ঘটনার সুস্থ্য তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান নারী ক্রিকেট দলের কোচ সারোয়ার ইমরান
- আপডেট সময় : ০৮:৫৮:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫
- / ৬৫ বার পড়া হয়েছে
গত কয়েকদিন ধরে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে উত্তাপ হাওয়া বইছে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা বেগমের ইন্টারভিউ প্রকাশিত হওয়ার পরেই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে হৈ-চৈ পড়ে যায়। ইন্টারভিউতে জাহারা বেগম তৎকালীণ নারী ক্রিকেট দলের কোচ মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে যৌনচারের অভিযোগ তোলেন। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি মিডিয়ায় জাহানারার কন্ঠে উঠে আসে নারী ক্রিকেটারদের উপর নানা ধরণের অত্যাচারের ভয়াবহ অভিযোগ। জাহানারা মুখ খোলার পর যখন আরো কয়েকজন নারী ক্রিকেটার নির্যাতনের বিপক্ষে মুখ খুলেছেন তখন বিষয়টি সবার কাছে বেশ গুরুত্ববহ হয়ে উঠে। প্রতিবাদের ঝড় আসছে সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটার,কোচ ও ক্রিকেট সংগঠকদের কাছ থেকে। সবার একটাই দাবি, নারী ক্রিকেটারদের কন্ঠে উঠে আসা অভিযোগগুলো যেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক্ শাস্তি দেয়া হয়।
আজ রোববার সে দাবি জানিয়েছেন নারী দলের প্রধান কোচ সারোয়ার ইমরান। তিনি বাংলাদেশ অভিষেক টেস্ট দদলের প্রধান কোচ ও ছিলেন। এরপর তার কোচিংয়ে আরও বেশ কয়েকবার জাতীয় দল খেলেছে। সময়ের প্রবাহে তিনি এখন বাংলাদেশের নারী দলের কোচ। এক বছর ধরে সারোয়ার ইমরানই বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের ‘দ্রোণাচার্য্য।’
তার আগে নারী দলে হেড কোচ ছিলেন সাবেক লঙ্কান তারকা ক্রিকেটার হাসান তিলকরত্নে। সারোয়ার ইমরান নারী জাতীয় দলকে কোচিং করাচ্ছেন, ৯ মাস চলছে। সেই ফেব্রুয়ারিতে নারী জাতীয় দলের হেড কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তারও আগে গত বছরের নভেম্বর থেকে কাজ করেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলের সঙ্গে।
তার কোচিংয়ে নারী ক্রিকেট দল এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই বিনা মেঘে বজ্রপাত। সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলমের অভিযোগের তির সাবেক কোচ ও নির্বাচক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর দিকে। তাও যেন তেন অভিযোগ না, রীতিমত যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। জাহানারার সেই অভিযোগের পর গোটা দেশে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়।
গোটা নারী ক্রিকেট অঙ্গনকে যা করেছে কলুষিত। অনেকেরই মনে করছেন, এ ঘটনায় নারী ক্রিকেটের অগ্রযাত্রাও হতে পারে বিঘ্নিত। এ নিয়ে কি ভাবছেন কোচ সারোয়ার ইমরান? এ সব প্রসঙ্গ আসতেই এ বর্ষীয়ান কোচ বলেন, ‘ঘটনাটি তো এখন তদন্তনাধীন। এ সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য না করাই মনে হয় সমীচীন। আর এটা তো এখনও প্রমাণিত হয়নি। অভিযোগ উঠেছে। একজন নারী ক্রিকেটার অভিযোগ করেছে। টিম ম্যানেজমেন্টের একজন দায়িত্বপূর্ণ পদের একজনের বিপক্ষে। তাই আমি এখনই শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে আরেকজনকে দোষী বলে সাব্যস্ত করতে পারি না। একজন অন্যজনের নামে বললো এবং আমি সেই প্রেক্ষিতে বলে দিলাম অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী, তা তো হয় না। আমি চাই একটু সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত। তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে প্রকৃত সত্য। তদন্ত প্রমাণিত হলে অবশ্যই কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’
পরক্ষণেই সারোয়ার ইমরান ক্ষোভের সুরে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি স্তম্ভিত। পুরো ব্যাপারটা আমাকে চরমভাবে হতাশ করেছে। এখানে যারা আমার সঙ্গে কাজ করছে সবাই হার্ট অ্যান্ড সোল ট্রাই করছে নারী ক্রিকেটের উন্নয়নে। সবাই বাংলাদেশি। প্রত্যেকের চেষ্টা আছে। আমিও সবার কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিচ্ছি। সবাই আমাকে সহযোগিতা করছে।’
‘কিন্তু এমন এক ন্যাক্কারজনক ঘটনার খবর আমাকেসহ সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। আমার মনে হয় আমরা নারী জাতীয় দলকে নিয়ে যেভাবে এগুচ্ছিলাম, তা ব্যাহত হবে। আমরা ধীরে ধীরে একটা জায়গায় আসছিলাম। এমন ন্যাক্কারজনক এবং অনভিপ্রেত ঘটনা আমাদের সেই পথচলাকে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এটা নিয়ে আমরা সবাই চিন্তিত। ব্যাপারটাকে আমরা কেউই ভালোভাবে নিচ্ছি না। আমরা নিজেদের মধ্যে বসে কথা বলেছি। এটা আমাদের নারী ক্রিকেটের অগ্রযাত্রাকে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ঘটনার যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত। দোষী ব্যক্তির যে শাস্তি প্রাপ্য, সেই শাস্তি পাওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ ইমরান আরো বলেন, ‘এটা লজ্জার। ঘৃণার এবং রীতিমত কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেটা কোনো বিবেকবান মানুষ সমর্থন করতে পারে না। আমার করার প্রশ্নই আসে না। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।’
তবে এ সংক্রান্ত কোন বিচার কি বর্তমান কোচের কাছে এসেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, না। আমার কাছে কেউ কখনো কোনো অভিযোগ করেনি। হতে পারে আমি তাদের সঙ্গে একটা দূরত্ব মেইনটেইন করে চলি। মেয়েরা হয়তো মাঠ ও কোচিং সম্পর্কিত ব্যাপার ছাড়া আমার সঙ্গে তত ফ্রি না। তাই হয়তো আমার কাছে এসে কারো বিপক্ষে কথা বলতে ইতস্তত করেছে।’
ইমরানের আক্ষেপ, ‘এটা আসলে একটা বিরাট ব্যাপার। আগে কিছু হয়েছে কিনা, সেটা আমি জানি না। আমি তো তখন নারী ক্রিকেটের সাথে জড়িত ছিলাম না। তবে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর চেয়েছিলাম গুছিয়ে নিতে। বেশ অনেকটা গুছিয়েও নিয়েছি। আর খানিকটা আগলে আমরা একটা স্তরে পৌঁছে যেতাম। আমরা যেভাবে যাচ্ছিলাম, তাতে পরবর্তী এক দেড় বছরের মধ্যে একটি ভালো দলে পরিণত হতাম। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের ৫-৬ নম্বরে থাকতাম। এমকি চারেও থাকতে পারতাম। এবারই আমরা শ্রীলঙ্কার সাথে জিতলেই পাঁচে উঠতে পারতাম। কিন্তু এমন নেতিবাচক ঘটনায় সে পথচলার পথে কুঠারাঘাত। আমার শেষ কথা, পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। তদন্ত শেষে দোষী সাব্যস্ত হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’




















