পিএসজিকে উড়িয়ে দিয়ে ক্লাব কাপের শিরোপা জিতেছে চেলসি

- আপডেট সময় : ০৪:৩৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
- / ৮৭ বার পড়া হয়েছে
পিএসজি নয়, বিশ্ব ক্লাব কাপের শিরোপ জিতেছে ইংলিশ ক্লাব চেলসি। আজ ফাইনালে ফেভরিট পিএসজিকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে সবাইকে চমকে দেয় চেলসি । অথচ সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে উড়িয়ে দেয়ার কল্যাণেই শুধু নয়, উইয়েফা চ্যাম্পিয়ন পিএসসি ঘরোয়া লিগেরও ট্রফি জেতা দল। এমন একটি দলের পক্ষে বাজি ধরাটাই ছিলো স্বাভাবিক। নিউ ইয়র্ক সিটির কাছে নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের পূর্ব রাদারফোর্ডের মেডোল্যান্ডস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে উপস্থিত মেটলাইফ স্টেডিয়ামের দর্শকরাই শুধু নন, গোটা ফুটবল দুনিয়ার ধারনাটা ছিলো পিএসজির পক্ষে। কিন্তু গোলের খেলায় সব ধারনা পাল্টে দিয়ে বিজয়ের উল্লাস করেছেন নীল জার্সিধারীরা। তাও রীতিমতো ফেভারিট দলটিকে টেনে মাটিতে নামিয়ে।
ম্যাচের তিনটি গোলই হয় প্রথমার্ধে। অসাধারণ নৈপুন্য দেখিয়েছেন পালমারের। মূলত তার নৈপুণ্যে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ট্রফি জিতল ব্লুজরা। দলের প্রথম দুটি গোলই করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড পালমার। পরেরটি করেন প্রথম দুই গোলের অ্যাসিস্ট ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকা জোয়াও পেদ্রো।
ম্যাচ শেষে মেডোল্যান্ডস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে চলে নীল উৎসব। অন্য দিকে হতাশা আর বিষন্নতায় মাঠ ছাড়ার সময়টাও সুখকর ছিলো না পিএসজির। চেলসির খেলোয়াড়দের সাথে বিবাধে জড়িয়ে পড়েন পিএসজি‘র কোচ এবং খেলোয়াড়রা। তারও আগে মাঠের লড়াইয়ে গোলের সঙ্গে লালও কার্ড খেয়েছেন পিএসজির জোওয়াও নুভেস। শেষ কয়েক মিনিট দশজন নিয়েই খেলতে হয় হতাশায় ভেঙ্গে পড়া ফরাসী ক্লাবটিকে। ম্যাচে যা হবার তাই হলো। সহজে হেরে গেলো ফাইনালে।
ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের হাতে মেডেল এবং ট্রফি তুলে দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশেই ছিলেন ফিফা সভাপতি। ট্রফি উচিয়ে চেলসি কোচ যেন জানান দিচ্ছেন, একদিন আগের হুশিয়ারীর কথা, ট্রফি আমরাই জিতবো। হয়েছেও তাই। যে কারণে কোচের উল্লাসটি ছিলো বাধভাঙ্গা। এর আগে ২০২১ সালেও বিশ্ব ক্লাব কাপ শিরোপা জিতেছিলো চেলসি। এটি তাদের দ্বিতীয় শিরোপা জয়।
ফলে ২০২৪-২৫ মৌসুমে চেলসি শেষ করল দুটি শিরোপা নিয়ে। ক্লাব বিশ্বকাপে সেরা হওয়ার আগে তারা জিতেছে উয়েফা কনফারেন্স লিগের ট্রফি। এছাড়া, এফএ কাপ ও ইএফএল কাপের চতুর্থ রাউন্ড থেকে বিদায় নেওয়া দলটি প্রিমিয়ার লিগ পেয়েছে চতুর্থ স্থান।
বাংলাদেশ সময় রোববার দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ফাইনালটি দেখেছিলেন ৮২ হাজারের বেশি দর্শক। এবারই প্রথম ৩২টি ক্লাব নিয়ে নতুন ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয় ক্লাব বিশ্বকাপ। সেখান থেকে এই দুটি দল উঠে আসে ফাইনালে। আর বাকিটা ইতিহাস।
ফরাসি ক্লাব পিএসজি ফাইনালে পৌঁছেছিল দাপট দেখিয়ে। আগের চার ম্যাচে ১২ গোল করার বিপরীতে নিজেদের জাল অক্ষত রেখেছিল তারা। এর মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে ২-০ গোলে হারানোর পর সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল পার্ক দে প্রিন্সেসের দলটি। কিন্তু মূল লড়াইয়ে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ল তারা।
মাত্র ৩৪ শতাংশ সময় বল দখলে রাখলেও আক্রমণে দাপট ছিল চেলসির। গোলমুখে ১০টি শট নিয়ে এঞ্জো মারেস্কার শিষ্যরা লক্ষ্যে রাখে পাঁচটি। অন্যদিকে, প্রথমার্ধে বিবর্ণ থাকা পিএসজি দ্বিতীয়ার্ধ গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেও কাজ হয়নি। গোলপোস্টে লুইস এনরিকের শিষ্যদের আটটি শটের ছয়টি লক্ষ্যে থাকলেও গোল আসেনি। উল্টো আরও গোল হজম করা থেকে বেচে যায় দলটি। টুর্নামেন্ট সেরা হন জোড়া গোল দাতা পালার। সেরা গোল রক্ষক হন চেলসি গোল রক্ষক রাবার্ট সানচেজ। সেরা গোল দাতা হন রিয়াল মাদ্রিদের গঞ্জালো গার্সিয়া, চার গোল করেন। সেরা উদিয়মান তারকা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান ফরাসি ক্লাব পিএসজির ডিজায়ার ডুয়ে।
ম্যাচের শুরুতেই চেলসি ম্যাচের লাগাম ধরে ফেলে। ২২ মিনিটে গোলরক্ষকের লম্বা করে বাড়ানো বল নিয়ে ডানপ্রান্ত দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ফরাসি ডিফেন্ডার মালো গুস্তো। তার শট প্রতিপক্ষের রক্ষণে বাধা পাওয়ার পর তিনি খুঁজে নেন পালমারকে। বাঁ পায়ের গড়ানো শটে জাল কাঁপান তিনি।
আট মিনিট পর নজরকাড়া লক্ষ্যভেদে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন পালমার। নিজেদের অর্ধ থেকে ইংলিশ ডিফেন্ডার লেভি কলউইলের উঁচু করে দেওয়া পাস ধরে দ্রুত ছুটে ডি-বক্সে পৌঁছে যান তিনি। প্রথমে শট নেওয়ার ভঙ্গি করলেও না নিয়ে জায়গা বানান তিনি। এরপর ফের বাঁ পায়ের নিচু শটে পেয়ে যান গোলের দেখা।
ম্যাচের ৪৩তম মিনিটে স্কোরলাইন ৩-০ করে ফেলে চেলসি। দুটি গোল করা পালমার এবার ছিলেন সহায়তাকারীর ভূমিকায়। ডি-বক্সে তার রক্ষণচেরা পাসে প্রথম ছোঁয়ায় পিএসজির ইতালিয়ান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মার মাথার উপর দিয়ে বল জালে পাঠান পেদ্রো।
পিএসজি পুরো ১১ জন নিয়ে খেলা শেষ করতে পারেনি। ৮৫তম মিনিটে তারা পরিণত হয় ১০ জনের দলে। পেছন থেকে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেয়ার চুল টেনে ধরেন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার জোয়াও নেভেস। ভিএআরের সাহায্য নিয়ে তাকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান রেফারি। কিছুক্ষণ পর শেষ বাঁশি বেজে উঠলে শিরোপা জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে চেলসি।
যদিও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দৃশ্যের দেখা মেলে খেলা শেষের পর। দুই দলের কয়েকজন ফুটবলার জড়িয়ে পড়েন হাতাহাতিতে। জটলার মধ্যে অবিশ্বাস্য কাণ্ড করে বসেন পিএসজির কোচ এনরিকে। তিনি মুখে আঘাত করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন পেদ্রো।