বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় বরখাস্ত এনবিআরের ৬ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা

- আপডেট সময় : ০১:১৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
- / ৪৪ বার পড়া হয়েছে
বদলির আদেশ অবজ্ঞাপূর্বক প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ এনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর ও কাস্টমস বিভাগের ছয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে ইস্যু করা পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ছয় কর্মকর্তা হলেন— কর অঞ্চল-৮, ঢাকার অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা; উপ-কমিশনার ও এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মো. শাহাদাত জামিল; মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার; অতিরিক্ত কমিশনার ও ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক সিফাত-ই-মরিয়ম; ঢাকা উত্তর কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা সবুজ মিয়া এবং খুলনা ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল বশর। এর মধ্যে অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন।
একই কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার সকালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর বিভাগের পাঁচ যুগ্ম কর কমিশনার ও তিন উপ-কর কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের সবার বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ আনা হয়। সবমিলিয়ে ১৪ কর্মকর্তাকে একই কারণ দেখিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
সকালের আদেশে বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন— কর অঞ্চল-২ এর যুগ্ম কর কমিশনার মাসুমা খাতুন, কর অঞ্চল-১৫ এর মুরাদ আহমদ, কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দিন, নোয়াখালী কর অঞ্চলের মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা ও কক্সবাজারের কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার আশরাফুল আলম প্রধান এবং উপ-কর কমিশনার শিহাবুল ইসলাম, রংপুরের নুসরাত জাহান শমী ও কুমিল্লার উপ-কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিল।
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা এনবিআর সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। যদিও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানের সই করা প্রজ্ঞাপনে সবার বিরুদ্ধেই গত ২২ জুন ইস্যু করা বদলির আদেশ অবজ্ঞাপূর্বক প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২২ জুন জারি করা বদলির আদেশ অবজ্ঞাপূর্বক প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৩৯ (১) ধারা অনুযায়ী এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপূর্বক চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন তারা।
এর আগে ২ জুলাই এনবিআরের কর বিভাগের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, মূসক নীতির সদস্য ড. মো আবদুর রউফ, শুল্ক নীতির সদস্য হোসেন আহমদ ও বরিশালের কর কমিশনার মো. শব্বির আহমদকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল।
আন্দোলনের ফলে সরকারের হয়ে রাজস্ব আদায়কারী সংস্থাটিতে একধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয় / ছবি- সংগৃহীত
গত ১ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে সরকার। বরখাস্তের পর তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) সংযুক্ত করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ও ২২ জুন এনবিআর থেকে কর্মকর্তাদের পৃথক দুটি বদলির আদেশ জারি করা হয়। এর মধ্যে ২১ জুন এনবিআরের দুই কর্মকর্তাকে এবং ২২ জুন পাঁচ উপ-কর কমিশনারকে তাৎক্ষনিক বদলির আদেশ জারি করে এনবিআর। ওই দুই আদেশ জারির পর কোনো কর্মকর্তা নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি। তবে, আন্দোলন করায় কর্মকর্তাদের ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ আচরণের অংশ হিসেবে এনবিআর থেকে বদলি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের কর্মকর্তারা ২৪ জুন ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে বদলির আদেশের কপি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলেন।