শুরু। যা সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। এখনো চলছে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ।  পাঠ্যবইয়ে নতুন অনেক পরিবর্তন আনা হলেও কিছু ভুল তথ্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।  প্রশ্ন উঠেছে জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থান নিয়ে নতুন বইয়ে সংযুক্ত করা ইতিহাসে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নাম না রাখা নিয়ে।

গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নতুন বইয়ে বলা হয়েছে, ‘আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এক দফা দাবি পেশ করেছে। সারাদেশ থেকে মানুষ ঢাকায় ছুটছে।’ কিন্তু এই অংশে আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার নাম না থাকায়, অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। সেক্ষেত্রে, পরিমার্জন কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নাম অষ্টম শ্রেণির বইয়ে রয়েছে, কিন্তু অন্যান্য বইয়ে না থাকার কারণ হল, বইয়ে এমন কোন পঠনযোগ্য ব্যাখ্যা রাখা হয়নি যা ন্যায্য মনে হয়েছে।’

এছাড়া, সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ের একটি কবিতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনা দেখা গেছে। ‘সিঁথি’ নামের ওই কবিতায় ব্যবহৃত ভাষা নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বইয়ের শব্দ চয়ন এবং বাক্য নির্মাণ নিয়ে কেউ কেউ বলছেন, এটি মানসম্পন্ন নয়। তবে পরিমার্জন কমিটির সদস্য সাজ্জাদুর রহমান জানিয়েছেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সবকিছু ঠিকঠাক করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, নতুন বইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দটি নিয়ে যে গ্রাফিতি ছিল, তা নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামক সংগঠনটি এই গ্রাফিতির বিরোধিতা করেছিল, এবং তাদের আন্দোলনের পর সেটি সংশোধন করে নতুন গ্রাফিতি যোগ করা হয়। পরে, আদিবাসী জনগণের পক্ষ থেকে এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়, এবং একটি সংঘর্ষ ঘটে, যেখানে বেশ কয়েকজন আহত হন।

এছাড়া, বইয়ে রাজনৈতিক বয়ান নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন বইয়ে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কে দেওয়া তথ্য নিয়ে বিএনপি দলের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। বইয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘সাবেক সেনাপ্রধান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাদের দাবি অনুযায়ী ভুল ছিল। এই নিয়ে এনসিটিবি সংশোধন করেছে, কিন্তু বিতর্ক থামেনি।

এই সমস্ত বিতর্কের পর এনসিটিবি অবশ্য বইয়ের কিছু অনলাইন সংস্করণে সংশোধন এনেছে। কিন্তু যেসব বই ছাপা হয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে চলে গেছে, সেগুলোতে পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, শিক্ষকরা বলেছেন— এসব বিতর্ক থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জন আরও সতর্কতার সঙ্গে করা উচিৎ ছিল। তারা বলছেন, পাঠ্যবইতে নিরপেক্ষ এবং সঠিক ইতিহাস উপস্থাপন করা প্রয়োজন, যেন শিশুরা সঠিক তথ্য পায়।

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বই লেখা উচিৎ। না হলে প্রতি বছর নতুন সরকার তার মতাদর্শ চাপিয়ে দেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।’

এদিকে, এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, ‘আমরা কখনোই রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতিত্ব করার উদ্দেশ্যে বইগুলো পরিমার্জন করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেসব বিষয়ে বিতর্ক উঠেছে, সেগুলো আমরা সংশোধন করেছি। তবে বিতর্ক থেকে সংঘর্ষ এড়ানোর চেষ্টা করা জরুরি।’ সূত্র: বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পাঠ্যবইয়ে গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসে নেই আ.লীগ-হাসিনার নাম

আপডেট সময় : ১১:৪৮:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫

 

অন্তবর্তী সরকারের  এই সময়েও থেমে নেই পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্ক। আদিবাসী শব্দ নিয়ে বিতর্ক শুরু। যা সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। এখনো চলছে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ।  পাঠ্যবইয়ে নতুন অনেক পরিবর্তন আনা হলেও কিছু ভুল তথ্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।  প্রশ্ন উঠেছে জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থান নিয়ে নতুন বইয়ে সংযুক্ত করা ইতিহাসে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার নাম না রাখা নিয়ে।

গণঅভ্যুত্থান নিয়ে নতুন বইয়ে বলা হয়েছে, ‘আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা এক দফা দাবি পেশ করেছে। সারাদেশ থেকে মানুষ ঢাকায় ছুটছে।’ কিন্তু এই অংশে আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার নাম না থাকায়, অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। সেক্ষেত্রে, পরিমার্জন কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের নাম অষ্টম শ্রেণির বইয়ে রয়েছে, কিন্তু অন্যান্য বইয়ে না থাকার কারণ হল, বইয়ে এমন কোন পঠনযোগ্য ব্যাখ্যা রাখা হয়নি যা ন্যায্য মনে হয়েছে।’

এছাড়া, সপ্তম শ্রেণির বাংলা বইয়ের একটি কবিতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনা দেখা গেছে। ‘সিঁথি’ নামের ওই কবিতায় ব্যবহৃত ভাষা নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বইয়ের শব্দ চয়ন এবং বাক্য নির্মাণ নিয়ে কেউ কেউ বলছেন, এটি মানসম্পন্ন নয়। তবে পরিমার্জন কমিটির সদস্য সাজ্জাদুর রহমান জানিয়েছেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সবকিছু ঠিকঠাক করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, নতুন বইয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দটি নিয়ে যে গ্রাফিতি ছিল, তা নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামক সংগঠনটি এই গ্রাফিতির বিরোধিতা করেছিল, এবং তাদের আন্দোলনের পর সেটি সংশোধন করে নতুন গ্রাফিতি যোগ করা হয়। পরে, আদিবাসী জনগণের পক্ষ থেকে এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়, এবং একটি সংঘর্ষ ঘটে, যেখানে বেশ কয়েকজন আহত হন।

এছাড়া, বইয়ে রাজনৈতিক বয়ান নিয়েও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। নতুন বইয়ে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কে দেওয়া তথ্য নিয়ে বিএনপি দলের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। বইয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘সাবেক সেনাপ্রধান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাদের দাবি অনুযায়ী ভুল ছিল। এই নিয়ে এনসিটিবি সংশোধন করেছে, কিন্তু বিতর্ক থামেনি।

এই সমস্ত বিতর্কের পর এনসিটিবি অবশ্য বইয়ের কিছু অনলাইন সংস্করণে সংশোধন এনেছে। কিন্তু যেসব বই ছাপা হয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে চলে গেছে, সেগুলোতে পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, শিক্ষকরা বলেছেন— এসব বিতর্ক থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জন আরও সতর্কতার সঙ্গে করা উচিৎ ছিল। তারা বলছেন, পাঠ্যবইতে নিরপেক্ষ এবং সঠিক ইতিহাস উপস্থাপন করা প্রয়োজন, যেন শিশুরা সঠিক তথ্য পায়।

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বই লেখা উচিৎ। না হলে প্রতি বছর নতুন সরকার তার মতাদর্শ চাপিয়ে দেবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।’

এদিকে, এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, ‘আমরা কখনোই রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতিত্ব করার উদ্দেশ্যে বইগুলো পরিমার্জন করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেসব বিষয়ে বিতর্ক উঠেছে, সেগুলো আমরা সংশোধন করেছি। তবে বিতর্ক থেকে সংঘর্ষ এড়ানোর চেষ্টা করা জরুরি।’ সূত্র: বিবিসি