জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনের ঘোষণাকে বিএন পি’র স্বাগত, হতাশ জামায়েতে ইসলাম

- আপডেট সময় : ১২:৫৭:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫
- / ৮৬ বার পড়া হয়েছে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আজকে প্রধান উপদেষ্টা দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। একটি জুলাই ঘোষণাপত্র, আরেকটি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের মধ্যদিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা। আমরা দুটোকেই স্বাগত জানাই। অন্যদিকে হতাশা ব্যক্ত করেছে জামায়াতে ইসলাম।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, এক বছর আগে এই দিনেই আমরা ফ্যাসিস্ট মুক্ত হয়েছিলাম। হাজারও ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশ। বিগত ১৬ বছর ধরে অবিরাম সংগ্রাম এবং যারা রক্তদান করেছেন, তাদের সবাইকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।
তিনি বলেন, ২৪-এর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাদের সবার প্রতি সমবেদনা এবং শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। আজকের এই দিনে এটা আমাদের বিশাল অর্জন। আমরা দীর্ঘ একবছর যাবৎ বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কারের জন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার, গণতান্ত্রিক সংস্কার, সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার, তার একটা পর্যায়ে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি। আশা করি খুব শিগগিরই ঐকমত্যের ভিত্তিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সেটা স্বাক্ষরিত হবে। আশা করি, সেটা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও যদি আলাপ-আলোচনা হয় সেখানে আমরা অংশগ্রহণ করব। অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে জাতির যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যবদ্ধ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আগে, সেটাকে সমুন্নত রাখব এবং এই ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে শক্তিতে পরিণত করে এই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সমাজ এবং সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করব।
তিনি আরও বলেন, আজকে প্রধান উপদেষ্টা দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন। একটি জুলাই ঘোষণাপত্র আরেকটি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা দুটোকেই স্বাগত জানাই। জুলাই ঘোষণাপত্রের যে সমস্ত ঘোষণা; যেমন তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যথাযোগ্য জায়গায় সংবিধানে সেটা স্থাপন করা হবে। সেই প্রতিশ্রুতি আমরা আগেও দিয়েছিলাম এবং জুলাইয়ের যোদ্ধাদের জুলাই শহীদদের জাতীয় বীরের মর্যাদা দেব।
সালাহউদ্দিন আরও উল্লেখ করেন, যারা আহত হয়েছেন, যারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদেরকে বিভিন্নভাবে আইনি সুরক্ষা সহযোগিতা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) যেমন দিয়েছেন, সারা জাতি দিয়েছে, আমরাও দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আগামী দিনে নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং এর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রধান উপদেষ্টা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, সেটা অবশ্যই পরিধানযোগ্য। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন— নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠাবেন। আগামী ২০২৬-এর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রমজান শুরু হওয়ার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। অবশ্যই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবেন যথাসময়ে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার মধ্যদিয়ে সারা জাতি একটি নির্বাচনমুখি পরিবেশের মধ্যদিয়ে যাবে এবং সেই নির্বাচনের আবহ সৃষ্টি হবে। আগামী দিনের নির্বাচন সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ ও অবাধ এবং বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসিত একটি নির্বাচন হবে বলে আশা করি। সেই লক্ষ্যে সমগ্র জাতিকে এবং সমস্ত জনগণকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আমরা আমাদের পক্ষ থেকেও আহবান জানাচ্ছি।
নির্বাচন ঘোষণা দেওয়ার পর রাষ্ট্রের যে ভারসাম্য নিয়ে নানা সময়ে প্রশ্ন উঠছে, আজকে থেকে আসলে সেই সংকট কেটে গেল কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং কোনও রকমের অনিশ্চিত পরিবেশ বা ব্যবসা-বাণিজ্য বিনিয়োগে আর থাকবে না। সবকিছুই সচল হবে এবং গতিশীলতা পাবে।
অন্যদিকে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় জামায়েতে ইসলামীর ইসলামের নায়েবে আমির ডা.সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, এই ঘোষণাপত্রে দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার তেমন কোনো প্রতিফলন হয়নি।
ডা. তাহের বলেন, ‘আমি মনে করি, জুলাইয়ের যে আকাঙ্ক্ষা এই ঘোষণাপত্রে সেটার তেমন কোনো প্রতিফলন হয়নি। একটা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা আমরা দেখেছি।’
এটা কোনো তারিখ থেকে বাস্তবায়ন হবে এমন প্রশ্ন রেখে এ জামায়াতে ইসলামী নেতা বলেন, এটা কি কালকে থেকেই বাস্তবায়িত হবে? সেটা কিন্তু স্পষ্ট করেনি। তাছাড়া আমরা এটাকে সংবিধানে প্রিয়াম্বেলে চেয়েছিলাম, সেটা হয়নি।
ডা. তাহের আরও বলেন, উনারা যেটা বললেন, আগামী সরকার বাস্তবায়ন করবে। তাহলে বুঝা গেল, এই সরকার কিছু করবে না। অথচ দায়িত্ব হচ্ছে এই সরকারের। এভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যুকে হালকাভাবে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার যে ঘোষণাপত্র দেখলাম তাতে আমরা হতাশ। এই জাতি হতাশ।
এর আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির ঘোষণা দেওয়া হয় জুলাই ঘোষণাপত্রে। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণাপত্র যুক্ত হবে। ঘোষণাপত্রে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সব শহীদকে জাতীয় বীর হিসেবে উল্লেখ করা হবে।
একই সঙ্গে শহীদদের পরিবার, আহত যোদ্ধা এবং আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সব আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয় ঘোষণাপত্রে।