শনিবার ট্রায়ালে যোগ দিতে প্রবাসী ফুটবলারদের ভিড়

- আপডেট সময় : ১০:৫৯:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
- / ১৮৩ বার পড়া হয়েছে
গত ষোল বছরে দেশের ফুটবল ছিলো মৃতপ্রায়। দেশ সেরা স্টাইলিস্ট স্ট্রাইকার কাজী সালাউদ্দিনসহ একঝাক সাবেক ফুটবলাররা ছিলেন ফুটবল উন্নয়নের দ্বায়িত্বে। কিন্তু তাতে বদলায়নি কিছু। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ফুটবল নেমে যায় র্যাংকিংয়ের তলানীতে। তাদের বিদায়ের পর দেশের ফুটবলে যেন হঠাৎ এক জোয়ার নেমে আসলো। ফুটবল উত্তেজনা চলে যায় ঘরে ঘরে। চায়ের কাপের আলোচনায় এখন সেই আগের ফুটবলের মতোই যেন চুলছেরা বিশ্লেষন চলছে। এটি যেন নতুন কোন যাদু ছোয়া। আর এই যাদুকরটি হচ্ছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের খেলোয়াড় হামজা চৌধুরী। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামেন। আর তাতেই স্টেডিয়ামে আকাশ ছোঁয়া ফুটবল ভক্তের জমাট।
হামজার উপস্থিতিতে বদলে যায় দেশের ফুটবল। বদলে যায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। সঠিক সময় সঠিক ফুটবলারদের দলে ভিড়াতে বেশ চেষ্টায় সফল হন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাবিদ আউয়াল। কানাডা থেকে উড়িয়ে এনেছেন এটাকিং মিডফল্ডার শমিত সোম ও ইতালি থেকে ফাহমিদুলকে। তবু এগার জনে বড় ঘাটতি স্ট্রাইকার পজিশনে। যা কিনা বাংলাদেশকে ডুবিয়েছে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ম্যাচটিতে।
এবার সেই গ্যাফটি পূরণ করতেই হচ্ছে নতুন করে ট্রায়াল। যেখানে অংশ নিচ্ছেন ১৪ দেশের ৫২ জন ফুটবলার। বাফুফের আমন্ত্রণে এরা সবাই নিজ খরচে বাংলাদেশে উড়াল দিয়ে এসেছেন। আজ শুক্রবার ৪৩ জনের উপস্থিতি হয় ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে। এদের সবার চোখে-মুখে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে হামজা চৌধুরীর সাথে দেশের হয়ে খেলার। তাই তো বিএফএফ নেক্সট গ্লোবাল স্টার শীর্ষক ট্রায়ালে যোগ দিতে চলে আসেন। শনিবার ২৮ জুন ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামেই তাদের ট্রায়াল শুরু হবে।
আজ শুক্রবার ট্রায়ালে যোগ দেয়া প্রবাসী ফুটবলারদের সবাই এসেছেন ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেখানে নিজেদের নাম নিবন্ধন করেছেন। তাদের ভিতর থেকে প্রতিভা খুঁজে বের করার জন্য সাতজন স্থানীয় কোচ নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যে তালিকায় রয়েছেন, ছাইদ হাসান কানন, আলফাজ আহমেদ, রক্সিদের মতো সাবেক মাঠ মাতানো খেলোয়াড়। এরা সবাই এখন বিভিন্ন ক্লাবে কোচ হিসেবে কাজ করছেন।
১৪ দেশের ৫২জন প্রবাসী ফুটবলারের মধ্যে হয়ত সবার সুযোগ মিলবে না। প্রত্যেক যাচাই করার জন্য ষাট মিনিটের সুযোগ থাকছে। এই সময়টুকুতেই নিজেদের প্রমান করতে হবে তাদের।
এর আগেও বাংলাদেশ জাতীয় দলের ট্রায়ালে প্রবাসী ফুটবলাররা এসেছিলেন। তাতে সবাই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলতে পারেন নি। গায়ে জার্সি তুলেছেন জামাল ভুইয়া, তারিক কাজী,কাজেম শাহ। ২০১৩ সালে প্রথম প্রবাসী ফুটবলার হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হয় জামাল ভূঁইয়ার (ডেনমার্ক)। একই বছর রিয়াসাত ইসলাম, ২০১৫ সালে জোসেফ নুর রহমান (সুইডেন) ও ২০১৮ সালে বিশাল দাস (ইতালি) এসেছিলেন। কিন্তু তারা জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারেননি। ২০১৯-২০২০ সালে কিংসের হাত ধরে বাংলাদেশে আসেন ফিনল্যান্ড প্রবাসী তারিক কাজী, মাহাদী খান ও নবাব রহমান। এর মধ্যে তারেক কাজী শুধু জাতীয় দলে জায়গা করে নেন। নবাব রহমান জাতীয় দলে ডাক পলেও শেষ পর্যন্ত একাদশে জায়গা করে নিতে পারেননি। থিতু হতে পারেননি রাহবার খান, ইউসুফ জুলকারনাইন। যদিও নিজ যোগ্যতায় দলে জায়গা পাকা করে নেন কানাডা প্রবাসী কাজেম শাহ।
এবার শনিবার থেকে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাচ্ছে বিএফএফ নেক্সট গ্লোবাল স্টার শীর্ষক ট্রায়াল। এজন্য ইউরোপ,আমেরিকাসহ ১৪ দেশ থেকে ৫২ জন ফুটবলারের আগমনের কথা শোনা যাচ্ছে। আজ শুক্রবার ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে এসে নিবন্ধনও করেছেন। অনেকেই এসেছেন অভিভাবক নিয়ে। এদের সবার চোখেমুখে লাল সবুজ দলের হয়ে খেলার স্বপ্ন। তাদের দেখতে সাধারণ মানুষের কৌতুহলেও কমতি ছিলো না। জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের সামনে উৎসুক জনতাও ভিড় করেছে। ২৮-৩০ জুন আনুষ্ঠানিক ট্রায়াল শুরুর আগে ফুটবলার ও তাদের পরিবারের সঙ্গে বাফুফের পক্ষ থেকে পরিচিতি অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
আগামী ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন জাতীয় স্টেডিয়ামে ১৪ দেশের প্রবাসী ফুটবলারদের ট্রায়াল। যার পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিএফএফ নেক্সট গ্লোবাল স্টার’। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, কানাডা, ফিনল্যান্ড, বেলজিয়াম, ওয়েলস, ইতালি, মালয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়া প্রবাসীরা ট্রায়ালে অংশ নেবেন। সবচেয়ে বেশি সাড়া পড়েছে যুক্তরাজ্য থেকে। সেখান থেকে নিবন্ধন করেছেন ২০ ফুটবলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ ফুটবলার নাম লিখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সুইডেন থেকে পাঁচজন এবং কানাডা থেকে আসা দুই ফুটবলার দেবেন ট্রায়াল।
ইংল্যান্ড থেকে ১৬ বছর বয়সী মুসা আল গনি এসেছেন। হামজা চৌধুরীকে দেখে অনুপ্রেরণা নিয়ে বলেছেন, ‘আমি একজন ব্রিটিশ বাঙালি। হামজা চৌধুরীর মতোই। আমি বাংলাদেশ দলে খেলতে চাই। এর জন্য আসা।’
৩০ জুন ট্রায়াল শেষে নির্বাচিতদের তালিকা কখন প্রকাশ হবে, এনিয়ে বাফুফে সহ-সভাপতি ফাহাদ করিম বলেছেন, ‘আমাদের টেকনিক্যাল বিভাগের কাছে ট্রায়ালে অংশ নেওয়া ফুটবলারদের তথ্য, ভিডিও থাকবে। আমাদের কোচদের যখন প্রয়োজন হবে, তখন সেই তথ্যের ভিত্তিতে খেলোয়াড়দের ডাকা হবে।’
ফাহাদ আরও বলেছেন, ‘চূড়ান্তভাবে ৪৮ জন ট্রায়ালে অংশ নেবে, এখানে ৪৩ জন আছে। বাকি পাঁচ জন এখনও ফ্লাইটে, কাল সকালে তারা পৌঁছাবে। আজকে নিবন্ধন হয়েছে, আগামী তিন দিন কী হবে, কারা থাকবেন (মূল্যায়নে) সেসব বিষয়ে তাদের জানানো হয়েছে। তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে আমাদের সহকর্মীরা কথা বলেছেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের প্রতি আস্থা রেখে তারা নিজেদের খরচে ছেলেদের ট্রায়ালে নিয়ে আসায় তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকেও জানানো হয়েছে, আগামী তিন দিনে কী হবে।’
তিনি আরও বলেন,, ‘আগামীকাল ট্রায়ালের জন্য দুই গ্রুপ করা হয়েছে, অনূর্ধ্ব-১৯ ও ২৩। সকাল বেলা দুই ঘণ্টা ও বিকাল বেলা দুই ঘণ্টা, এটাও ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে হবে, কাল যারা সকালে করবে, পরের দিন তারা বিকালে আসবে, এভাবে।’