চামড়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনিশ্চয়তা, টেনারিগুলোতে সাতদিনে আসে সাড়ে ৫লাখ চামড়া

- আপডেট সময় : ১২:৪৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
- / ৪০ বার পড়া হয়েছে
বিগত প্রায় এক দশকের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে এবার কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে চেয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে এ বছর অন্য বছরগুলোর তুলনায় চামড়ার সরবরাহ বেশ কম। এ বছর চামড়া কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না, এমনটিই বলছেন ট্যানারি মালিকরা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য বলছে, সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৯২১টি চামড়া সংরক্ষণ করা গেছে। এরমধ্যে গরু ও মহিষের চামড়া ৪১ লাখ ১ হাজার ৫৮২টি এবং ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ১৬ লাখ ৬২ হাজার ৩৮০টি।
বিসিক ধারণা করছে, সর্বমোট সংগ্রহের সংখ্যা শেষ পর্যন্ত ৭০ লাখে ঠেকতে পারে। যেখানে গত বছর চামড়া সংগ্রহের এ সংখ্যা ছিল ৮৫ লাখের বেশি। অন্যদিকে, এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের জন্য ট্যানারি মালিকদের টার্গেট ছিল প্রায় ৯০ লাখ। মূলত, কোরবানি কম হওয়ায় সবোর্চ্চ ৭৫ লাখের মতো চামড়া সংগ্রহ করা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে ঈদের দিন থেকে ১৬ জুন দুপুর পর্যন্ত ৫ লাখ ৪৩ হাজার ১৪১টি চামড়া ট্যানারিগুলোতে প্রবেশ করেছে। এরমধ্যে গরু ও মহিষ ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৪৮৩টি এবং ছাগল ও ভেড়া ৭৬ হাজার ৬৫৮টি- তথ্য বিসিকের।
জানতে চাইলে বিসিকের লেদার সেলের মহাব্যবস্থাপক ড. ফরহাদ আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার ঈদুল আজহায় ৯১ লাখ পশু কোরবানি করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৩ লাখ কম। যে কারণে চামড়ার সংখ্যাও কমেছে।’
এবার ঈদুল আজহায় ৯১ লাখ পশু কোরবানি করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ১৩ লাখ কম। যে কারণে চামড়ার সংখ্যাও কমেছে।- বিসিকের লেদার সেলের মহাব্যবস্থাপক ড. ফরহাদ আহম্মেদ
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে গত বছরের ‘ছাগল-কাণ্ড’ এবার কোরবানি নিয়ে ‘শো-আপ’ করার প্রবণতা কমিয়েছে। যে কারণে অনেকে কম কোরবানি দিয়েছেন। এছাড়া ক্ষমতার পালাবদলে অনেকে বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন, তারা কোরবানি করেননি। সবকিছু মিলিয়ে এবার চামড়া সংগ্রহ কম।’
এদিকে, ট্যানারিশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘চলতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ৯০ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ট্যানারি মালিকেরা। তবে কোরবানি কম হওয়ায় এবং ঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো ও লবণজাত করা যায়নি বলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘এবার খুব বেশি চামড়া নষ্ট হয়নি। তারপরও অনেকে মসজিদ-মাদরাসায় চামড়া সময় মতো না দিয়ে ফেলে রেখেছে, বিক্রির জন্য ক্রেতা পায়নি। তারা চামড়া নষ্ট করেছে। শেষ সময় আবার সেগুলো বিক্রি করতে গিয়ে দাম পায়নি। ফরিয়ারাও নেয়নি। কারণ, নষ্ট চামড়া নিলে তাতে খরচ বেশি হয়। তখন অনেকসময় সেটা বিনা পয়সায়ও ব্যবসায়ীরা নিতে চান না।’
এদিকে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মতো এবারও ছাগলের চামড়া কিনতে কেউ আগ্রহ দেখাননি। ফলে প্রচুর সংখ্যক ছাগলের চামড়া নষ্ট হয়েছে। এছাড়া অদক্ষ লোক দিয়ে পশুর চামড়া ছাড়ানো এবং ঠিক সময়ে লবণ না দেওয়ায় কিছু চামড়া নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে এ সংখ্যা তিন থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত হতে পারে।
সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৫৭ লাখ ৬৩ হাজার ৯২১টি চামড়া সংরক্ষণ করা গেছে। এরমধ্যে গরু ও মহিষের চামড়া ৪১ লাখ ১ হাজার ৫৮২টি এবং ছাগল ও ভেড়ার চামড়া ১৬ লাখ ৬২ হাজার ৩৮০টি।- তথ্য বিসিকের
তবে সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলছেন, পর্যাপ্ত লবণ সরবরাহের পাশাপাশি সরকারের তৎপরতার কারণে এ বছর চামড়া কম নষ্ট হয়েছে। ঈদের তৃতীয় দিন ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যেন চামড়ার নির্ধারিত দাম পান সেজন্য আমরা পর্যাপ্ত লবণ সরবরাহসহ চামড়া সংরক্ষণে ভালোভাবে চেষ্টা করেছি। অভিজ্ঞতার অভাবে কিছু চামড়া নষ্ট হয়েছে। যাদের চামড়া নষ্ট হয়েছে বা মান খারাপ হয়েছে, তারা দাম কম পেয়েছেন।
ঈদের চতুর্থ দিন গত ১০ জুন নাটোরের চকবৈদ্যনাথ এলাকায় চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, গত ১০ বছরের মধ্যে এবছর সবচেয়ে বেশি দামে চামড়া বিক্রি হয়েছে। আগামী বছর আরও দাম বাড়বে।
কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে এবছর মাদরাসা, এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে ৩০ হাজার টন লবণ সরবরাহ করে সরকার। যার মধ্যে মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে বিতরণ করা হয় সাড়ে ১১ হাজার টন লবণ। সরকারের পরিকল্পনা ছিল, স্থানীয়ভাবে চামড়া সংরক্ষণ বাড়ানো। কিন্তু তাতেও চামড়া সংরক্ষণ তো বাড়েইনি, উল্টো কমেছে।
অন্যদিকে, চামড়া সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে লবণ সরবরাহ করেছিল সরকার। কিন্তু এসব লবণ তেমন কাজে আসেনি। অনেক প্রতিষ্ঠান চামড়া সংরক্ষণ করেনি। আবার লবণ নিয়েছে, এমন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ না করেই চামড়া বিক্রি করে দিয়েছে। মাঠের তথ্য বলছে, সরকারের সরবরাহ করা লবণ নিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করেছে, এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম।