শেখ হাসিনার হয়ে মামলায় লড়তে রাজি নন পান্না
- আপডেট সময় : ০৮:৩৫:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ৫৯ বার পড়া হয়েছে
ক্ষমতাচ্যূত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হয়ে মামলায় আর লড়তে চান না বলে ট্রাইবুন্যালের প্রশ্নের উত্তরে জানালেন সিনিয়র আইন জীবি জেড এ খান পান্না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনীত মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় পান্না ছিলেন আসামী পক্ষের আইনজীবি। কিন্তু শেখ হাসিনার মামলার শুনানিতে তিনি উপস্থিত না থাকায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
ট্রাইব্যুনাল জানতে চেয়েছেন অফিসিয়ালি নিয়োগ পাওয়ার পরেও পান্না সাহেব আসেন নি কেন? যদি অনাগ্রহী হন তাহলে তো ট্রাইব্যুনালে এসে জানাতে হবে। এ সময় তাকে দেয়া চিঠি দেখতে চান ট্রাইব্যুনাল। পরে চিঠি দেখে ট্রাইব্যুনাল মন্তব্য করেন ‘আইন-টাইন জানে না কিছু।’ পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনাল পান্না সাহেবকে ফোন করে আনতে কিংবা লোক পাঠিয়ে আনার ব্যবস্থার কথা বলা হয়।
এর মধ্যেই ১২টা ৩৩ মিনিটে হুইলচেয়ারে করে এজলাসকক্ষে ঢোকেন জেডআই খান পান্না। তার সঙ্গে জুনিয়র আইনজীবীরাও ছিলেন। ঢুকতেই তার শারীরিক খোঁজখবর নেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান।
সেখানে পান্নার সাথে কুশল বিনিময় হয়। এবং জানতে চাওয়া হয় তার শারিরিক অবস্থা। নিচে তার সঙ্গে কথোপকথন তুলে ধরা হলা…
ট্রাইব্যুনাল : আপনি সুস্থ আছেন?
পান্না : না।
ট্রাইব্যুনাল : আপনি (শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে) নিয়োগ পেয়েছেন।
পান্না : না।
ট্রাইব্যুনাল : এখানেই তো ছিলেন ওই দিন।
পান্না : আদেশগতভাবে পেয়েছি।
ট্রাইব্যুনাল : চিঠি পেয়েছেন?
পান্না : না।
ট্রাইব্যুনাল : দেট ইজ দ্য অর্ডার ট্রাইব্যুনাল।
পান্না : আমি ফিজিক্যালি আনফিট। চিঠি দেওয়ায় আজ আসিনি।
ট্রাইব্যুনাল : আপনার অনুপস্থিতিতে শুনানি হয় না। তবু হয়েছে। আবার হবে। আপনি না পারলে আদালতে প্রতিনিধি পাঠাতেন। আপনার মতো সিনিয়র আইনজীবী দু-তিনজন আছেন। আসামিও আসবে না। আইনজীবী নিয়োগ দিলে সমালোচনা হবে। আমরা কী করবো। একইসঙ্গে ভিডিও বার্তায় দেওয়া পান্নার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি ট্রাইব্যুনাল নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এটা কি আপনি বলতে পারেন। আপনি বলেছেন যে আপনার ক্লায়েন্ট (শেখ হাসিনা) এই ট্রাইব্যুনাল মানেন না। এজন্য আপনিও মানেন না। আপনি নিজেই আইনজীবী হওয়ার আবেদন করেছেন।
জবাবে পান্না বলেন, আমি আনকন্ডিশনালি অ্যাপোলজি চাই।
একপর্যায়ে ফের তার কাছে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে লড়ার কথা জানতে চাওয়া হয়। ট্রাইব্যুনাল বলেন, তাহলে কি আপনি করবেন না। জবাবে না সম্বোধন করেন পান্না। তখন তার কাছে সহায়তা পাওয়ার প্রত্যাশা করে অন্য কাকে নিয়োগ দেওয়া যায়; সেজন্য মতামত চাওয়া হয়। তখনও না জবাব দেন শেখ হাসিনরা হয়ে লড়তে চাওয়া এই আইনজীবী। পরে আমির হোসেনকে শেখ হাসিনার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ সময় আমির হোসেনের আপত্তি আছে কিনা জানতে চান চেয়ারম্যান।
ট্রাইব্যুনাল ফিট মনে করলে নিয়োগে নিজের কোনো আপত্তি নেই বলে জানান দেন আমির হোসেন। তিনি জুলাই গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার আরেক মামলায়ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন। এ মামলায় এরই মধ্যে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীসহ আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সাজা পেয়েছেন।
গুমের দুই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে নতুন আইনজীবী নিয়োগের পরই পান্নার ইস্যু ফের সামনে আনেন চিফ প্রসিকিউটর। ভিডিও বার্তায় যেসব কথা বলেছেন; তা আদালত অবমাননার শামিল বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তখন পান্নার উদ্দেশ্যে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আমরা আপনাকে আইডল ভাবি। আপনার কাছ থেকে অনেক শিখেছি। অথচ আপনি বলেছেন যে শেখ হাসিনা এই ট্রাইব্যুনাল মানেন না। এজন্য আপনিও মানবেন না। তাহলে কি ধরে নেবো আপনার সঙ্গে শেখ হাসিনার যোগাযোগ হয়। এই আদালত থেকে কি আপনার ক্লায়েন্ট বড়।
এ সময় চেয়ারম্যান বলেন, আপনি বিচার-বিচারক নিয়ে সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু আইন মানেন না এ কথা বলতে পারেন না। তাহলে আপনি যে আইন মানেন, সেটা কোন দেশের। কারণ এই আইন তো সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত। এটা ৯০ বা ২৪’-এর নয়, ৭২’-এরই সংবিধান। এছাড়া রাজনৈতিক নেতারা যা ইচ্ছে তা-ই বলতে পারেন। এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আইনজীবীদের আইনানুযায়ী কথা বলতে হবে। অতএব ভবিষ্যতে আইন মেনে কথা বলবেন। বিভ্রান্তি করা উচিত নয়।
গত ২৩ নভেম্বর অভিযুক্ত শেখ হাসিনার পক্ষে আইনজীবী হওয়ার জন্য আবেদন করেন জেড আই খান পান্না। পরে তাকে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু আজ বুধবার নির্ধারিত শুনানির দিন ধার্য থাকলেও আসেননি এই আইনজীবী। এজন্যই তাকে ফোনে ডেকে আনা হয়। আর ফোন পেয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে তাৎক্ষণিক হাজির হন তিনি।
টিএফআই সেলে গুমের এ মামলায় ১৭ জনকে আসামি করা হলেও গ্রেপ্তার রয়েছেন ১০ সেনা কর্মকর্তা। তারা হলেন- র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
পলাতকরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।
গত ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য সাতদিনের মধ্যে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত তারিখে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন আদালত। ৮ অক্টোবর এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, প্রথমবার আমি শেখ হাসিনার মামলায় লড়তে চেয়েছিলাম। হাসপাতালে থাকার কারণে ওই সময় আমার এক সহকর্মীকে পাঠিয়েছি। কিন্তু নিয়োগ হয়ে যাওয়ায় আর সুযোগ পাইনি। এজন্য গুমের দুই মামলায় স্বেচ্ছায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর হয়ে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী হওয়ার আবেদন করি। ট্রাইব্যুনালের নিয়োগে আমিও রাজি হই। তবে শারীরিক অসুস্থতা থাকায় তা প্রত্যাহার করেছি।


















