মিডফোর্ডে খুনিদের আটক করে শাস্তি দেয়া সরকারের দ্বায়িত্ব বললেন তারেক রহমান

- আপডেট সময় : ১১:৫০:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
- / ৪৩ বার পড়া হয়েছে
বুধবার ৯ জুলাই দিনে দপুরে মিডফোর্ড হাসপাতালের সামনে এক নরকীয় হত্যাকান্ড ঘটেছে। হত্যাকান্ডের দুদিন পর এই নি:সংসয় হত্যা কান্ডের প্রকাশ পায় স্যোসাল মিডিয়ায় অতপর মিডিয়ায়। এতেটাই নির্মম হত্যা কান্ড ঘটেছে যা কিনা দেশের প্রত্যেক মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। মধ্যযোগীয় কায়দায় পাথর মেরে মৃতদেহের উপর নৃত্য করেছে দৃষ্কৃতকারীরা। গত দুদিন ধরে এ নিয়ে পুরো দেশজুড়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। নিহত এবং অপরাধী দুপক্ষই যুব দলের নেতা বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এখনো সরকার প্রকৃত আসামীদের আটক করতে পারেনি। যা কিনা নতুন রহস্যের জন্ম দিয়েছে। বিএনপি থেকে দাবি উঠেছে দু’পক্ষই তাদের দলের এবং এই নির্মম অপরাধের বিচার তারাও চায়। যা কিনা সরকারকেই করতেই হবে।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দু’পক্ষিই বিএনপির লোক। তবে চাঁদা বাজির ঘটনা বলে যে আওয়াজ উঠেছে সেটি সত্য নয় বলে জানা যায়। স্থানীয়রা জানান, চাঁদা বাজি নয়, সিন্ডিকেট ব্যাবসার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এমন অমানবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। মিডফোর্ড ৩০ নম্বর ওয়াডের যুব দল নেতা ছিলেন মনির। তাকে নি:সংশয়ভাবে খুন করা হয়। মিডফোর্ডে তার একটি দোকান ছিলো। সেখানে তামার তারের সিন্ডিকেট ব্যবসা হতো। ২০০৪ সালে মনির হত্যাকান্ডের একজন আসামী ছিলেন নিহত সোহাগ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবসা চালিয়ে যান সোহাগ। গত বছর ৫ আগষ্টের পর ক্ষমতা পালাবদল হলে সোহাগের এই ব্যবসার সঙ্গে তার যুবদলের বন্ধদের যুক্ত করেন। এরপর সেই ব্যবসার ভাগ-বাটোয়ার নিয়ে হয় মনমালিন্য। সেখান থেকেই এমন নিসংশ খুন হন সোহাগ।
বিএনপি যুব দলের এই খুনীদের দল থেকে আজীবন বহিস্কার করেছে। কিন্তু এরপরেও আসামীরা ধরা পড়ছেন না। এ নিয়ে সচেতন মহলে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। আসমীদের ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে।
শুধু সচেতন মানুষই আসামীদের শাস্তির দাবি করেন নি, বিপিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আসামীদের আটক করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন। পাশাপাশি এই হত্যাকান্ডের ঘটনাকে কোন কোন রাজনৈতিক দল ভ্রান্তভাবে উপস্থাপন করছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, যে ছেলেটি মারা গেছে তার সঙ্গে হয়ত যুবদলের সম্পর্ক আছে। কিন্তু আমরা যেটা খবর পেয়েছি, যে খুন করছে বা যে হত্যা করেছে তাকে অন্য জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।
শনিবার (১২ জুলাই) জুলাই অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষ্যে ছাত্রদল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। গুলশানে হোটেল লেকশোরে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদলের শহীদদের স্মরণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, তাকে (হত্যাকারী) ধরা হচ্ছে না। ধরা হলো অন্যদেরকে। তাকে এখন পর্যন্ত আসামি করা হয়নি বোধ হয়। কেন হয়নি, কেন ধরা হচ্ছে না। আমাদের পক্ষ থেকে তো একবারও বলা হয়নি অমুককে ধরা যাবে না, তমুককে ধরা যাবে না। আমরা বরাবরই বলেছি, অন্যায়কারীর আইনের দৃষ্টিতে বিচার হবে। দলের সঙ্গে তার কি সম্পর্ক কিছু যায় আসে না তাতে। তাকে দল কোনো রকম প্রশ্রয় দেবে না,কেউ যদি কোনো অন্যায় করে থাকে।
তাহলে প্রশাসন ধরছে না কেন তাকে– প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, দলীয় অবস্থান থেকে আমাদের যা যা করা প্রয়োজন, তদন্তের পরে যাদের যাদের সম্পর্কে প্রমাণিত হয়েছে অভিযোগ আমরা আমাদের দলীয় অবস্থান থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন বসে আছে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চালায় কে? বিএনপি তো চালায় না। চালাচ্ছে তো সরকার। তাহলে সরকার কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না খুনিদের বিরুদ্ধে… সেটি দলের হোক বা অন্য কেউ হোক কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতির (ছাত্রদলের সভাপতি রাকিকুল ইসলাম রাকিব) সাথে সুর মিলিয়ে একই সুরে বলতে চাই ষড়যন্ত্র কিন্তু আরও শুরু হচ্ছে, আরও জোরেশোরে শুরু হচ্ছে। বিবেকবান মানুষ বলছেন, নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, কাজেই এ দেশের মানুষ যেমন একাত্তর সালে স্বাধীন করেছে এই দেশ, এই দেশের মানুষ যেমন বিভিন্ন সময়ে তাদের নিজের অধিকারের রক্ষায় সোচ্চার হয়েছে, নব্বইতে সোচ্চার হয়েছে, চব্বিশে সোচ্চার হয়েছে… আপনাদের সকলের কাছে আহ্বান থাকবে আবারও আপনাদের সোচ্চার এবং সচেতন হতে হবে। কারা কীভাবে ষড়যন্ত্র করছে, কারা কীভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলছে এবং ক্ষণেক্ষণে অবস্থান পরিবর্তন করছে… এই সব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত এবং এরপরই জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময়ে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্রদলের আফিকুল ইসলাম সাদ (মানিকগঞ্জ), মেহেদী (মুন্সিগঞ্জ), রিপন চন্দ্র শীল (হবিগঞ্জ), মো. আদিল (নারায়ণগঞ্জ), সাগর ইসলাম (পঞ্চগড়), রিয়াজ (বরিশাল), সিফাত হোসেন (মাদারীপুর), শাহরিয়ার হাসান আলভি (বাগেরহাট), কাউছার হোসেন বিজয় (লক্ষ্মীপুর), সাব্বির হোসেন (লক্ষ্মীপুর), তানভীর সিদ্দিকী (কক্সবাজার), তাহিদুল ইসলাম (বরিশাল), আকরাম খান রাব্বী (ঢাকা), মনির হোসেন (ভোলা), ইমন মিয়া (টাঙ্গাইল), মেহেদী হাসান রাব্বী (মাগুরা), শাহাদাত হোসেন শাওন (নোয়াখালী), নুরুল মুস্তফা (কক্সবাজার), সাফকাত সামির (ঢাকা), তাহমিদ ভুঁইয়া (নরসিংদী), সুমন পাটোয়ারি (দিনাজপুর), নূর হোসেন পিয়াস (নোয়াখালী), ওয়াসিম আকরাম (কক্সবাজার), ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজের (নোয়াখালী) পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের মৃত্যুর ঘটনা এবং বর্তমান দুঃখ-কষ্টের কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি আজ থেকে তিন মাস আগে জুলাই সনদের ব্যাপারে আমাদের কী বক্তব্য, কী অবস্থান সব কিছু ব্যাখ্যা করে লিখিতভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছি। আমরা একটি রাজনৈতিক দল এই মুহূর্তে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নেই… একটি দল হিসেবে আমাদের কাছে সরকার বক্তব্য মতামত জানতে চেয়েছে, আমরা পরিষ্কারভাবে লিখিতভাবে দিয়ে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এখন সম্পূর্ণ দায়িত্ব অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। তারা কতটুকু কী করবে, না করবে, কাদের নিয়ে কী করবে না করবে সেটি তাদের ব্যাপার। এখানে আমাদের আর কোনো কিছু বলার নেই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যখন আমরা দেখছি যে, কোনো কোনো কিছু বা কোনো কোনো আইডিয়াকে ফ্লোর করার চেষ্টা করা হচ্ছে অথবা কোনো কিছুকে লুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তখনই আমরা খেয়াল করছি কিছু কিছু নন-ইস্যুকে ইস্যু করে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। আজ আমি দেশবাসীর সামনে পরিষ্কারভাবে বলছি, দেশটি কোনো কারো একক না, কোনো রাজনৈতিক দলের না, দেশটি সমগ্র বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের। কাজেই ২০ কোটি মানুষের কাছে আহ্বান থাকবে, এই দেশটিকে নিয়ে আমাদের সবার ভাবতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, আপনারা নিজেরাই অনেকে এখানে বক্তব্যে বলেছেন, প্রশাসনের মধ্যে এখনো বিগত স্বৈরাচারের ভূত লুকিয়ে আছে… প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় এখনো এই ভূত লুকিয়ে আছে। কাজেই সেই ভূত এবং বর্তমানের নতুন কোনো যদি ভূত থাকে তারা কি ষড়যন্ত্র করছে সেই সম্পর্কে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। যদি আমরা সচেতন না হই এ দেশকে টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে।
তিনি বলেন, আপনারা বিচারের কথা বলেছেন, বিচারের কথা শুধু আপনাদের কথা নয়। বিচারের কথা সমস্ত বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক মানুষের দাবি, কথা। কাজেই কেন আমরা সেটি করব না? অবশ্যই বিএনপি যখনই সুযোগ পাবে অবশ্যই নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের বিচার… কারণ এটি আমাদের কমিটমেন্ট।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই মুহূর্তে যদি আমরা মিডিয়া দেখি, দেখব একটি বিষয়কে ঘিরে বিভিন্ন রকম কিছু ম্যাসেজিং করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কিছু একটি গল্প তৈরি করা হচ্ছে।
আমরা দেখেছি স্বাধীনতার বিরোধিতা কে করেছে?
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি যা বলে তা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে। কিন্তু আমরা কী দেখেছি? অনেকগুলো রাজনৈতিক দলকে দেখেছি… কারো ব্যাপারে আমরা দেখেছি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের ভূমিকা। যখন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, আমরা দেখেছি দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা কে করেছে? কাদের পক্ষ থেকে দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে।
তিনি আরও বলেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য এ দেশের মানুষকে যুদ্ধের ডাক দেয়নি, ডাক দেওয়ার দায়িত্ব তাদের ছিল। কিন্তু ডাক না দিয়ে আমরা দেখেছি সবাই মিলে কোনো দেশে লুকিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। কে ছিল এই দেশে? এ দেশের জনগণ ছিল, এ দেশে মুক্তিযোদ্ধারা ছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তারা বিভিন্ন সেক্টর কমান্ডারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। আমরা কাউকে দেখেছি, দূরের একটি দেশের গান গাইতে আবার কাউকে দেখেছি একটি প্রতিবেশী দেশের গান গাইতে। এখন তো দেখা যাচ্ছে বিএনপি ছাড়া বিভিন্ন দল বিভিন্ন দেশের গান গাইছে বাংলাদেশে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমি জোর গলায় বলতে চাই, বিএনপি বিশ্বাস করে বাংলাদেশের জনগণ সব ক্ষমতার উৎস, বিশ্বাস করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে। বিশ্বাস করে বাংলাদেশই সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ ঠিকানা।
ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও ঘোষণা করেন তিনি।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বক্তব্য দেন।