জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা একতরফরভাবে প্রণয়ন না করার আহবান বিএনপি’র

- আপডেট সময় : ০৫:৪০:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
- / ৪৪ বার পড়া হয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকার কতৃক টেলিকম খাতে নতুন নীতিমালার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই নীতিমালাকে প্রশংনীয় ভাবলেও এর পাশাপাশি সঙ্কা ও প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি এর জন্য কিছু প্রস্তাবনাও দিয়েছেন তিনি। তিনি মনে করেন সামনে জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা এক তরফাভাবে প্রণয়ন করাটা সমীচীন হবে না। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে আহবান করেছেন যেন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতি বাস্তবায়নের আগে পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা করেন।
তিনি জানান, সামনে জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা একতরফাভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন হবে না বলে বিশ্বাস করে বিএনপি। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দুপুর ১টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে টেলিকম খাতের নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান জানিয়ে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
টেলিকম খাতে নতুন নীতিমালার বিষয়ে উদ্বেগ ও প্রস্তাবনা’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর সাম্প্রতিক “ড্রাফট টেলিকম নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি ২০২৫” উদ্যোগের বিষয়টি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও আমরা এই মুহূর্তে এ ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছি। এই নীতির উদ্দেশ্য হলো লাইসেন্সিং পদ্ধতি সহজ করা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি উৎসাহিত করা এবং গ্রামীণ জনগণের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো- যা অবশ্যই ইতিবাচক একটি বিষয়। তবে, খসড়া নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে যা টেলিকম খাতে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়নে বাধা দিতে পারে। বিএনপি গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে এই খসড়ার সম্ভাব্য দুর্বলতা, অস্পষ্টতা এবং বড় মোবাইল অপারেটরদের (এমএনও) পক্ষে অধিক সুবিধা পাওয়ার কিছু ধারা তুলে ধরছে- যা ছোট ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (এসএমই) এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সরকারকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ নীতি বাস্তবায়নের আগে তারা যেন পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের (এসএমই, বিশেষজ্ঞ, ভোক্তা সংগঠন) সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক আলোচনা করার পর নীতিমালা চূড়ান্ত করেন। বিশেষ করে সামনে জাতীয় নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে এই ধরনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা এ সময়ে একতরফাভাবে প্রণয়ন করা সমীচীন হবে না বলে বিএনপি বিশ্বাস করে।
লিখিত বক্তব্যে বাজারে একচেটিয়া আধিপত্যের ঝুঁকি তুলে ধরে তিনি বলেন, একাধিক সেবাখাতে মালিকানা রাখার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে বড় মোবাইল অপারেটররা একাধিক খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এতে প্রতিযোগিতা কমে যাবে এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়বে। ডি-রেগুলেশনের (নিয়ন্ত্রণ শিথিল) পরে এসএমই, বিশেষ করে স্থানীয় আইএসপি বা ছোট টেলিকম অপারেটরদের সম্পদ ও দায়বদ্ধতা নিয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় তারা বড় ধরনের আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মালিকানার সীমা নিয়ে অস্পষ্টতা আছে, যা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে পারে এবং খাতের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করতে পারে।
তিনি বলেন, উল্লম্ব ও সমান্তরাল মালিকানার বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যার অভাবে বড় কোম্পানিগুলো আরও বাজার দখল করে নিতে পারে। মোবাইল অপারেটরদের ফাইবার-ভিত্তিক ব্যবসা সংযোগ সেবা কোথায় সীমাবদ্ধ তা স্পষ্ট নয়, ফলে বিবাদ ও অসাম্য তৈরি হতে পারে। স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বা নতুন ডিজিটাল সেবা নিয়ে নীতিতে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই, যা বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, একক লাইসেন্সের বাধা এসএমই-দের জন্য আইএসপি লাইসেন্স একীভূত করার ফলে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সুবিধা পাবে। এএনএসপি লাইসেন্সে স্পেকট্রামের ওপর নির্ভরতা বড় কোম্পানিগুলোকে এগিয়ে রাখবে। ‘ফিক্সড টেলিকম’ লাইসেন্স খোলা থাকলেও সারা দেশে সেবা দিতে হবে এবং উচ্চ মান বজায় রাখতে হবে- যা এসএমই’দের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
বড় কোম্পানির অবকাঠামো আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তিনি বলেন, বড় মোবাইল কোম্পানিকে এন্টারপ্রাইজ ব্রডব্যান্ড বাজারে প্রবেশ করতে দিলে ছোট কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে এবং একচেটিয়া পরিবেশ তৈরি হবে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কিছু নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বড় কোম্পানির সুবিধা বজায় রাখা হয়েছে, যা প্রতিযোগিতা নয় বরং আধিপত্য বাড়াবে। তাছাড়া, খসড়া নীতিমালায় লাইসেন্স ফি, শর্তাবলী, কার্যকারিতার বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই প্রকাশ করা হয়নি- যা স্বচ্ছতার অভাব নির্দেশ করে।
সরকারকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এসএমই, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গ্রাহক সংগঠনসহ সব পক্ষকে নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করার পর যেন এই ধরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা চুড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেইসঙ্গে এই প্রস্তাবিত নীতিমালার একটি পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক পরিনামও বিশ্লেষণ করা হোক। বিশেষ করে এসএমই ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সম্ভাব্য ক্ষতি, কর্মসংস্থান হ্রাস এবং অর্থনীতির ওপর প্রভাব বিবেচনায় রেখে এটি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের জাতীয় পর্যায়ের টেলিকম নীতি প্রণয়নে অবশ্যই সতর্কতা, স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে নিতে হবে। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায়, তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। বিএনপি বিশ্বাস করে, সবার জন্য উপকার বয়ে আনে- এমন নীতিই গ্রহণযোগ্য। ডিজিটাল সংযুক্তির মাধ্যমে সমতা ভিত্তিক উন্নয়ন এবং জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকারেই আমরা কাজ করে যাব।