ঢাকা ১১:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নির্বাচনি আচরণবিধি নিয়ে এবার তুলকালাম

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:০২:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৩৯ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নির্বাচনি আচরণ বিধিতে পরিস্কার নির্দেশনা এবং তা বাস্তবায়ন করা জরুরি। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বিষয়টি গুরুত্ব হয়ে উঠছে নির্বাচন কমিশনারের কাছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনি আচরণবিধির নানান অসঙ্গতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তোপের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক বিধান, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিঘ্ন হওয়ার আশংকা, আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতে সক্ষমতা, সদিচ্ছার অভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে দলগুলো।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ আমন্ত্রিত দলগুলোর নেতারা এসব বিষয় তুলে ধরেন।

জামায়াত নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আচরণবিধির ৭-এর ‘ক’ উপধারায় ‘কোন প্রকার পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না’ উল্লেখ থাকার পরও ৭-এর ‘ঘ’ উপধারায় পোস্টারসহ অন্যান্য প্রচারসামগ্রী ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়টি রয়েছে। আগে বলছেন পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না, আবার পোস্টার সরাতে পারবে না- এই কথা বলছেন কেন?

তিনি আরও বলেন, বিধি ভাঙলে শাস্তির কথা বলা আছে। কিন্তু কে দেবে শাস্তি তা উল্লেখ নেই। আচরণবিধিতে বলতে হতো কোর্টটা কে নির্ধারণ করবে? আপনার এই বিধান পড়ে মনে হয় না যে, আপনি যে শাস্তিটা আরোপ করতে চাচ্ছেন, কে শাস্তি আরোপ করবে- এই মর্মে আচরণবিধিতে থাকা উচিত ছিল।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, যারা আচরণবিধি করছেন স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে ভোটের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। আচরণবিধি একটি নিপিড়নমূলক আইনে দাঁড়াবে। বিধিমালা কোথাও লঙ্ঘন হলে তদন্ত কমিটি হবে, অভিযোগ সেখানে দিতে হবে। এখন তদন্ত কারা করবে সেটা বলা নেই। আবার কমিশনের কাছে সরাসরি অভিযোগ দেওয়া যাবে, কমিশন আবার তদন্ত করবে। তাহলে এটা আবার নিচে যাবে। কমিশন প্রার্থিতা বাতিলের প্রক্রিয়া রেখেছে। কিন্তু সেটা কীভাবে, কত দিনের মধ্যে করবে তা উল্লেখ নেই। আমরা যদি অভিযোগ জানাই, সে যদি ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে কী হবে সেই অফিসারের তা কিন্তু আইনে নেই।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এরই মধ্যে হাজার হাজার ফেস্টুন, বিলবোর্ড হয়ে গেছে- এগুলো আপনি অপসারণ করলেন। তারপরে আপনি একজন প্রার্থী যার ওই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য নাই, সক্ষমতা নাই, তাকে আপনি আগে থেকেই অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দিলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আচরণবিধিতে শাস্তির বিধান স্পষ্ট না। যত নিয়মনীতি তৈরি করা হবে, তত তা লঙ্ঘনের প্রবণতা বাড়বে। কাজেই এটা যত সিম্পল করা যায়।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মহাসচিব মোহাম্মদ মমিনুল আমিন বলেন, জোট করলেও নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। অথচ জোট করার মূল উদ্দেশ্যই হলো একটি শক্তিশালী মার্কায় ভোটারদের কাছে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া। আইন করে এই অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না। হঠাৎ করে এই পরিবর্তন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি কৌশল ও প্রস্তুতিতে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করেছে।

অন্যান্য দলের নেতারাও পোস্টার বন্ধ করে বিলবোর্ডের প্রচারের বিধান নিয়ে সমালোচনা করেন। পেশিশক্তি, কালো টাকার প্রভাব রোধের আইনের স্পষ্টতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির মহাসচিব সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের অঙ্গীকারনামায় সুস্পষ্ট ধারা থাকতে হবে যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বা ভীতি প্রদর্শন করলে তাৎক্ষণিক প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।

ইনসানিয়াত বিপ্লবের মহাসচিব শেখ রায়হান রাহবার বলেন, ভোট পদ্ধতি পরিহার করে মোবাইল অ্যাপে বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ পদ্ধতি প্রবর্তনের আবেদন জানাচ্ছি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নির্বাচনি আচরণবিধি নিয়ে এবার তুলকালাম

আপডেট সময় : ০৯:০২:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

নির্বাচনি আচরণ বিধিতে পরিস্কার নির্দেশনা এবং তা বাস্তবায়ন করা জরুরি। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বিষয়টি গুরুত্ব হয়ে উঠছে নির্বাচন কমিশনারের কাছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনি আচরণবিধির নানান অসঙ্গতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তোপের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক বিধান, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিঘ্ন হওয়ার আশংকা, আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতে সক্ষমতা, সদিচ্ছার অভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে দলগুলো।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ আমন্ত্রিত দলগুলোর নেতারা এসব বিষয় তুলে ধরেন।

জামায়াত নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আচরণবিধির ৭-এর ‘ক’ উপধারায় ‘কোন প্রকার পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না’ উল্লেখ থাকার পরও ৭-এর ‘ঘ’ উপধারায় পোস্টারসহ অন্যান্য প্রচারসামগ্রী ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়টি রয়েছে। আগে বলছেন পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না, আবার পোস্টার সরাতে পারবে না- এই কথা বলছেন কেন?

তিনি আরও বলেন, বিধি ভাঙলে শাস্তির কথা বলা আছে। কিন্তু কে দেবে শাস্তি তা উল্লেখ নেই। আচরণবিধিতে বলতে হতো কোর্টটা কে নির্ধারণ করবে? আপনার এই বিধান পড়ে মনে হয় না যে, আপনি যে শাস্তিটা আরোপ করতে চাচ্ছেন, কে শাস্তি আরোপ করবে- এই মর্মে আচরণবিধিতে থাকা উচিত ছিল।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, যারা আচরণবিধি করছেন স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে ভোটের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। আচরণবিধি একটি নিপিড়নমূলক আইনে দাঁড়াবে। বিধিমালা কোথাও লঙ্ঘন হলে তদন্ত কমিটি হবে, অভিযোগ সেখানে দিতে হবে। এখন তদন্ত কারা করবে সেটা বলা নেই। আবার কমিশনের কাছে সরাসরি অভিযোগ দেওয়া যাবে, কমিশন আবার তদন্ত করবে। তাহলে এটা আবার নিচে যাবে। কমিশন প্রার্থিতা বাতিলের প্রক্রিয়া রেখেছে। কিন্তু সেটা কীভাবে, কত দিনের মধ্যে করবে তা উল্লেখ নেই। আমরা যদি অভিযোগ জানাই, সে যদি ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে কী হবে সেই অফিসারের তা কিন্তু আইনে নেই।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এরই মধ্যে হাজার হাজার ফেস্টুন, বিলবোর্ড হয়ে গেছে- এগুলো আপনি অপসারণ করলেন। তারপরে আপনি একজন প্রার্থী যার ওই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য নাই, সক্ষমতা নাই, তাকে আপনি আগে থেকেই অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দিলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, আচরণবিধিতে শাস্তির বিধান স্পষ্ট না। যত নিয়মনীতি তৈরি করা হবে, তত তা লঙ্ঘনের প্রবণতা বাড়বে। কাজেই এটা যত সিম্পল করা যায়।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মহাসচিব মোহাম্মদ মমিনুল আমিন বলেন, জোট করলেও নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। অথচ জোট করার মূল উদ্দেশ্যই হলো একটি শক্তিশালী মার্কায় ভোটারদের কাছে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া। আইন করে এই অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না। হঠাৎ করে এই পরিবর্তন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি কৌশল ও প্রস্তুতিতে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করেছে।

অন্যান্য দলের নেতারাও পোস্টার বন্ধ করে বিলবোর্ডের প্রচারের বিধান নিয়ে সমালোচনা করেন। পেশিশক্তি, কালো টাকার প্রভাব রোধের আইনের স্পষ্টতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির মহাসচিব সুকৃতি কুমার মণ্ডল বলেন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের অঙ্গীকারনামায় সুস্পষ্ট ধারা থাকতে হবে যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বা ভীতি প্রদর্শন করলে তাৎক্ষণিক প্রার্থিতা বাতিল করা হবে।

ইনসানিয়াত বিপ্লবের মহাসচিব শেখ রায়হান রাহবার বলেন, ভোট পদ্ধতি পরিহার করে মোবাইল অ্যাপে বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ পদ্ধতি প্রবর্তনের আবেদন জানাচ্ছি।