ড.মোমেনই হলেন দুদকের নতুন চেয়ারম্যান

- আপডেট সময় : ০৮:৫৩:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ২০২ বার পড়া হয়েছে
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন সদ্য পদত্যাগ করা সিনিয়র সচিব ড.আবদুল মোমেন। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন দুদক চেয়ারম্যান হিসেবে তার নিযুক্তি অনুমোদন করেছেন। প্রশাসনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কমিশনের অপর দুজন সদস্য হচ্ছেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিয়া আলী আকবর আজিজি ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ। এখন অপেক্ষা শুধু সরকার কতৃক নিয়োগ প্রজ্ঞাপনের।
এর আগে গত ২৯ অক্টোবর দুদকের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং দুই কমিশনার (তদন্ত) মো.জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা.আছিয়া খাতুন। এর পর থেকে দুদকের চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার পদ খালি ছিল।
ড. এম এ মোমেন একদিন আগে সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের পদ থেকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্র গৃহিত হলে দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগের জন্য ফাইল রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠানো হয়। গতকাল সকালেই সেটি অনুমোদন করা হয়।
গত ৮ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, গত ১৭ আগস্ট জ্যেষ্ঠ সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর গত ১ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
সর্বদলীয় আমলা হিসাবে খ্যাতি পাওয়া আবদুল মোমেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ওই সময় তার বিরুদ্ধে দূনীর্তির বিশাল অভিযোগ উঠেছিলো। বাংলাদেশ বিমানের এযাবৎকালের সবচেয়ে মহাদুর্নীতিবাজ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শিরোনামে ছিলেন ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি ছিলেন সর্বদলীয় আমলা। রাজনৈতিক দল থেকে তত্ত্বাবধায়ক, এমন কি স্বৈরাচার এরশাদের সময়ও তিনি ছিলেন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে। এ কারণে তাকে প্রশাসনে সর্বদলীয় আমলাও বলা হয়ে থাকে।
তবে মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন তুমুল আলোচনায় আসেন বিমানের এমডি হওয়ার পর। বিমানে তিনি দুর্নীতির যে রেকর্ড গড়েছেন তা আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।
জানা গেছে, এমএ মোমেন বিসিএস ৮২ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসনে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে বগুড়ায় সহকারী কমিশনার হিসেবে তার মাঠ প্রশাসনে যাত্রা শুরু। ২০১৩ সালে তিনি অবসরে যান। তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মাধ্যমে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহন করে।
ড.ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসন সামলাতে তাকেই এবার দক্ষ ও যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়েছে। যদিও ড. মোমেন চাকরি জীবনের তার অতীত রেকর্ড খুব একটা ভালো না। তার অতীত বলছে তিনি ছিলেন মহা দুর্নীতিবাজ, অদক্ষ ও অযোগ্য একজন আমলা। দুর্নীতি ছাড়া কোনো দপ্তরেই তিনি দক্ষতার প্রমাণ রাখতে পারেননি।
২০০৬ সালের ১৪ মার্চ ড. আবদুল মোমেন বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পেষণে নিয়োগ লাভ করেন। একই পদ থেকে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন। এর আগে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব, রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব, ঢাকার জেলা প্রশাসক, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ড-ডিটিসিবি’র নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটি-বিএরটিএ’র চেয়ারম্যানসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
চাকরি জীবনে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও বিমানের এমডি থাকা অবস্থায় তিনি যে অনিয়ম করেন, সেটি এযাবৎকালের সবচেয়ে মহা অনিয়ম। ২০০৬ সালের অক্টোবরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪ পরিচালক ও ২ মহাব্যবস্থাপককে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের মধ্য দিয়ে তিনি তার ক্ষমতার অপপ্রয়োগ শুরু করেন।
অভিযোগ রয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের দেয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তিনি বিমানে ব্যাপক রদবদল করেছেন। সে সময় ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েক ধাপে প্রায় ২৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কোনো প্রকার কারণ ছাড়াই, ২৫ বছর উত্তীর্ণদের বাধ্যতামূলক অবসর ও ২৫ বছরের কম চাকরিজীবীদের ছাটাই করেন। ফলে ২৪ বছর চাকরি করেও অনেককে বিমান থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়। কারণ হিসেবে সে সময় তিনি বিমান থেকে অতিরিক্ত জনবল কমানোর কথা বললেও বাস্তবিক অর্থে সে সময় বিমানে অতিরিক্ত জনবল ছিল না। সর্বস্তরে ২১৭৭জনকে চাকরিচ্যূত করে নতুন লোকবল নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।
তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে গঠিত ওই তদন্ত কমিটি ২০০৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর ড. মোমেনের বিরুদ্ধে ৪৭ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে।
ওই প্রতিবেদনে বিমানের বিশাল অঙ্কের অর্থ লোপাট, অনিয়ম- অব্যবস্থাপনা, ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে বিমানের নতুন রুট চালুসহ ৯টি বিষয়ে বিস্তর অনিয়মে ড.মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়।