ঢাকা ১২:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

বিক্রেতাই ক্রেতা সাজায় ন্যায্য দামে জটিলতা

বকেয়া আটশ কোটি, ধ্বংসের মুখে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৯:১৫:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
  • / ১৩৪ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি। দিনাজপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র কয়লা খনি।  উকেপিডিয়ার দেয়া তর্থমতে ২০০১ সালে এই কয়লা খনির উদ্বোধন হয়। ২০০৫ সালেই বানিজ্যিক ভাবে কয়লা উৎপাদন শুরু হয়। এরপর খনির পাশেই ২০০৬ সালে নির্মিত হয় কয়লার উপর নির্ভর করে ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বড় পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা খনি উৎপাদনের শুরুর দিকটা ভালোই যাচ্ছিলো। চুক্তি অনুযায়ী কয়লা উৎপাদনের সিংহভাগ অর্থাৎ ৬৫ শতাংশ বিক্রি করা হবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে বড় পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। বাকি ৩৫ শতাংশ কয়লা বিক্রি করা হবে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। এতে শুরুর দিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয় দেশের একমাত্র এই কয়লা খনিটি।

কিন্তু যখনিই নানান জটিলতায় এর ব্যপ্তি ঘটেছে তখন থেকেই ক্ষতির মুখে পড়তে থাকে দেশের একমাত্র কয়লা খনিটি। কমতে থাকে কয়লার দাম। উৎপাদন ক্ষমতার চেয়েও কম দামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে (পিডিবি) কয়লা বিক্রি করতে গিয়ে বিশাল অংকের লাভ দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারনেই এখন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশের একমাত্র কয়লা উৎপাদনকারী এই খনিটি।

একদিকে উৎপাদন খরচের চেয়ে কয়লার দাম কমানোর প্রবণতা, অন্যদিকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে বিক্রিত কয়লার প্রায় সাড়ে ৮’শ কোটি টাকা বকেয়া এবং খনির ইয়ার্ডে বিপুল পরিমান কয়লা মজুদের কারনে কয়লা রাখার জায়গা সংকটসহ বিভিন্ন কারনে এক সময়ের লাভজনক এই কয়লা খনিটি বন্ধের হওয়ার মুখে পড়েছে।

একদিকে দূর্নীতি অন্যদিকে চুরিও অব্যবস্থাপনায় হুমকির মুখে কয়লা খনিটি। দেখা যায়, ইনহেরেন্ট ময়েশ্চার অর্থাৎ কয়লাতে সর্বোচ্ছ আদ্রতা রয়েছে ২.৩ শতাংশ। কিন্তু চায়না প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোটিয়ামের কাছ থেকে কয়লা নেয়া হচ্ছে ৫.১ শতাংশ আদ্রতায়। কিন্তু বড় পুকুরিয়ার কয়লায় ১০ শতাংশ পানিসহ কয়লা গ্রহন করছে বিসিএমসিএল। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার টন দাম দিয়ে (১০শতাংশ পানিসহ) মূলত কয়লা পেয়েছে ১ কোটি ৭  লাখ ৩১ হাজার টন। কিন্তু এই কয়লার হিসাব বিসিএমসিএল রাখেনি। এ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে ১ লাখ ৬১ হাজার টন প্রথাগত সিস্টেম লস ধরা হয়। এ হিসেবে ৫ লাখ ৪৮  হাজার টন কয়লা চুরি হয়েছে। কিন্তু বিসিমেসিএল ও প্রেট্রোবাংলার দাবিতে খোয়া যায় ১ লাখ ৪৪ হাজার টন। অর্থাৎ প্রায় দেড় লাখ টন সিস্টেম লস দেখানো হয়েছে।  কিন্তু ক্যাবের কমিশন বেশি করে প্রথাগত লোকসান দেখানোর পরেও চুরি যাওয়া কয়লার পরিমান প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন। দশ শতাংশের স্থলে ১৫ শতাংশ দেখিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

আবার কয়লার বাস্তব মজুতের সঙ্গে অসঙ্গতিও দেখা যায়। যা বলা হচ্ছে বাস্তবে সে পরিমান কয়লা মজুত দেখা যায় না। এখতিয়ার বিহীন সুপারিশের ভিত্তিতে ডিও’র (ডেলিভারি অডার) মাধ্যমে খনি এলাকায় কালোবাজার তৈরিসহ ২৭টি অনিয়ম ধরা পড়েছে। এখানে আবার কোল মাইনিং কোম্পানিটিকে (বিসিএমসিএল) দূর্ণীতিমুক্ত করতে ১৩টি সুপারিশও দিয়েছে কমিশন।

এই অনিয়মের পাশাপাশি যোগ হয়েছে কয়লার দাম পুননির্ধারণ করা।  ২০১৮ সালে খনির উৎপাদিত শতভাগ কয়লা বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিক্রির সিদ্ধান্ত হওয়ার পর কয়লার ন্যায্য দাম নির্ধারণে প্রতিবন্ধকতা, বিক্রিত কয়লার টাকা অনিয়মিত পরিশোধ ও শত শত কোটি টাকা বকেয়া থাকার কারনে ক্রমাগত রূগ্ন হয়ে পড়ছে এক সময়ের লাভজনক খনিটি।

সবশেষ গত বছরের শেষের দিকে কয়লার ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ মন্ত্রানালয়ের সচিবকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। এতে দেখা যায় বিক্রেতাই ক্রেতা সেজে যাওয়ায় কয়লার ন্যায্য দাম নিয়ে শুরু হয়েছে আরও জটিলতা। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারজানা মমতাজকে গত ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর উৎপাদন খরচ বিবেচনা না করেই কয়লার দাম কমানোর প্রবণতা করা হয়।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড (বিসিএমসিএল) কর্তৃপক্ষ বলছে, কয়লা বিক্রির আয় থেকে বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ কয়লা উত্তোলন, ঠিকাদারের বিল, খনি পরিচালনা ছাড়াও সরকারের রাজস্ব জোগান দেয়। তবে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কমানোর অজুহাতে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লার দাম কমানোর প্রবণতা খনিটিকে লোকসানের দিকে নিয়ে যাবে।

খনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২২ সালের দিকে যখন বড়পুকুরিয়ার কয়লার সমমানের কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারে এফওবি (ফ্রেইড অন বোর্ড) মূল্য প্রতি টন ১৯৬ ডলার থেকে ৪৩০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল, তখনও খনি থেকে প্রতি টন ১৭৬ ডলারেই কিনেছে পিডিবি। এখন হঠাৎ করে ১৭৬ ডলার থেকে কয়লার দাম ১৩০ ডলার বা আরও নিচে নামিয়ে আনতে চায়। বড়পুকুরিয়া কর্তৃপক্ষ বলছে, খনির কয়লার দাম কমিয়ে দেওয়া হলে ভবিষ্যতে কয়লা উত্তোলনসহ খনি পরিচালনা ও খনির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়ন হবে না। বড়পুকুরিয়া লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

জানা গেছে, চলতি বছর ১৯ জানুয়ারি কয়লার বিলম্ব মাশুল এবং কয়লার মূল্য পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত একটি পর্যালোচনা সভা হয়। সেখান থেকেই মূলত বড়পুকুরিয়ার কয়লার দাম কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ লক্ষ্যে সামগ্রিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সুপারিশ করতে গত ৭ এপ্রিল কমিটি গঠন করে দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। পেট্রোবাংলার পরিচালককে (অপারেশন/মাইন্স) আহ্বায়ক করে গঠিত ৯ সদস্যর ওই কমিটি কাজ করছে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি টন কয়লা ১৩০ ডলার করে বিক্রি হতো। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে প্রতি টন কয়লা ১৭৬ ডলার নির্ধারণ করা হয়। ২০২২ সালে বিপিডিবি ও বিসিএমসিএলের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিসিএমসিএলের কয়লার দাম ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি ১৭৬ ডলার নির্ধারণ করা হয়। পিছনের তারিখ অর্থাৎ ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সেটা কার্যকর করে মন্ত্রণালয়। তবে পিডিবি ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত বিল পরিশোধ করলেও ৪৬ ডলার বাড়তি দামে পরিশোধের বিলম্ব মাশুল মওকুফ করে নিয়েছে। সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে বৈঠকে বড়পুকুরিয়ার পাওনা বিলম্ব মাশুল বাবদ ১২২ কোটি ৮৩ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করেছে জ্বালানি বিভাগ। আরও প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ২৪ কিস্তিতে পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিসিএমসিএল ২০১৮ সালের আগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা কয়লার বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে অন্যান্য ক্রেতার কাছে সরবরাহ করা কয়লার বিক্রয় মূল্য তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখা যায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়া বাইরের ক্রেতাদের কাছে কয়লার বিক্রয় মূল্য বেশি। এ প্রেক্ষিতে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলিত কয়লার প্রকৃত খরচের সঙ্গে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণে সভায় উপস্থিত সবাই একমত প্রকাশ করেন। বিসিএমসিএল উল্লেখ করে, খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শেষে মাইন ক্লোজ করে দিলে মাইন ক্লোজার প্ল্যান অনুযায়ী আরও অতিরিক্ত ব্যয় যোগ হবে। প্রকৃত উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত যার সামঞ্জস্য করা হয়নি। এ ছাড়াও ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা কয়লার বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে টনপ্রতি প্রকৃত উৎপাদন ব্যয় ১৩৯.৭৮ ডলার হলেও ২০২৪-২০২৫, ২০২৫-২০২৬, ২০২৬-২০২৭, ২০২৭-২০২৮ এর অর্থবছরের টনপ্রতি উৎপাদন ব্যয় যথাক্রমে ১৫৬.৯৪, ১৬৫.৮১, ১৬২.১৩, ১৬৯,৭৮ ডলার প্রাক্কলন করা হয়েছে যার গড় মূল্য ১৬৩.৪৪ মার্কিন ডলার।

এই ব্যয়ের সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ ব্যয় বাবদ টনপ্রতি ১৩.৪২ ডলার, অনুসন্ধান ব্যয় বাবদ উৎপাদন ব্যয়ের ৭.৫ শতাংশ, ১২.২৬ ডলার এবং ১৫ শতাংশ হারে মুনাফা বাবদ ২৪.৫২ ডলার যোগ করে প্রতি টন কয়লার বিক্রয় মূল্য দাঁড়াবে ২১৩.৬২ ডলার। এসব খরচের সঙ্গে আরও মাইন ক্লোজার কস্ট যুক্ত হবে।

সূত্রে জানা যায়, বিসিএমসিএল আমদানিকৃত কয়লা ও দেশীয় কয়লার মূল্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে। সেখানে দেখা যায়, আমদানিকৃত কয়লার ক্যালোরিফিক ভ্যালু ৪৫০০-৫০০০ কিলো ক্যালোরি/কেজি যার ময়েশ্চার ২৮-৩৫ শতাংশ। অপরদিকে বড়পুকুরিয়ার উত্তোলিত কয়লার ক্যালোরিফিক ভ্যালু ৬১৩৭ কিলো ক্যালোরি/কেজি যার ময়েশ্চার ৩.৩৯ শাতংশ। অর্থাৎ সবক্ষেত্রেই বড়পুকুরিয়ার কয়লার গুণগত মান বেশি।

এদিকে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩টি ইউনিটে মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট হলেও কখনই পুরোপুরি উৎপাদন করতে পারেনি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। ফলে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদিত কয়লাও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে খনির ইয়ার্ডে বর্তমানে জমা পড়ে আছে সাড়ে ৪ লাখ টন কয়লা।

২০০৫ সাল থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সেন্ট্রাল পার্টের কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। বর্তমানে চতুর্থ চুক্তির আওতায় ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২০২৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা হবে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান চুক্তিতে এ যাবৎ ২৪ দশমিক ৭৩ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলিত হয়েছে। চতুর্থ চুক্তিতে বছরে আরও বেশি কয়লা উত্তোলন করা হবে।
বিসিএমসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৭ সালের পর বর্তমান চুক্তি শেষে অতিরিক্ত প্রায় ২৭ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হবে। যা ২০৩০ সাল পর্যন্ত উত্তোলন করা যাবে। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৫২৫ মেগাওয়াট চালু থাকলে বার্ষিক প্রায় ১৫ লাখ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাস্তবিকভাবে সবসময় ২টি ইউনিট চালু থাকায় বছরে প্রয়োজন হয় প্রায় ৭-৮ লাখ টন। কোনো ইউনিট বন্ধ থাকলে অতিরিক্ত কয়লা কোল ইয়ার্ডে জমা হতে থাকে। এ ছাড়া দেশে বছরে প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা ইটভাটায় ব্যবহার হয়ে থাকে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাদেও কয়লার অত্যধিক চাহিদা রয়েছে দেশীয় বাজারে। তবে ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকায় বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাইরে অন্য ক্রেতাদের কাছে কয়লা বিক্রয় বন্ধ রয়েছে।

বিসিএমসিএল সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ১ কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টন কয়লা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়েছে, বাকি ৩২ লাখ মেট্রিক টন কয়লা অন্য ক্রেতাদের (ইটভাটা, চা শিল্প, গ্লাস শিল্প, প্রাণ গ্রুপ) কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। তখন উভয় দামের সাথে সামঞ্চস্য করে খনিটি কিছুটা হলেও লাভজনক ছিলো। কিন্তু বাইরে বন্ধ থাকায় সেই পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিক্রেতাই ক্রেতা সাজায় ন্যায্য দামে জটিলতা

বকেয়া আটশ কোটি, ধ্বংসের মুখে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি

আপডেট সময় : ০৯:১৫:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি। দিনাজপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র কয়লা খনি।  উকেপিডিয়ার দেয়া তর্থমতে ২০০১ সালে এই কয়লা খনির উদ্বোধন হয়। ২০০৫ সালেই বানিজ্যিক ভাবে কয়লা উৎপাদন শুরু হয়। এরপর খনির পাশেই ২০০৬ সালে নির্মিত হয় কয়লার উপর নির্ভর করে ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বড় পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র। কয়লা খনি উৎপাদনের শুরুর দিকটা ভালোই যাচ্ছিলো। চুক্তি অনুযায়ী কয়লা উৎপাদনের সিংহভাগ অর্থাৎ ৬৫ শতাংশ বিক্রি করা হবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে বড় পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। বাকি ৩৫ শতাংশ কয়লা বিক্রি করা হবে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে। এতে শুরুর দিকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয় দেশের একমাত্র এই কয়লা খনিটি।

কিন্তু যখনিই নানান জটিলতায় এর ব্যপ্তি ঘটেছে তখন থেকেই ক্ষতির মুখে পড়তে থাকে দেশের একমাত্র কয়লা খনিটি। কমতে থাকে কয়লার দাম। উৎপাদন ক্ষমতার চেয়েও কম দামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে (পিডিবি) কয়লা বিক্রি করতে গিয়ে বিশাল অংকের লাভ দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারনেই এখন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশের একমাত্র কয়লা উৎপাদনকারী এই খনিটি।

একদিকে উৎপাদন খরচের চেয়ে কয়লার দাম কমানোর প্রবণতা, অন্যদিকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে বিক্রিত কয়লার প্রায় সাড়ে ৮’শ কোটি টাকা বকেয়া এবং খনির ইয়ার্ডে বিপুল পরিমান কয়লা মজুদের কারনে কয়লা রাখার জায়গা সংকটসহ বিভিন্ন কারনে এক সময়ের লাভজনক এই কয়লা খনিটি বন্ধের হওয়ার মুখে পড়েছে।

একদিকে দূর্নীতি অন্যদিকে চুরিও অব্যবস্থাপনায় হুমকির মুখে কয়লা খনিটি। দেখা যায়, ইনহেরেন্ট ময়েশ্চার অর্থাৎ কয়লাতে সর্বোচ্ছ আদ্রতা রয়েছে ২.৩ শতাংশ। কিন্তু চায়না প্রতিষ্ঠান সিএমসি-এক্সএমসি কনসোটিয়ামের কাছ থেকে কয়লা নেয়া হচ্ছে ৫.১ শতাংশ আদ্রতায়। কিন্তু বড় পুকুরিয়ার কয়লায় ১০ শতাংশ পানিসহ কয়লা গ্রহন করছে বিসিএমসিএল। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১ কোটি ১ লাখ ৬৬ হাজার টন দাম দিয়ে (১০শতাংশ পানিসহ) মূলত কয়লা পেয়েছে ১ কোটি ৭  লাখ ৩১ হাজার টন। কিন্তু এই কয়লার হিসাব বিসিএমসিএল রাখেনি। এ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদনে ১ লাখ ৬১ হাজার টন প্রথাগত সিস্টেম লস ধরা হয়। এ হিসেবে ৫ লাখ ৪৮  হাজার টন কয়লা চুরি হয়েছে। কিন্তু বিসিমেসিএল ও প্রেট্রোবাংলার দাবিতে খোয়া যায় ১ লাখ ৪৪ হাজার টন। অর্থাৎ প্রায় দেড় লাখ টন সিস্টেম লস দেখানো হয়েছে।  কিন্তু ক্যাবের কমিশন বেশি করে প্রথাগত লোকসান দেখানোর পরেও চুরি যাওয়া কয়লার পরিমান প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ টন। দশ শতাংশের স্থলে ১৫ শতাংশ দেখিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

আবার কয়লার বাস্তব মজুতের সঙ্গে অসঙ্গতিও দেখা যায়। যা বলা হচ্ছে বাস্তবে সে পরিমান কয়লা মজুত দেখা যায় না। এখতিয়ার বিহীন সুপারিশের ভিত্তিতে ডিও’র (ডেলিভারি অডার) মাধ্যমে খনি এলাকায় কালোবাজার তৈরিসহ ২৭টি অনিয়ম ধরা পড়েছে। এখানে আবার কোল মাইনিং কোম্পানিটিকে (বিসিএমসিএল) দূর্ণীতিমুক্ত করতে ১৩টি সুপারিশও দিয়েছে কমিশন।

এই অনিয়মের পাশাপাশি যোগ হয়েছে কয়লার দাম পুননির্ধারণ করা।  ২০১৮ সালে খনির উৎপাদিত শতভাগ কয়লা বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিক্রির সিদ্ধান্ত হওয়ার পর কয়লার ন্যায্য দাম নির্ধারণে প্রতিবন্ধকতা, বিক্রিত কয়লার টাকা অনিয়মিত পরিশোধ ও শত শত কোটি টাকা বকেয়া থাকার কারনে ক্রমাগত রূগ্ন হয়ে পড়ছে এক সময়ের লাভজনক খনিটি।

সবশেষ গত বছরের শেষের দিকে কয়লার ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ মন্ত্রানালয়ের সচিবকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। এতে দেখা যায় বিক্রেতাই ক্রেতা সেজে যাওয়ায় কয়লার ন্যায্য দাম নিয়ে শুরু হয়েছে আরও জটিলতা। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারজানা মমতাজকে গত ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর উৎপাদন খরচ বিবেচনা না করেই কয়লার দাম কমানোর প্রবণতা করা হয়।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেড (বিসিএমসিএল) কর্তৃপক্ষ বলছে, কয়লা বিক্রির আয় থেকে বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ কয়লা উত্তোলন, ঠিকাদারের বিল, খনি পরিচালনা ছাড়াও সরকারের রাজস্ব জোগান দেয়। তবে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম কমানোর অজুহাতে বড়পুকুরিয়া খনির কয়লার দাম কমানোর প্রবণতা খনিটিকে লোকসানের দিকে নিয়ে যাবে।

খনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২২ সালের দিকে যখন বড়পুকুরিয়ার কয়লার সমমানের কয়লার আন্তর্জাতিক বাজারে এফওবি (ফ্রেইড অন বোর্ড) মূল্য প্রতি টন ১৯৬ ডলার থেকে ৪৩০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল, তখনও খনি থেকে প্রতি টন ১৭৬ ডলারেই কিনেছে পিডিবি। এখন হঠাৎ করে ১৭৬ ডলার থেকে কয়লার দাম ১৩০ ডলার বা আরও নিচে নামিয়ে আনতে চায়। বড়পুকুরিয়া কর্তৃপক্ষ বলছে, খনির কয়লার দাম কমিয়ে দেওয়া হলে ভবিষ্যতে কয়লা উত্তোলনসহ খনি পরিচালনা ও খনির উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়ন হবে না। বড়পুকুরিয়া লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

জানা গেছে, চলতি বছর ১৯ জানুয়ারি কয়লার বিলম্ব মাশুল এবং কয়লার মূল্য পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত একটি পর্যালোচনা সভা হয়। সেখান থেকেই মূলত বড়পুকুরিয়ার কয়লার দাম কমানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ লক্ষ্যে সামগ্রিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সুপারিশ করতে গত ৭ এপ্রিল কমিটি গঠন করে দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। পেট্রোবাংলার পরিচালককে (অপারেশন/মাইন্স) আহ্বায়ক করে গঠিত ৯ সদস্যর ওই কমিটি কাজ করছে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি টন কয়লা ১৩০ ডলার করে বিক্রি হতো। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে প্রতি টন কয়লা ১৭৬ ডলার নির্ধারণ করা হয়। ২০২২ সালে বিপিডিবি ও বিসিএমসিএলের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিসিএমসিএলের কয়লার দাম ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি ১৭৬ ডলার নির্ধারণ করা হয়। পিছনের তারিখ অর্থাৎ ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে সেটা কার্যকর করে মন্ত্রণালয়। তবে পিডিবি ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত বিল পরিশোধ করলেও ৪৬ ডলার বাড়তি দামে পরিশোধের বিলম্ব মাশুল মওকুফ করে নিয়েছে। সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে বৈঠকে বড়পুকুরিয়ার পাওনা বিলম্ব মাশুল বাবদ ১২২ কোটি ৮৩ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করেছে জ্বালানি বিভাগ। আরও প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ২৪ কিস্তিতে পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিসিএমসিএল ২০১৮ সালের আগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা কয়লার বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে অন্যান্য ক্রেতার কাছে সরবরাহ করা কয়লার বিক্রয় মূল্য তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখা যায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়া বাইরের ক্রেতাদের কাছে কয়লার বিক্রয় মূল্য বেশি। এ প্রেক্ষিতে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলিত কয়লার প্রকৃত খরচের সঙ্গে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণে সভায় উপস্থিত সবাই একমত প্রকাশ করেন। বিসিএমসিএল উল্লেখ করে, খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শেষে মাইন ক্লোজ করে দিলে মাইন ক্লোজার প্ল্যান অনুযায়ী আরও অতিরিক্ত ব্যয় যোগ হবে। প্রকৃত উৎপাদন খরচ ও বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত যার সামঞ্জস্য করা হয়নি। এ ছাড়াও ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা কয়লার বিক্রয় মূল্যের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে টনপ্রতি প্রকৃত উৎপাদন ব্যয় ১৩৯.৭৮ ডলার হলেও ২০২৪-২০২৫, ২০২৫-২০২৬, ২০২৬-২০২৭, ২০২৭-২০২৮ এর অর্থবছরের টনপ্রতি উৎপাদন ব্যয় যথাক্রমে ১৫৬.৯৪, ১৬৫.৮১, ১৬২.১৩, ১৬৯,৭৮ ডলার প্রাক্কলন করা হয়েছে যার গড় মূল্য ১৬৩.৪৪ মার্কিন ডলার।

এই ব্যয়ের সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ ব্যয় বাবদ টনপ্রতি ১৩.৪২ ডলার, অনুসন্ধান ব্যয় বাবদ উৎপাদন ব্যয়ের ৭.৫ শতাংশ, ১২.২৬ ডলার এবং ১৫ শতাংশ হারে মুনাফা বাবদ ২৪.৫২ ডলার যোগ করে প্রতি টন কয়লার বিক্রয় মূল্য দাঁড়াবে ২১৩.৬২ ডলার। এসব খরচের সঙ্গে আরও মাইন ক্লোজার কস্ট যুক্ত হবে।

সূত্রে জানা যায়, বিসিএমসিএল আমদানিকৃত কয়লা ও দেশীয় কয়লার মূল্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে। সেখানে দেখা যায়, আমদানিকৃত কয়লার ক্যালোরিফিক ভ্যালু ৪৫০০-৫০০০ কিলো ক্যালোরি/কেজি যার ময়েশ্চার ২৮-৩৫ শতাংশ। অপরদিকে বড়পুকুরিয়ার উত্তোলিত কয়লার ক্যালোরিফিক ভ্যালু ৬১৩৭ কিলো ক্যালোরি/কেজি যার ময়েশ্চার ৩.৩৯ শাতংশ। অর্থাৎ সবক্ষেত্রেই বড়পুকুরিয়ার কয়লার গুণগত মান বেশি।

এদিকে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩টি ইউনিটে মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট হলেও কখনই পুরোপুরি উৎপাদন করতে পারেনি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। ফলে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদিত কয়লাও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে খনির ইয়ার্ডে বর্তমানে জমা পড়ে আছে সাড়ে ৪ লাখ টন কয়লা।

২০০৫ সাল থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সেন্ট্রাল পার্টের কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। বর্তমানে চতুর্থ চুক্তির আওতায় ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২০২৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৪৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা হবে। গত জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান চুক্তিতে এ যাবৎ ২৪ দশমিক ৭৩ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলিত হয়েছে। চতুর্থ চুক্তিতে বছরে আরও বেশি কয়লা উত্তোলন করা হবে।
বিসিএমসিএলের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৭ সালের পর বর্তমান চুক্তি শেষে অতিরিক্ত প্রায় ২৭ লাখ মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব হবে। যা ২০৩০ সাল পর্যন্ত উত্তোলন করা যাবে। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৫২৫ মেগাওয়াট চালু থাকলে বার্ষিক প্রায় ১৫ লাখ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাস্তবিকভাবে সবসময় ২টি ইউনিট চালু থাকায় বছরে প্রয়োজন হয় প্রায় ৭-৮ লাখ টন। কোনো ইউনিট বন্ধ থাকলে অতিরিক্ত কয়লা কোল ইয়ার্ডে জমা হতে থাকে। এ ছাড়া দেশে বছরে প্রায় ৬৫ লাখ মেট্রিক টন কয়লা ইটভাটায় ব্যবহার হয়ে থাকে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাদেও কয়লার অত্যধিক চাহিদা রয়েছে দেশীয় বাজারে। তবে ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকায় বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাইরে অন্য ক্রেতাদের কাছে কয়লা বিক্রয় বন্ধ রয়েছে।

বিসিএমসিএল সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ১ কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টন কয়লা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়েছে, বাকি ৩২ লাখ মেট্রিক টন কয়লা অন্য ক্রেতাদের (ইটভাটা, চা শিল্প, গ্লাস শিল্প, প্রাণ গ্রুপ) কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। তখন উভয় দামের সাথে সামঞ্চস্য করে খনিটি কিছুটা হলেও লাভজনক ছিলো। কিন্তু বাইরে বন্ধ থাকায় সেই পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে।