ঢাকা ০২:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বন্ধু প্রতীম দেশের মতো পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চায় বাংলাদেশ, প্রতিবন্ধকতায় একাত্তরের তিন ইস্যু

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:০৭:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৪১ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। এমনকি বাংলাদেশের চাওয়া অতীত থেকে বের হয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় তারা। তবে অমীমাংসিত তিন সমস্যা, বিশেষ করে একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমার প্রশ্নে আটকা পড়ছে ইসলামাবাদ।

তবে দেশটি একাত্তরসহ অমীমাংসিত তিন সমস্যার সমাধানে কোনো নিশ্চয়তা না দিলেও আগামী দিনে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে।

একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা, প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার পাওনা পরিশোধ এবং আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরানোর অমীমাংসিত বিষয়গুলো ঝুলে আছে বহু বছর ধরে। বিগত সরকারের শুরুর শাসনামলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলেও শেষ সময়ে নানা কারণে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে  পৌছায়। তবে তাদের কূটনৈতিক চ্যানেলে অমীমাংসিত তিন সমস্যার কথা বারবার তুলতে দেখা গেছে। কিন্তু সমাধান আসেনি।

তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে নতুন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগ বাড়ায় পাকিস্তান। বিদেশের মাটিতে ড.ইউনুসের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দু‘বার সাক্ষাত হয় যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরে। এরপর পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বিদেশের মাটিতে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে চারবার দেখা হয়, আলাপ হয়। পরবর্তীতে গত এপ্রিলে ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথ খোলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ ঢাকা সফরে।

তবে আগামী দিনে ঢাকা-ইসলামাবাদের সম্পর্ক কেমন হবে, সেটা বোঝার জন্য তৌহিদ-দারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৌহিদ-দারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে রোববার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মিডিয়ার সামনে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার গুরুত্ব বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

শুরুতে একাত্তর নিয়ে দারের মন্তব্যের ব্যাপারে ঢাকার অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তৌহিদ হোসেন সাফ জানিয়ে দেন ইসহাক দারের বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত নন। তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি অবশ্যই একমত না। একমত হলে তো সমস্যাটা সমাধান হয়ে যেত তাদের মতো করে। আমরা আমাদের অবস্থান তাদের সামনে উপস্থাপন করেছি, ‍উনারা উনাদের অবস্থান বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা তিনটি বিষয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। দুই পক্ষই আমরা ঠিক করেছি এই বিষয়গুলো আমাদের সমাধান করতে হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মসৃণভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এগুলোকে পেছনে ফেলতে হবে। আমরা দুই পক্ষ সম্মত হয়েছি যে, এটি নিয়ে আমরা কথা বলব এবং চেষ্টা করব এই ইস্যুগুলো নিয়ে আগামীতে এমনভাবে কথা বলব যেন আমরা পেছনে ফেলতে পারি।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার চায় পাকিস্তানের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে, যেমনটি অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তৌহিদ হোসেন বলেন, পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং বহুমাত্রিক। আজকের বৈঠকে আমি এবং পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভবিষ্যতের জন্য এই সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি। আমরা পারস্পরিক সম্মান, সমঝোতা এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে এই সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই পাকিস্তানের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক হোক, এর বেশি কিছু না। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন। সেই দৃষ্টিভঙ্গিতেই সম্পর্ক এগোচ্ছে।

ইসহাক দারের সফরে রাজনৈতিক স্তরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর বিষয়েও গুরুত্ব পেতে দেখা গেছে। সফরের শুরুর দিনে তিনি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া আজ (রোববার) দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বন্ধু প্রতীম দেশের মতো পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চায় বাংলাদেশ, প্রতিবন্ধকতায় একাত্তরের তিন ইস্যু

আপডেট সময় : ১১:০৭:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। এমনকি বাংলাদেশের চাওয়া অতীত থেকে বের হয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় তারা। তবে অমীমাংসিত তিন সমস্যা, বিশেষ করে একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমার প্রশ্নে আটকা পড়ছে ইসলামাবাদ।

তবে দেশটি একাত্তরসহ অমীমাংসিত তিন সমস্যার সমাধানে কোনো নিশ্চয়তা না দিলেও আগামী দিনে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসতে সম্মত হয়েছে।

একাত্তরের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা, প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার পাওনা পরিশোধ এবং আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফেরানোর অমীমাংসিত বিষয়গুলো ঝুলে আছে বহু বছর ধরে। বিগত সরকারের শুরুর শাসনামলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকলেও শেষ সময়ে নানা কারণে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে  পৌছায়। তবে তাদের কূটনৈতিক চ্যানেলে অমীমাংসিত তিন সমস্যার কথা বারবার তুলতে দেখা গেছে। কিন্তু সমাধান আসেনি।

তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে নতুন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগ বাড়ায় পাকিস্তান। বিদেশের মাটিতে ড.ইউনুসের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দু‘বার সাক্ষাত হয় যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরে। এরপর পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বিদেশের মাটিতে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে চারবার দেখা হয়, আলাপ হয়। পরবর্তীতে গত এপ্রিলে ঢাকা-ইসলামাবাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথ খোলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ ঢাকা সফরে।

তবে আগামী দিনে ঢাকা-ইসলামাবাদের সম্পর্ক কেমন হবে, সেটা বোঝার জন্য তৌহিদ-দারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তৌহিদ-দারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে রোববার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মিডিয়ার সামনে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার গুরুত্ব বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

শুরুতে একাত্তর নিয়ে দারের মন্তব্যের ব্যাপারে ঢাকার অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। জবাবে তৌহিদ হোসেন সাফ জানিয়ে দেন ইসহাক দারের বক্তব্যের সঙ্গে তিনি একমত নন। তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি অবশ্যই একমত না। একমত হলে তো সমস্যাটা সমাধান হয়ে যেত তাদের মতো করে। আমরা আমাদের অবস্থান তাদের সামনে উপস্থাপন করেছি, ‍উনারা উনাদের অবস্থান বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা তিনটি বিষয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। দুই পক্ষই আমরা ঠিক করেছি এই বিষয়গুলো আমাদের সমাধান করতে হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে মসৃণভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এগুলোকে পেছনে ফেলতে হবে। আমরা দুই পক্ষ সম্মত হয়েছি যে, এটি নিয়ে আমরা কথা বলব এবং চেষ্টা করব এই ইস্যুগুলো নিয়ে আগামীতে এমনভাবে কথা বলব যেন আমরা পেছনে ফেলতে পারি।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার চায় পাকিস্তানের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে, যেমনটি অন্যান্য বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই তৌহিদ হোসেন বলেন, পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং বহুমাত্রিক। আজকের বৈঠকে আমি এবং পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভবিষ্যতের জন্য এই সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি। আমরা পারস্পরিক সম্মান, সমঝোতা এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে এই সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই পাকিস্তানের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক হোক, এর বেশি কিছু না। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন। সেই দৃষ্টিভঙ্গিতেই সম্পর্ক এগোচ্ছে।

ইসহাক দারের সফরে রাজনৈতিক স্তরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর বিষয়েও গুরুত্ব পেতে দেখা গেছে। সফরের শুরুর দিনে তিনি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া আজ (রোববার) দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।