স্বপ্নের ট্রফি জয় দ.আফ্রিকার, চোকার্স বদনাম মুচে এখন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন

- আপডেট সময় : ১১:৪৭:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫
- / ৪৩ বার পড়া হয়েছে
ক্রিকেট মেধা আছে দেশটির ক্রিকেটারদের। রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দেয়ার মতো ক্রিকেটারও রয়েছে অনেক। কিন্তু কেন যেন ব্যর্থতার গন্ডি থেকে বের হতে পারছিলো না। ব্যর্থতার গিট শক্তভাবে আটকা পড়েছিলো। কোন কিছুতেই যেন খুলছে না। ওয়ান ডে বিশ্বকাপ বলুন আর সংক্ষিপ্ত ভার্সনের ক্রিকেটের কথাই বটেলুন না কেন, দ.আফ্রিকার বরাবরই থাকে হটফেভারিট। টেস্ট ক্রিকেটেও তাদের জুড়ি নেই। কিন্তু ট্রফি জেতা আর হচেছ না।
অবশেষে দীর্ঘদিনের সেই আকাঙ্খা ঘুচলো আজ টেস্ট ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে। সবচেয়ে আরাধ্য সেই শিরোপার দেখা মিললো। প্রথমবারের মতো বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সব মিলে ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় কোন বড় ট্রফি ঘরে তুললো প্রোটিয়ারা। এর আগে ১৯৯৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আইসিসি নকআউট বিশ্বকাপের (বর্তমান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি) প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
লন্ডনের বিখ্যাত লর্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য ২৮২ রানের অবিশ্বাস্য এক লক্ষ্যের সামনে দাঁড়িয়েছিল প্রোটিয়ারা। তবে সেই অবিশ্বাস্য কাজটি করে দিলেন এইডেন মারক্রাম নামে একটি হিমালয় পর্বত। অস্ট্রেলিয়ান আগুনে পেস বোলিংয়ের সামনে হিমালয়ের মত দৃঢ় পদক্ষেপে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। অবশেষে স্বপ্নপূরণ, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা
২০৭ বলে ১৩৬ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেললেন মারক্রাম। টেস্ট ক্রিকেটে তো ৪০০ রানের ইনিংসও আছে। ৩০০ কিংবা ৩০০ প্লাস ইনিংস আছে অনেক। ম্যাচ জেতানো অনেক ইনিংসও আছে; কিন্তু এইডেন মারক্রামের এই ১৩৬ রানের ইনিংসটা স্রেফ ইতিহাস লিখলো। ইতিহাসের গতিপথ নির্ণয়কারী ইনিংস এটা। এই একটি ইনিংস না খেললে, আরও কতকাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে শিরোপার অপেক্ষায় থাকতে হতো, কে জানে!
ম্যাচটা শেষ করে দিয়ে আসতে পারেননি হয়তো; কিন্তু জয়ের আসল কাজটি তিনিই করে দিয়ে গেছেন। শুধু সেঞ্চুরি করে ক্ষান্ত হননি, সঙ্গে আরও ৩৬ রান যোগ করে প্রোটিয়াদের সকল বিপদমুক্ত করেছেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট হারিয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শুধু এইডেন মারক্রামই নন, দক্ষিণ আফ্রিকার এই ঐতিহাসিক জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। মারক্রামের সঙ্গে ১৪৭ রানের অনবদ্য এক জুটি গড়েন তিনি। চতুর্থ দিন সকালে তিনি ব্যক্তিগত ৬৬ রানের মাথায় আউট হয়ে যান। তবে, তার আর মারক্রামের জুটিই প্রোটিয়াদের জয়ের পথ রচনা করে।
‘চোকার্স’ তকমাটা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য যেন ছিল নির্ধারিত। দীর্ঘ ২২ বছর নিষিদ্ধ থাকার পর ১৯৯১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ১৯৯২ বিশ্বকাপ। সেই থেকে এই দলটি যে কোনো টুর্নামেন্টে সব সময়ই ফেবারিট। সবচেয়ে সেরা এবং সবচেয়ে শক্তিশালী দল নিয়ে খেলতে এসে কখনো বৃষ্টির বাধায়, কখনো অযাচিত কোনো পারফরম্যান্স করে বিদায় নিতে হয়। শিরোপা দেখাই মেলে না এই দলটির।
বিশ্বকাপে সেমিফাইনালই সর্বোচ্চ দৌড় ছিল প্রোটিয়াদের। সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ‘চোকার্স’ তকমা ঘোচাতে পারেনি। এবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠে আসার পর সবারই প্রত্যাশা ছিল চোকার্স তমকাটা ঘোচাতে পারবে টেম্বা বাভুমার দল।
কিন্তু লর্ডসে টস জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে এবং তাদেরকে ২১২ রানে অলআউট করে দেয়ার পরও স্বস্তি মিলছিল না। সবাই ধরে নিয়েছিল প্রোটিয়ারা এবারও ‘চোকার্স’ হয়েই থাকবে। কারণটা হলো, প্রথম ইনিংসেই ১৩৮ রানে অলআউট হয় গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ৭৪ রানের লিড পেয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামার পর অস্ট্রেলিয়াকে ভালোভাবেই চেপে ধরেছিল। ৭৩ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর ১০০’র মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়; কিন্তু গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে সত্যিই ঘুরে দাঁড়ালো অস্ট্রেলিয়া। মিচেল স্টার্কের ব্যাটে। তার আগে অ্যালেক্স ক্যারে ৪৫ রান করে কিছুটা প্রতিরোধের ইনিংস খেলেন। এরপর ৫৮ রানে অপরাজিত থাকেন স্টার্ক। হ্যাজলউড ১৭ রান করে ভালোই সঙ্গ দেন।
২০৭ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়াল দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে দাঁড়ায় ২৮২ রনের বিশাল লক্ষ্য। যে দলটি ১৩৮ রানে প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে যায়, তাদের সামনে চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রানের লক্ষ্য, সত্যিই বিশাল একটি ব্যাপার। তারওপর বোলারগুলোর নাম দেখুন! প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজলউড, বিউ ওয়েবস্টার, নাথান লিওন। এসব বোলারকে মোকাবেলা করে ২৮২ রান তোলা এই উইকেটে স্বপ্নেও কল্পনা করার কথা নয়, কোনো দলের পক্ষে।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ওপেনার রায়ান রিকেলটনকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। দলীয় ৯ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৬ রানে বিদায় নেন রিকেলটন। এরপরই জবাব দিতে শুরু করে প্রোটিয়ারা। এইডেন মারক্রাম ও উইয়ান মুলডার মিলে গড়েন ৬১ রানের জুটি। ৫০ বলে ২৭ রান করে মুলডার আউট হয়ে গেলেও, অসি বোলিং মোকাবেলা করে টিকে থাকার মন্ত্র ফুঁকে যান মারক্রামদের হৃদয়ে।
পরের জুটিটা হলো ১৪৩ রানের। মারক্রাম আর টেম্বা বাভুমা। এই একটি জুটিই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিলো। ৬৬ রান করে বাভুমা আউট হলেও মারক্রাম দলকে টেনে নিয়ে যান ২৭৬ রান পর্যন্ত। জয়ের জন্য তখন বাকি মাত্র ৬ রান। এর মধ্যে ট্রিস্টান স্টাবস ৮ রানে আউট হন।
শেষ পর্যন্ত ডেভিড বেডিংহ্যাম ২১ এবং কাইল ভেরাইনি ৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। মিচেল স্টার্কের কাছ থেকে জয়সূচক রানটি নিয়েই বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে প্রোটিয়ারা।