ঢাকা ০৯:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

গরম ও উচ্চতা ২০২৬ বিশ্বকাপের বড় চ্যালেঞ্জ

ক্রীড়া ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৫৮:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ৪২ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের জুন-জুলাইতে যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা ও মেক্সিকোতে হতে যাচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪৮টি দল নিয়ে শুরু হতে যাওয়া মেগা এই টুর্নামেন্টের ড্রও গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমন কি ম্যাচের সূচিও প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বকাপ মানেই কঠিন চ্যালেঞ্জ। এখানে ছোট-বড় প্রতিটি দল প্রতিটি দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠে। তবে এবারের বিশ্বকাপে তারচেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে গরম ও উচ্চতা। যা কিনা দলগুলোকে এখনিই ভাবিয়ে তুলছে। তিন দেশ আয়োজক হওয়ায় থাকছে যাতায়াতের ধাক্কা।

এরপর আমেরিকায় থাকছে তীব্র গরম আর মেক্সিকোর উচ্চতা। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে মাঠের উচ্চতা ২২০০ মিটার উচুতে। উচু এলাকাগুলোতে হিউমিনিটি অনেক কম। যা কিনা প্রত্যেক দলের ফুটবলারদের জন্য বাড়তি চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রে তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩৩-৩৫ ডিগি। সেখানে আবার ঘনঘন বৃষ্টিও হতে পারে তবে স্টেডিয়ামে ছাদ ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় কিছুটা সুবিধা হতে পারে।

এরপর যাতায়াত সমস্যা তো থাকছেই। আটালান্টায় এক সপ্তাহ থাকার পর স্পেন যাবে মেক্সিকোর গুয়াদালারারাতে, যা ২৮০০ কিলোমিটার দূর এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের থেকে ১৭০০ মিটার উঁচুতে। আলাদা টাইম জোন, হালকা বাতাস এবং পুরোপুরি উপক্রান্তীয় জলবায়ু। সেটা ভেবেই ফুয়েন্তে বলেছেন, “আমার সবচেয়ে চিন্তা ম্যাচের মাঝে যাতায়াত নিয়ে। তিন-চার দিন অন্তর হাজার হাজার কিলোমিটার যাত্রা করতে হবে আমাদের।”

সৌদি আরব ম্যাচ খেলার পরই মেক্সিকো যেতে হবে স্পেনকে। যাতায়াতের সময় বাদ দিয়েও অনুশীলনের জন্য মাত্র তিন দিন থাকবে তাদের হাতে। মার্সেলো বিয়েলসার প্রশিক্ষণাধীন উরুগুয়ের বিরুদ্ধে গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ খেলতে হবে তাদের। সন্ধ্যায় ম্যাচ হওয়ায় গরম থেকে বাঁচবে তারা। তবে এই সময়ই বাতাস হালকা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা হারবে, তাদের রাউন্ড অফ ৩২-এর ম্যাচ খেলতে আবার আমেরিকার মায়ামিতে যেতে হবে।

বোঝাই গিয়েছে, বিশ্বকাপ জিততে গেলে শুধু মাঠের নয়, মাঠের বাইরের সমস্যাগুলোকেও জয় করে নিতে হবে। যে সব দেশগুলোকে মেক্সিকোয় খেলতে হবে তাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। মেক্সিকোর তিনটি মাঠে খেলা হবে। তিনটি মাঠেরই আলাদা আলাদা চরিত্র। সবচেয়ে কঠিন রাজধানীর অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামে খেলা। এই মাঠেই ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোল করেছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। এই মাঠ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ মিটার উচ্চতায়। নতুন করে সাজানোর আগে মেক্সিকো সব হোম ম্যাচ খেলত এই মাঠেই। গত পাঁচ দশকে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে এই মাঠে মাত্র দু’টি ম্যাচ হেরেছে মেক্সিকো। বাতাস হালকা হওয়ার কারণে বল মাঝেসাঝেই অস্বাভাবিক বাঁক নেয়। আমেরিকার গোলকিপার টিম হাওয়ার্ড এই মাঠে ফুটবলকে তুলনা করেছিলেন ‘সসার’-এর সঙ্গে। তার কথায়, “যে কোনও গোলকিপারের পক্ষে এ ধরনের মাঠে খেলা কঠিন।” পরিবেশও উত্তপ্ত থাকে।

মেক্সিকোর তৃতীয় মাঠ মন্টেরে অতটা উঁচুতে নয়। তবে সেই মাঠ আমেরিকা-মেক্সিকোর সীমান্তে অবস্থিত। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গরম এই মাঠেই থাকবে। মন্টেরেতে খুব একটা বৃষ্টি হয় না। বিশ্বকাপের সময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে। তাপপ্রবাহও দেখা যেতে পারে।

সবচেয়ে সুবিধা পাওয়া যাবে কানাডায়। সে দেশের দু’টি মাঠ ভ্যাঙ্কুভার এবং টরন্টো কম উচ্চতায় অবস্থিত। খুব গরম বা বৃষ্টি কোনোটিই হয় না। আমেরিকার ১২টির মধ্যে ১১টি মাঠেই ছাদ ঢাকার ব্যবস্থা আছে। ফলে সেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বাকি মাঠগুলোতে গরম নির্ভর করছে কোন সময়ে খেলা হচ্ছে তার ওপর। যদি দুপুরে খেলা হয় এবং সেখানে ইউরোপের কোনো দেশ খেলে, তা হলে কাজ সবচেয়ে কঠিন। আমেরিকার পশ্চিম সান ফ্রান্সিসকোতে গরম হলেও আর্দ্রতা কম থাকবে। ক্লাব বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখে যদি আন্দাজ পাওয়া যায়, তা হলে কোচেদের চিন্তা বাড়তে বাধ্য। ইংল্যান্ডের কোচ টমাস টুখেল তো বলেই দিয়েছেন, পরিবর্ত খেলোয়াড়দের ডাগআউটে বসতেই দেবেন না। তাদের স্টেডিয়ামের ভেতরে রাখা হবে, যাতে ঘেমে নেয়ে আগেই ক্লান্ত না হয়ে যান কেউ। ইংল্যান্ড অবশ্য বোস্টন এবং নিউইয়র্কের মতো আরামপ্রদ শহরে খেলবে।

বিশ্বকাপে ব্রাজিল প্রথম ম্যাচ খেলবে নিউইয়র্কে। সেখান থেকে যাবে ১৩০ কিলোমিটার দূরের ফিলাডেলফিয়ায়। শেষ ম্যাচ খেলবে আরও ১,৯২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যাবে মায়ামিতে। আর্জেন্টিনা গ্রুপে প্রথম ম্যাচটি খেলবে কানসাসে। পরের দু’টি ম্যাচ খেলবে ডালাসে। ফলে মাত্র ৭৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে কেপ ভার্দেকে (৪,৭০০ কিলোমিটার)। এরপরই রয়েছে উরুগুয়ে (৪,৫০০) এবং স্কটল্যান্ড (৪,২০০)। ভাগ্যবান নরওয়ে। তারা তিনটি ম্যাচ খেলতে মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। ফ্রান্সও ফিলাডেলফিয়া, নিউইয়র্ক এবং বস্টনের মধ্যেই ঘোরাফেরা করবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গরম ও উচ্চতা ২০২৬ বিশ্বকাপের বড় চ্যালেঞ্জ

আপডেট সময় : ১০:৫৮:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের জুন-জুলাইতে যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা ও মেক্সিকোতে হতে যাচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪৮টি দল নিয়ে শুরু হতে যাওয়া মেগা এই টুর্নামেন্টের ড্রও গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমন কি ম্যাচের সূচিও প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বকাপ মানেই কঠিন চ্যালেঞ্জ। এখানে ছোট-বড় প্রতিটি দল প্রতিটি দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠে। তবে এবারের বিশ্বকাপে তারচেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে গরম ও উচ্চতা। যা কিনা দলগুলোকে এখনিই ভাবিয়ে তুলছে। তিন দেশ আয়োজক হওয়ায় থাকছে যাতায়াতের ধাক্কা।

এরপর আমেরিকায় থাকছে তীব্র গরম আর মেক্সিকোর উচ্চতা। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে মাঠের উচ্চতা ২২০০ মিটার উচুতে। উচু এলাকাগুলোতে হিউমিনিটি অনেক কম। যা কিনা প্রত্যেক দলের ফুটবলারদের জন্য বাড়তি চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রে তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩৩-৩৫ ডিগি। সেখানে আবার ঘনঘন বৃষ্টিও হতে পারে তবে স্টেডিয়ামে ছাদ ঢাকা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় কিছুটা সুবিধা হতে পারে।

এরপর যাতায়াত সমস্যা তো থাকছেই। আটালান্টায় এক সপ্তাহ থাকার পর স্পেন যাবে মেক্সিকোর গুয়াদালারারাতে, যা ২৮০০ কিলোমিটার দূর এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের থেকে ১৭০০ মিটার উঁচুতে। আলাদা টাইম জোন, হালকা বাতাস এবং পুরোপুরি উপক্রান্তীয় জলবায়ু। সেটা ভেবেই ফুয়েন্তে বলেছেন, “আমার সবচেয়ে চিন্তা ম্যাচের মাঝে যাতায়াত নিয়ে। তিন-চার দিন অন্তর হাজার হাজার কিলোমিটার যাত্রা করতে হবে আমাদের।”

সৌদি আরব ম্যাচ খেলার পরই মেক্সিকো যেতে হবে স্পেনকে। যাতায়াতের সময় বাদ দিয়েও অনুশীলনের জন্য মাত্র তিন দিন থাকবে তাদের হাতে। মার্সেলো বিয়েলসার প্রশিক্ষণাধীন উরুগুয়ের বিরুদ্ধে গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ খেলতে হবে তাদের। সন্ধ্যায় ম্যাচ হওয়ায় গরম থেকে বাঁচবে তারা। তবে এই সময়ই বাতাস হালকা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা হারবে, তাদের রাউন্ড অফ ৩২-এর ম্যাচ খেলতে আবার আমেরিকার মায়ামিতে যেতে হবে।

বোঝাই গিয়েছে, বিশ্বকাপ জিততে গেলে শুধু মাঠের নয়, মাঠের বাইরের সমস্যাগুলোকেও জয় করে নিতে হবে। যে সব দেশগুলোকে মেক্সিকোয় খেলতে হবে তাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। মেক্সিকোর তিনটি মাঠে খেলা হবে। তিনটি মাঠেরই আলাদা আলাদা চরিত্র। সবচেয়ে কঠিন রাজধানীর অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামে খেলা। এই মাঠেই ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোল করেছিলেন দিয়েগো ম্যারাডোনা। এই মাঠ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ মিটার উচ্চতায়। নতুন করে সাজানোর আগে মেক্সিকো সব হোম ম্যাচ খেলত এই মাঠেই। গত পাঁচ দশকে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে এই মাঠে মাত্র দু’টি ম্যাচ হেরেছে মেক্সিকো। বাতাস হালকা হওয়ার কারণে বল মাঝেসাঝেই অস্বাভাবিক বাঁক নেয়। আমেরিকার গোলকিপার টিম হাওয়ার্ড এই মাঠে ফুটবলকে তুলনা করেছিলেন ‘সসার’-এর সঙ্গে। তার কথায়, “যে কোনও গোলকিপারের পক্ষে এ ধরনের মাঠে খেলা কঠিন।” পরিবেশও উত্তপ্ত থাকে।

মেক্সিকোর তৃতীয় মাঠ মন্টেরে অতটা উঁচুতে নয়। তবে সেই মাঠ আমেরিকা-মেক্সিকোর সীমান্তে অবস্থিত। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গরম এই মাঠেই থাকবে। মন্টেরেতে খুব একটা বৃষ্টি হয় না। বিশ্বকাপের সময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে পৌঁছাতে পারে। তাপপ্রবাহও দেখা যেতে পারে।

সবচেয়ে সুবিধা পাওয়া যাবে কানাডায়। সে দেশের দু’টি মাঠ ভ্যাঙ্কুভার এবং টরন্টো কম উচ্চতায় অবস্থিত। খুব গরম বা বৃষ্টি কোনোটিই হয় না। আমেরিকার ১২টির মধ্যে ১১টি মাঠেই ছাদ ঢাকার ব্যবস্থা আছে। ফলে সেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। বাকি মাঠগুলোতে গরম নির্ভর করছে কোন সময়ে খেলা হচ্ছে তার ওপর। যদি দুপুরে খেলা হয় এবং সেখানে ইউরোপের কোনো দেশ খেলে, তা হলে কাজ সবচেয়ে কঠিন। আমেরিকার পশ্চিম সান ফ্রান্সিসকোতে গরম হলেও আর্দ্রতা কম থাকবে। ক্লাব বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখে যদি আন্দাজ পাওয়া যায়, তা হলে কোচেদের চিন্তা বাড়তে বাধ্য। ইংল্যান্ডের কোচ টমাস টুখেল তো বলেই দিয়েছেন, পরিবর্ত খেলোয়াড়দের ডাগআউটে বসতেই দেবেন না। তাদের স্টেডিয়ামের ভেতরে রাখা হবে, যাতে ঘেমে নেয়ে আগেই ক্লান্ত না হয়ে যান কেউ। ইংল্যান্ড অবশ্য বোস্টন এবং নিউইয়র্কের মতো আরামপ্রদ শহরে খেলবে।

বিশ্বকাপে ব্রাজিল প্রথম ম্যাচ খেলবে নিউইয়র্কে। সেখান থেকে যাবে ১৩০ কিলোমিটার দূরের ফিলাডেলফিয়ায়। শেষ ম্যাচ খেলবে আরও ১,৯২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যাবে মায়ামিতে। আর্জেন্টিনা গ্রুপে প্রথম ম্যাচটি খেলবে কানসাসে। পরের দু’টি ম্যাচ খেলবে ডালাসে। ফলে মাত্র ৭৪২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে কেপ ভার্দেকে (৪,৭০০ কিলোমিটার)। এরপরই রয়েছে উরুগুয়ে (৪,৫০০) এবং স্কটল্যান্ড (৪,২০০)। ভাগ্যবান নরওয়ে। তারা তিনটি ম্যাচ খেলতে মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। ফ্রান্সও ফিলাডেলফিয়া, নিউইয়র্ক এবং বস্টনের মধ্যেই ঘোরাফেরা করবে।