৭ দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু

- আপডেট সময় : ১২:৩৪:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
- / ৪০ বার পড়া হয়েছে
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাত কার্যদিবসের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হবে। এ কথা জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
আজ সোমবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিষয়টিতে শুনানি ছিল। এই শুনানির জন্য ট্রাইবুনালে দেওয়া পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি এবং তারা পলাতক অবস্থায় ভারতে অবস্থান করছেন।
ট্রাইব্যুনালে শুনানিতে তাদের বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা সংক্রান্ত প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গত ১ জুন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। তাদের গ্রেপ্তার করা গেল কি না, সে বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে সেদিন ১৬ জুন দিন ধার্য করা হয়।
এ মামলার আরেক আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অভ্যুত্থানের সময় আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন। সোমবার কারাগার থেকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদালতকে বলেন, শেখ হাসিনা এবং আসাদুজ্জামান খান কামালের ঠিকানায় গিয়ে পুলিশ তাদের পায়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে শোনা গেছে, তারা দেশের বাইরে আছেন। এ অবস্থায় নিয়ম অনুযায়ী পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের হাজির হতে বলতে হবে।
ট্রাইব্যুনাল এরপর একটি বাংলা এবং একটি ইংরেজি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেয়। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৪ জুন তারিখ রেখেছে আদালত। নিয়ম অনুযায়ী, এর পরের ধাপে দুই আসামিকে পলাতক দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অভিযোগের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গত ১ জুন সাড়ে আট হাজার পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। এই বিচারকাজ সারা বিশ্বকে দেখাতে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ট্রাইব্যুনালের শুনানি সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।
তদন্ত শেষে গত ১২ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সেখানে শেখ হাসিনাকে জুলাই–অগাস্টের নৃশংসতার ‘মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
অভিযোগ দাখিলের পর প্রসিকিউশনের আবেদনে গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দেশ ছাড়ার পর থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
জুলাই-অগাস্টের দমন-পীড়নে ভূমিকার জন্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্যও ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার শেষ করার দাবি জানিয়ে আসছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সম্প্রতি এক ফেইসবুক পোস্টে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলেই এ বিচার শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।