নির্বাচনের পরেই দায়িত্ব ছাড়তে চান রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন
- আপডেট সময় : ০৯:১৫:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ৪০ বার পড়া হয়েছে
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাষ্ট্রপতি হওয়া সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তী সরকারের পুরোটা সময় দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ২০২৩ সালে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সাহাবুদ্দিন সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তবে এই পদটি মূলত আনুষ্ঠানিক এবং দেশটির কার্যনির্বাহী ক্ষমতা মূলত প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রিসভার কাছেই থাকে।
কিন্তু ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দীর্ঘদিন ক্ষমতা আকড়ে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যূত হয়ে ভারতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর সাহাবুদ্দিনই তখন শেষ অবশিষ্ট সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ ছিলেন। রাষ্ট্রপতিকে অক্ষত রেখেই দেশে তৈরি হয় ড.ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। তখন থেকে গত পনের মাস দেশ পরিচালিত হয়ে আসছে। নানা সংকট উতরায়ে অবশেষে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলও ঘোষনা করা হয়। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে কাঙ্খিত সেই নির্বাচন। ১২ ফেব্রুয়ারী সংসদ নির্বাচন হলেও রাষ্ট্রপতি আরো দুই বছর দায়িত্ব পালনে সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া না আসতেই আজ রাষ্ট্রপতি রয়ার্টার্সে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়ে দিয়েছেন তিনিও নির্বাচনের পর নিজের দায়িত্ব আর লম্বা করতে চান না।
যদিও তার এমন সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপর দোষ চাপালেন। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) তিনি সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে বলেন, নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে তিনি অপমানিত বোধ করছেন।
তিনি বলেন, আমি চলে যেতে আগ্রহী। আমি বেরিয়ে যেতে চাই। ঢাকার সরকারি বাসভবন থেকে হোয়াটসঅ্যাপে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন—এটাই দায়িত্ব গ্রহণের পর তার প্রথম গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার।
রাষ্ট্রপতি বলেন, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমার থাকা উচিত। আমি এই পদটি ধরে আছি সাংবিধানিক কারণে। রাষ্ট্রপতি জানান, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস প্রায় সাত মাস ধরে তার সঙ্গে দেখা করেননি, প্রেস বিভাগ কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং গত সেপ্টেম্বরে বিশ্বের সব বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে তার প্রতিকৃতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, সব কনস্যুলেট, দূতাবাস ও হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতির প্রতিকৃতি ছিল, আর এক রাতের মধ্যে হঠাৎ সব সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যায় যে,সম্ভবত রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দেওয়া হবে। আমি ভীষণ অপমানিত বোধ করেছি।
সাহাবুদ্দিন বলেন, প্রতিকৃতি নিয়ে তিনি ইউনূসকে চিঠিও দিয়েছেন, তবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমার কণ্ঠ রুদ্ধ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে ইউনূসের প্রেস উপদেষ্টারা মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।
রাষ্ট্রপতি জানান, তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে। সাহাবুদ্দিন বলেন, ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট করে জানিয়েছিলেন যে তিনি ক্ষমতা দখলের কোনো পরিকল্পনা করেন না। বাংলাদেশে সামরিক শাসনের ইতিহাস আছে, তবে সেনাপ্রধান বলেছেন তিনি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চান।
সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, যদিও কিছু ছাত্র বিক্ষোভকারীরা প্রথমদিকে তার পদত্যাগ দাবি করেছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কোনো রাজনৈতিক দল আর তার পদত্যাগ দাবি করেনি।
বিভিন্ন জনমত জরিপ ইঙ্গিত দেয় যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামী পরবর্তী সরকার গঠনে এগিয়ে থাকবে।
শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন কি না—এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সাহাবুদ্দিন উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর থেকে তিনি স্বাধীন ছিলেন। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আর যুক্ত নন।
সূত্র: রয়টার্স



















