মিসাইল আটকানোর ক্ষমতা হারাচ্ছে ইসরায়েল, সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত হলে দাঁত ভাঙ্গা জবাব

- আপডেট সময় : ০৪:৩৩:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
- / ৪২ বার পড়া হয়েছে
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার হামলা-পাল্টা হামলা থেমে নেই। তাতে ধ্বংস হচ্ছে শহর ও জনপথ। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। দুই হাজার কিলোমিটার দূরত্বে এই দুই দেশের সংঘাত থেমে নেই। পরমানু বোমা তৈরির অজুহাতে ইরান হামলা চালায় ইসরায়েল। চারিদিকে গুঞ্জন ইসরায়েলদের সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। কোন অবস্থাতেই ইরানকে তারা পরামানু বোমা তৈরি করতে দিবে না। যদিও ইরান বরাবরই বলে আসছে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সত্য নয়। জাতিসংঘ সহ নানা দেশের সহায়তা যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে ইরান।
তবে ইসরায়েলের হামলায় থেমে নেই তারা। জোরালোভাবে চালানো হচ্ছে পাল্টা হামলা। দুই দেশের এই সংঘাতে তেহরান ও তেলআবিব জ্বলছে আগুনে। একদিন ইসরায়েল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে ইরাকের প্রেসিডেন্টের মতো করুণ দশা করার হুঙ্কার দিয়েছে। তাতে থেমে নেই ইরানের পাল্টা হামলা। তেল আবিবে একের এর এক ব্ল্যাস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এতে দখলদার ইসরায়েল ক্রমাগত দূর্বল হয়ে পড়ছে। তাদের ক্রমাগত ইরানের মিসাইল আটকানোর ক্ষমতা কমে আসছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। মার্কিন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলিদের অন্যতম শক্তিশালী অ্যারো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফুরিয়ে আসছে।
এদিকে ইরান হুঙ্কার দিয়েছে যদি যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে যুক্ত হয় তাহলে এর দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে বলে ঘোষনা দিয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আলি বাহরেইনি জেনেভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানিয়েছেন। আলি বাহরেইনি বলেছেন, ‘‘আমরা ইসরায়েলের কার্যক্রমের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে সহানুভূতিশীল কিংবা জড়িত বলে মনে করছি।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা ইসরায়েলকে যেভাবে জবাব দিচ্ছি, ঠিক একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রকেও দেব। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সামরিক বাহিনী উপযুক্ত, সমানুপাতিক ও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাবে। আমরা এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততার মাত্রা সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছি…। যখনই প্রয়োজন হবে, আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাব।’’
এদিকে অ্যারোর সক্ষমতা কমে আসায় ইরানের দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল আটকাতে বেগ পেতে হবে দখলদারদের। তবে ইসরায়েল ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের এ প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করেনি। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল দাবি করেছে, ইরান এখন পর্যন্ত যেসব মিসাইল ছুড়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই ইসরায়েল সফলভাবে ভূপাতিত করেছে। যদিও ইসরায়েল প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয়ের দাবি তারা ইরানের ৪০ শতাংশ মিসাইল লঞ্চার ধ্বংস করেছে।
এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নিয়ে বুধবার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র এখনও সরাসরি কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। বরং তারা এই সংঘাতে পরোক্ষভাবে যেমন—ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করতে সহায়তা করছে।
তবে দুই দেশের চলমান উত্তেজনায় মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রশাসনের অন্তত তিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে অন্যান্য কিছু যুদ্ধবিমানের মোতায়েনও বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর আগে, মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোশালে দেওয়া এক পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত বাহরেইনি ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও চরম শত্রুতাপূর্ণ’’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা এসব কথা উপেক্ষা করতে পারি না। ট্রাম্প যা বলছেন, আমরা তা সতর্কভাবে নজরদারি করছি। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেব।’’
বাহরেইনি বলেন, ইসরায়েলের হামলার আরও কঠোর জবাব দেবে ইরান। আমাদের জনগণ, নিরাপত্তা ও ভূখণ্ড রক্ষায় আমরা কোনও ধরনের দ্বিধা করব না। আমরা অত্যন্ত কঠোর, শক্তিশালী ও দায়িত্বপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দেখাব। সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল।