শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে সিরিজে সমতায় ফেরালো বাংলাদেশ

- আপডেট সময় : ১২:৫১:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
- / ৪৭ বার পড়া হয়েছে
কখনো মনে হচ্ছিলো শ্রীলঙ্কার দিকে ন্যুয়ে পড়ছে ম্যাচ। আবার কখনো দেখা যাচ্ছে ম্যাচের লাগাম টেনে ধরছেন টাইগাররা। পেন্ডুলামের দুলতে থাকা ম্যাচটির শেষ হাসিটি হাসলো বাংলাদেশ। ম্যাচের বেকথ্রু এনেদেন দিনভর রান দিতে থাকা মোস্তাফিজুর রহমানই। তার করা শেষ দ্বিতীয় ওভারেই কট এন্ড বোল্ড হন লঙ্কান দলের সর্বশেষ ভরসা দাড়িয়ে যাওয়া জিনিথ লিয়ান্জে। শেষ দিকে ছক্কা আর বাউন্ডারি হাাঁকিয়ে টাইগারদের ভিতর কাঁপনি ধরিয়ে দেন একাধিক লাইফ পাওয়া এই ব্যাটার। শেষ তৃতীয় ওভারে মোস্তাফিজকে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন। পরের বলে মোস্তাফিজ নিজেই কট আউট করেন যথা সময়ে দাড়িয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কান এই ব্যাটারকে। তার বিদায় হতেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। শেষের দিকের ব্যাটাররা পারেন নি আর ঘুরে দাড়াতে। টান টান উত্তেজনাকর শ্বাসরুদ্ধকর এই ম্যাচে ১৬ রানের জয় পেয়ে সিরিজে সমতা ফিরলো বাংলাদেশ। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় তথা শেষ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আগামী মঙ্গলবার।
শনিবার রাতে কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে জয় থেকে অনেকটা দূরে থেকেও একপ্রাপ্ত আগলে রেখে দুনিথ লিয়ানাগে ম্যাচ প্রায় বেরই করে ফেলেছিলেন। অবশেষে ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাকে থামান মোস্তাফিজুর রহমান। লিয়ানাগে যখন ক্রিজে ছিলেন, ম্যাচ তখন শ্রীলঙ্কার দিকেই হেলে পড়ছিল।
এই ম্যাচ হারলে সিরিজ হবে হাতছাড়া, ছিল বাঁচামরার লড়াই। পুঁজিও খুব বড় ছিল না। ধুঁকতে ধুঁকতে ২৪৮ রান পর্যন্ত গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে এই সংগ্রহ নিয়েই দুর্দান্ত এক জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা, বোলারদের নৈপুণ্যে।
আলাদা করে বলতে হয় তানভীর ইসলামের কথা। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচেই দুর্দান্ত এক ফাইফার (৫ উইকেট) তুলে নিয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনার।
ব্যাট হাতে দলকে লড়াকু পুঁজি এনে দিয়েছেন, বোলিংয়েও শুরুর আঘাতটা করেন তানজিম হাসান সাকিব। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই পাথুম নিশাঙ্কাকে (৫) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন টাইগার পেসার। ৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
দ্বিতীয় উইকেটে ৪৫ বলে ৬৯ রানের ঝোড়ো জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস আর নিশান মাদুশকা। মাদুশকাকে (১৭) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তানভীর ইসলাম।
বাঁহাতি এই স্পিনার নিজের পরের ওভারে এলবিডব্লিউ করেন ২০ বলে ফিফটি হাঁকানো কুশল মেন্ডিসকেও। ৩১ বলে ৯ চার আর ১ ছক্কায় ৫৬ রানে সাজঘরের পথ ধরেন কুশল। ৭ রানের মধ্যে ২ উইকেট তুলে নিয়ে লড়াইয়ে ফেরে বাংলাদেশ।
এরপর চারিথ আসালাঙ্কাকে ৬ রানেই আউট করে দেন শামীম পাটোয়ারী। একশর আগে (৯৯ রানে) ৪ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
কামিন্দু মেন্ডিস প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। অবশেষে লঙ্কান ব্যাটিংয়ের এই স্তম্ভ পড়েন ফাঁদে। তানভীরের বলে মিডউইকেটে দাঁড়িয়ে ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫১ বলে ৩৩ রানে ফেরেন কামিন্দু। শ্রীলঙ্কার পঞ্চম উইকেটের পতন ঘটে ১২৬ রানে।
তানভীরের চতুর্থ শিকার দুনিথ ওয়াল্লালাগে (১)। ঘূর্ণিতে পরাস্ত হন তিনি, বল ব্যাটে লেগে উঠে যায় ওপরে। সহজ ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক জাকের আলী। ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
এরপর ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা আর জানিথ লিয়ানাগের উইকেট কামড়ে পড়ে থাকার চেষ্টা করেন। এদিকে রানের চাপ বাড়ছিল। শেষ পর্যন্ত ঝুঁকি নেন হাসারাঙ্গা (১৩)। মিরাজকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে হন ক্যাচ।
তানভীর তার ফাইফার (৫ উইকেট) পূরণ করেন মাহিশ থিকশানাকে (২) আউট করে। তবে দুনিথ লিয়ানাগে একটা প্রান্ত ধরে লড়াই চালিয়েই যেতে থাকেন। বেশ কয়েকটি জীবন পেয়ে ৭৫ বলে লড়াকু ফিফটি হাঁকান। জয়ের সুযোগ তৈরি করেছিলেন তিনিই।
৪৮তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকান মোস্তাফিজকে। ১৭ বলে তখন দরকার ২১। পরের বলেই ফিজ ফিরতি ক্যাচে ফেরান লিয়ানাগেকে। নয়তো ৮৫ বলে ৭ চার আর ২ ছক্কায় তার ৭৮ রানের ইনিংসটা হয়তো লঙ্কানদের উৎসবের উপলক্ষ্য গড়ে দিতো।
এরপর দুশমন্ত চামিরাকে বোল্ড করে শেষ টানেন তানজিম সাকিব। ৪৮.৫ ওভারে ২৩২ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা।
এর আগে ২১৮ রানে ৯ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে শেষ ব্যাটার মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে আরও ৩০ রান যোগ করেন তানজিম হাসান সাকিব। যে জুটিতে মোস্তাফিজের এক রানও নিতে হয়নি।
তানজিম সাকিব ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে একাই দলকে নিয়ে গেছেন সম্মানজনক অবস্থানে। ২১ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৪৫.৫ ওভারে ২৪৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
আজ শনিবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ।
প্রথম ওয়ানেডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬২ রান করা তানজিদ হাসান তামিম আজ ব্যর্থ হয়েছেন। বাঁহাতি ব্যাটার সিরিজে টিকে থাকার লড়াইয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন ১১ বলে ৭ রান করেই।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে আসিথা ফার্নান্দোর স্লোয়ার বল কভারে খেলতে যান তানজিদ। কিন্তু ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিসের দিকে। সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিচু হওয়া বল দারুণভাবে গ্লাভসবন্দি করেন মেন্ডিস। দলীয় ১০ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৯ বলে ১৪ রান করে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটার। ইনিংসের ১২তম ওভারে চারিথ আসালঙ্কাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারির কাছাকাছি মাহিশ থিকশানার হাতে ক্যাচ হন শান্ত।
তবে মারকুটে ব্যাটিং করে ৪৬ বলেই ফিফটি তুলে নেন পারভেজ হোসেন ইমন। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই হাফসেঞ্চুরির দেখা পান বাঁহাতি এই ওপেনার।
তবে দারুণ এক ইনিংস খেলে লঙ্কান স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার শিকার হন ইমন। হাসারাঙ্গার গুগলি বুঝতে পারেননি, ডিফেন্ড করেও স্টাম্প হারান এই ওপেনার। ৬৯ বলে ৬৭ রানের ইনিংসে ৬ চার ও ৩ ছক্কা হাঁকান ইমন।
এরপর অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ২ বলে ০ রানে আউট হয়েছিলেন। এবার ১০ বলে ৯ রান করে ফেরেন মিরাজ।
ইনিংসের ২৩তম ওভারে দুশমন্থ চামিরার বলে স্কয়ার লেগ অঞ্চলে পাথুম নিশাঙ্কার হাতে ক্যাচ হন মিরাজ। দলীয় ১২৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন শামীম পাটোয়ারী। সেটও হয়েছিলেন। কিন্তু ফাঁদে পা দিয়ে বসলেন। আসিথা ফার্নান্ডোর লেগ সাইড দিয়ে বের হতে যাওয়া শর্ট ডেলিভারি ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ফাইন লেগে ধরা পড়লেন শামীম। ২৩ বলে ২ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ২২ রান।
১৫৯ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে নিয়েছেন জাকের আলী আর তাওহিদ হৃদয়। ৬১ বলে ৪৫ রান যোগ করেন তারা। জাকেরের এলবিডব্লিউয়ে ভাঙে এই জুটি। ৪০ বলে ২ বাউন্ডারিতে ২৪ করেন জাকের।
হৃদয় ৬৮ বলে লড়াকু এক ফিফটি করেন, যা ছিল তার ক্যারিয়ারের অষ্টম। কিন্তু হৃদয়ের এই ইনিংসটি থেমে যায় রানআউটে। তানজিম সাকিবের সঙ্গে দুই রান নিতে চাইলে ভুল বোঝাবুঝি হয়, ননস্ট্রাইক এন্ড থেকে অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছিলেন হৃদয়। ৬৯ বলে ২ বাউন্ডারিতে তার ইনিংসটি ছিল ৫১ রানের।
হৃদয় ফেরার পর বলতে গেলে আর কোনো আশা ছিল না। হাসান মাহমুদ (০) আর তানভীর ইসলাম (৪) দ্রুতই আউট হলে লড়াকু পুঁজি গড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়। তবে তানজিম সাকিব শেষের দিকে ঝলক দেখিয়েছেন। ব্যাটারদের মতোই দায়িত্ব নিয়ে দলকে নিয়ে গেছেন সম্মানজক অবস্থানে।