মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা করে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলো ইরান

- আপডেট সময় : ০১:০২:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
- / ৮৯ বার পড়া হয়েছে
গত নয়দিন ধরে চলছিলো ইরান-ইসরায়েল সংঘাত। আক্রমন-পাল্টা আক্রমনে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে জ্বলছে যুদ্ধের আগুন। এরপর সে আগুনে ঘি ঢেলে দেয় ইসরায়েলের বন্ধু রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের তিনটি পারমানবিক কেন্দ্রে সফল ধ্বংস চালিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি। শুধু তাই নয়, উল্টো ইরানকে শাসিয়ে দেয়া হয়, পাল্টা জবাব দিলে পরিনতি আর ভয়াবহ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার দুদিন পর মধ্যপ্রাচ্যে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাাঁটিগুলোতে হামলা চালিয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়িয়ে দিলো ইরান। পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার প্রতিশোধস্বরূপ কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে আজ সোমাবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলার বিষয়ে জানিয়েছে, দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ এজেন্সি।
তাসনিম জানাচ্ছে, ‘বিশারাত ফাতেহ’ এবং ‘ইয়া আবা আবদুল্লাহ’ নামে অবস্থিত কাতার ও ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে এ হামলা চালানো হয়েছে।এসব হামলায় একাধিক ওয়ারহেড বা ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম খাইবার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটি জানাচ্ছে, প্রথমবার এ ক্ষেপণাস্ত্র কোনো হামলায় ব্যবহার করা হলো। সেইসঙ্গে হামলায় আধুনিক ড্রোনও ব্যবহার করা হয়েছে।
এদিকে, কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, এ হামলা কাতারের সার্বভৌমত্ব, আকাশসীমা এবং জাতিসংঘ সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কাতার রাষ্ট্র হিসেবে, এ প্রকাশ্য আগ্রাসনের জবাবে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সরাসরি জবাব দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে।
এদিকে বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, বোমার সমান মিসাইল ছুড়ে ইরান মূলত উত্তেজনা কমানোর বার্তা দিয়েছে। তারা ইঙ্গিত দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি থামে তাহলে তারাও থেমে যাবে। এদিকে কাতার জানিয়েছে, ইরানের মিসাইল হামলায় তাদের এখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এপি জানায়, ইরানের নিরাপত্তা কাউন্সিল জানিয়েছে, মার্কিন এ ঘাঁটি আবাসিক এলাকা থেকে দূরে হওয়ায় এটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। দেশটি বলেছে, এ হামলা ভ্রাতৃপ্রতিম কাতারের বিপক্ষে নয় এবং দেশটির সঙ্গে যে উষ্ণ ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে সেটি অক্ষুন্ন রাখতে বদ্ধপরিকর তারা।
এদিকে ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কাতারের আল উদেইদ ঘাঁটিতে ১০টি মিসাইল ছুড়েছে ইরান। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ায় নিজেদের আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে কাতার কর্তৃপক্ষ।
কাতারের রাজধানী দোহার কাছাকাছি এলাকায় মার্কিন যে ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে সেটির নাম হচ্ছে আল উদেইদ সামরিক ঘাঁটি। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের এয়ার অভিযানের সদরদপ্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই ঘাঁটি। সেখানে প্রায় ৮ হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান করছেন। ব্রিটেনের সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও এই ঘাঁটিতে পর্যায়ক্রমে অবস্থান করেন। দোহায় অবস্থিত এই ঘাঁটি আবু নাখলা বিমানঘাঁটি নামেও পরিচিত। এই ঘাঁটি বর্তমানে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অভিযানের সদরদপ্তর ও রসদ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে দীর্ঘ বিমান অবতরণ পথ (রানওয়ে) রয়েছে।
কাতার ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে আল উদেইদ ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এরপর ২০০১ সালে ঘাঁটির পরিচালনার দায়িত্ব নেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং ২০০২ সালের ডিসেম্বরে দোহা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির মাধ্যমে ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
২০২৪ সালে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র কাতারে তাদের সামরিক উপস্থিতি আরও ১০ বছরের জন্য বাড়ানোর একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।