বিমান বিধ্বস্তে নিহত বেড়ে ২০, চিকিৎসাধীন ১৭১, মাইলস্টোনে শোকের মাতম, অভিবাবকরা খুঁজছেন সন্তানদের

- আপডেট সময় : ১১:৩২:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
- / ৪৩ বার পড়া হয়েছে
হঠাৎ একটি বিকট শব্দ। মূহুর্তেই সব কিছু স্তব্ধ করে দিয়েছে। শুরু হয়ে যায় চারিদিকে কান্নার রোল,চিৎকার,চেচামেচি। আশপাশের মানুষ কিংকর্তব্য বিমুঢ়। দৌড়ে আসলেন শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে। কিন্তু ততক্ষণে অনেকগুলো অবুঝ শিশুর প্রাণ ঝরে গেলো। বিধ্বস্ত বিমানের আগুনে পুড়ে ঝলসে গেলো অনেকের দেহ। পোড়া শরির নিয়ে জীবন বাঁচানোর সর্বশেষ চেষ্টা করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাৎক্ষনিক সেখানে উপস্থিত থাকা আশ-পাশের ৫০/৬০ জন লোক ছুটে এলেন তাদের বাঁচাতে। যে যেভাবে পেরেছেন সহযোগিতার চেষ্টা করেছেন। পাশবর্তী হাসপাতাল গুলোতে নিয়ে গেছেন। তখনো অভিবাবকরা জানতেন না যে, তাদের সন্তানরা মৃত্যুপুরি পড়ে আছেন!
আজ উত্তরার দিয়াবাড়িতে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ একটি বিমান দিয়াবাড়ি মাইলস্টোন স্কুলে বিধ্বস্ত হলে শিক্ষার্থীরা এমনি একটি দূর্ঘটনার মুখোমুখো হয়। সোমবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে আইএ পিআর জানিয়েছে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত বেড়ে ২০ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে আরও ১৭১ জন।
এদিকে বিমান বিধ্বস্তের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তেই স্কুলমুখী অভিবাবকরা ছিলেন দিশেহারা প্রায়। বুকের ধনকে খোঁজতে গিয়ে তারা স্কুল প্রাঙ্গনে ছুটে গেলেন। হাহাকার চারিদিকে। অভিবাবকদের বলতে শোনা যায় শুধু আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দেন। আমার সন্তানকে আমি বুকে পেতে চাই। অনেকেই সন্তানদের বুকে ফিরে পেলেও আবার অনেকের ভাগ্যে নামে চরম হতাশা। তাদের অনেকেই ছুটে গেছেন হাসপাতালগুলোতে।। ছবি তুলে বলছেন আমার বুকের মানিকটা কি হাসপাতালে আছে!
অপ্রত্যাশিত এমন একটি দূর্ঘনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না কেউ। এতে গোটা দেশ স্তব্ধ। প্রতিটি মূহুর্তে নিহত আহতদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন ড. ইউনুস। এ জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় শোকদিবস ঘোষনা করা হয়েছে।
দূর্ঘটনা প্রসঙ্গে আইএসপিআর জানায়, দুর্ঘটনা মোকাবিলায় এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বিমানের বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলাম বিমানটিকে ঘনবসতি এলাকা থেকে জনবিরল এলাকায় নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বিমানটি ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল এবং কলেজের দোতালা একটি ভবনে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনায় বিধ্বস্ত হয়েছে।
আরেকটি বার্তায় আইএসপিআর জানায়, বিভিন্ন হাসপাতালে রক্তদাতাদের পাঠাতে প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের জন্য বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর রেকর্ড অফিসে একটি জরুরি সেল (২৪/৭) খোলা হয়েছে; মোবাইল-০১৭৬৯৯৯৩৫৫৮ (হোয়াটসঅ্যাপ) নম্বরে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হলো।
সোমবার দুপুর ১টার পর রাজধানীর উত্তরায় দুর্ঘটনায় পড়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে গিয়ে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিমান ও স্কুল ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। যে ভবনে এটি বিধ্বস্ত হয় সেখানে বহু স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিল বলে জানা গেছে। যাদের বেশিরভাগই হতাহত হয়েছে।
দুর্ঘটনার পরপর উদ্ধার অভিযান শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। উত্তরাসহ আশপাশের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং হতাহতদের উদ্ধার করা শুরু করে। পরে উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয় বিজিবি ও সেনাবাহিনী। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।
কাছ থেকে দেখা দূরঘটনা :
দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে ছিলেন কলেজটির নিরাপত্তাকর্মী আকবর হোসেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সময় ৫ম থেকে ৮ম শ্রেণির ছুটি হয়। শিক্ষার্থীরা কেবল বের হচ্ছিল। এসময় হঠাৎ বিকট শব্দের পর তিনতলা ভবনের সামনের নারিকেল গাছ ভেঙে ভবনে ধাক্কা দেয় বিমানটি। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। আকবর হোসেন বলেন, তিনতলা ভবনের নিচতলা মাটির নিচে, সেখানে ক্লাস হয় না। বিমানটি সেখানে ঢুকে পড়ে।
স্কুল ভবন থেকে ১০০ গজের মধ্যে মোহাম্মদ জইমত আলীর এক্সক্যাভেটর মেরামতের গ্যারেজ। সেখানে চালক আপন আহমেদ কাজ করছিলেন। উড়োজাহাজ খুব নিচু দিয়ে উঠতে দেখে তারা দুজনে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। কয়েক মুহূর্ত পরেই বিকট শব্দ শুনে তারা প্রথমে ছুটে যান পাশের মেট্রোরেলের ডিপোর দিকে। পরে তারা দেখেন, স্কুল থেকে আগুন বের হচ্ছে।
এদিকে দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা যখন ক্লাসে ছিলাম, তখন বিস্ফোরণের মতো একটা শব্দ হইছে। আমরা কেউ বুঝতে পারিনি প্রথমে। তারপর হঠাৎ যখন সবাই দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করল- তারপর স্যার আসলেন। বললেন- পুরো বিল্ডিংয়ে আগুন ধরে গেছে। তারপর দেখি ফায়ার সার্ভিস।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগুন নেভাতে বেশি সময় লাগেনি, কিন্তু ভেতরে অনেক মানুষ ছিল। ছোট বাচ্চারা ছিল। ওদেরকে বের করতে অনেক সময় লাগে।’
এই আট হাসপাতালে মোট আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১৭১ জন।
১. কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল: আহত ৮ জন, নিহত নেই
২. জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট: আহত ৭০ জন, নিহত ২
৩. ঢাকা মেডিকেল: আহত ৩, নিহত ১
৪. সিএমএইচ-ঢাকা: আহত ১৭, নিহত ১২
৫. কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল: আহত ১, নিহত ২
৬. লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টার, উত্তরা: আহত ১১, নিহত ২
৭. উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল: আহত ৬০, নিহত ১
৮. উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল: আহত ১, নিহত নেই।