ঢাকা ১১:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

অভিবাবকহীন সাত কলেজের ভর্তি নিয়ে সংশয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০১:০৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • / ৪৭ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

এক সময় ছিলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিলো। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া হয় ঢাকার সরকারি সাতটি কলেজকে। কিন্তু ছাত্রদের আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার সাতটি কলেজের দ্বায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা তাদের অধীন থেকে সাতটি কলেজকে উম্মুক্ত করে দিয়েছে।  অর্থাৎ উক্তটি সাতটি কলেজকে অধিভুক্ত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই সাতটি কলেজ নিয়ে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ) হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সময় পার হয়ে যাচ্ছে এখনো পর্যন্ত কার্যত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে অনিশ্চিয়তায় পড়েছে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সরাকারি সাতটি কলেজ এখন বিশ্ববিদ্যালয়হীন।

এ অবস্থায় চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শিক্ষার্থী ভর্তি ঘিরে বিপাকে পড়েছে কলেজগুলো পরিচালনায় গঠিত অন্তর্বর্তী প্রশাসন। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এখন কোথায় (কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন) আছেন, তা জানেন না। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করতে চাইছেন না। সরকার যতক্ষণ না শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিচ্ছেন, ততক্ষণ তারা ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছেন না।

একই কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তারাও। ইউজিসি কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়বিহীন’ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে তো তাদের ডিগ্রি দেওয়া সম্ভব নয়। সেজন্য সরকারকে এ সংক্রান্ত বিষয় স্পষ্ট করে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। তাছাড়া বিষয়টি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠতে পারে।

‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ)’ করতে যে আইন দরকার এবং তার অনুমোদন প্রয়োজন তা এখনো করা হয়নি। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের অধিভুক্তি বাতিল করেছে। ফলে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া আটকে গেছে। সব পাবলিক, প্রাইভেট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি শেষ পর্যায়ে হওয়ায় সাত কলেজের দিকে তাকিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাও চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস  বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমরা দুই দফা মিটিং করেছি। দ্রুত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়েছে। কিন্তু দিনক্ষণ ঠিক করা যায়নি। কারণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে টেকনিক্যাল (পদ্ধতিগত) কিছু বাধা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমরা (সাত কলেজ) এখন কোথায় আছি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নাকি নতুন ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে—এটা স্পষ্ট নয়। ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করেছে। তাহলে যে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে, তারা সনদ পাবে কোথা থেকে? তারা কি সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীনে যাবে বা সনদ পাবে? সেটা সরকারকে প্রজ্ঞাপন দিয়ে অনুমোদন দিতে হবে। তাহলে সব ঝামেলার অবসান হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। আশা করি, শিগগির শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের জানান, ‘এটা (সাত কলেজে ভর্তির অনুমোদন) নিয়ে কাজ চলছে। শিগগির এ অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করছি। খুব বেশি দেরি হয়তো হবে না।’

চলতি মাসে যদি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদনটা পেয়ে যাই, তাহলে জুলাইয়ের শুরুতেই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিতে পারবো। আবেদন প্রক্রিয়া শেষে আগস্টের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারলে সেপ্টেম্বরে ভর্তি শেষ করা সম্ভব। তাহলে আমরা সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের শুরুতে ক্লাস শুরু করতে পারবো বলে জানান সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসক অধ্যাপক কে এম ইলিয়াস।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী- বিজ্ঞান, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ মিলিয়ে ২৩ হাজার ৫২৮টি আসন ছিল। তার মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদে মোট আসন ছিল ৮ হাজার ৬২৭টি। এর মধ্যে কোটায় আসন সংখ্যা ৬১৮। এছাড়া কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে আসনসংখ্যা ১০ হাজার ১৯টি। কোটায় ভর্তি হতে পারবেন ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী। ব্যবসা শিক্ষা অনুষদে আসন ছিল চার হাজার ৮৯২টি, যার মধ্যে কোটায় আসন সংখ্যা ৩৯০টি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অভিবাবকহীন সাত কলেজের ভর্তি নিয়ে সংশয়

আপডেট সময় : ০১:০৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

এক সময় ছিলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিলো। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া হয় ঢাকার সরকারি সাতটি কলেজকে। কিন্তু ছাত্রদের আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার সাতটি কলেজের দ্বায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা তাদের অধীন থেকে সাতটি কলেজকে উম্মুক্ত করে দিয়েছে।  অর্থাৎ উক্তটি সাতটি কলেজকে অধিভুক্ত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই সাতটি কলেজ নিয়ে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ) হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সময় পার হয়ে যাচ্ছে এখনো পর্যন্ত কার্যত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে অনিশ্চিয়তায় পড়েছে দেশের হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সরাকারি সাতটি কলেজ এখন বিশ্ববিদ্যালয়হীন।

এ অবস্থায় চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শিক্ষার্থী ভর্তি ঘিরে বিপাকে পড়েছে কলেজগুলো পরিচালনায় গঠিত অন্তর্বর্তী প্রশাসন। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এখন কোথায় (কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন) আছেন, তা জানেন না। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করতে চাইছেন না। সরকার যতক্ষণ না শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিচ্ছেন, ততক্ষণ তারা ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারছেন না।

একই কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কর্মকর্তারাও। ইউজিসি কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়বিহীন’ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে তো তাদের ডিগ্রি দেওয়া সম্ভব নয়। সেজন্য সরকারকে এ সংক্রান্ত বিষয় স্পষ্ট করে প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। তাছাড়া বিষয়টি জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠতে পারে।

‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ)’ করতে যে আইন দরকার এবং তার অনুমোদন প্রয়োজন তা এখনো করা হয়নি। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের অধিভুক্তি বাতিল করেছে। ফলে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া আটকে গেছে। সব পাবলিক, প্রাইভেট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি শেষ পর্যায়ে হওয়ায় সাত কলেজের দিকে তাকিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরাও চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।

সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস  বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমরা দুই দফা মিটিং করেছি। দ্রুত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়েছে। কিন্তু দিনক্ষণ ঠিক করা যায়নি। কারণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে টেকনিক্যাল (পদ্ধতিগত) কিছু বাধা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমরা (সাত কলেজ) এখন কোথায় আছি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নাকি নতুন ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে—এটা স্পষ্ট নয়। ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করেছে। তাহলে যে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে, তারা সনদ পাবে কোথা থেকে? তারা কি সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীনে যাবে বা সনদ পাবে? সেটা সরকারকে প্রজ্ঞাপন দিয়ে অনুমোদন দিতে হবে। তাহলে সব ঝামেলার অবসান হবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। আশা করি, শিগগির শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের জানান, ‘এটা (সাত কলেজে ভর্তির অনুমোদন) নিয়ে কাজ চলছে। শিগগির এ অনুমোদন দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করছি। খুব বেশি দেরি হয়তো হবে না।’

চলতি মাসে যদি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদনটা পেয়ে যাই, তাহলে জুলাইয়ের শুরুতেই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিতে পারবো। আবেদন প্রক্রিয়া শেষে আগস্টের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারলে সেপ্টেম্বরে ভর্তি শেষ করা সম্ভব। তাহলে আমরা সেপ্টেম্বরের শেষে বা অক্টোবরের শুরুতে ক্লাস শুরু করতে পারবো বলে জানান সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসক অধ্যাপক কে এম ইলিয়াস।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী- বিজ্ঞান, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ মিলিয়ে ২৩ হাজার ৫২৮টি আসন ছিল। তার মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদে মোট আসন ছিল ৮ হাজার ৬২৭টি। এর মধ্যে কোটায় আসন সংখ্যা ৬১৮। এছাড়া কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে আসনসংখ্যা ১০ হাজার ১৯টি। কোটায় ভর্তি হতে পারবেন ৭৯৯ জন শিক্ষার্থী। ব্যবসা শিক্ষা অনুষদে আসন ছিল চার হাজার ৮৯২টি, যার মধ্যে কোটায় আসন সংখ্যা ৩৯০টি।