ঢাকা ০৮:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

তিন মাসে ব্যাংকখাতে আমানতে বেড়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:১৮:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
  • / ৪৩ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে দেশের ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এতে করে মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এই পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৩৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা, যা প্রায় ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমানত বেড়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ২০২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের মার্চ শেষে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।

এই সময়ে গ্রামীণ এলাকায় আমানত প্রবৃদ্ধি ছিল তুলনামূলক বেশি। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে গ্রামীণ এলাকায় আমানত বেড়েছে তিন শতাংশের বেশি, যেখানে শহরাঞ্চলে প্রবৃদ্ধি ছিল এক দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে মোট আমানতের অধিকাংশই এখনো শহরকেন্দ্রিক। মার্চ শেষে শহরাঞ্চলের আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ২২ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের প্রায় ৮৪ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে আমানতের পরিমাণ তিন লাখ এক হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমানতের সঙ্গে সুদহারও বেড়েছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে গড় সুদহার ছিল ৬.০৪ শতাংশ, যা মার্চ শেষে বেড়ে সোয়া ছয় শতাংশ হয়েছে। সুদহার বৃদ্ধিই আমানত প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে জনগণের আস্থা কমে গিয়েছিল। বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দেয় এবং কিছু ব্যাংক আমানত ফেরত দিতেও ব্যর্থ হয়। সরকারও ব্যাংক খাত থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে অর্থ ধার করায় সুদহার বেড়ে যায়, যার ফলে আমানতের প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়ে।

তবে গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর একাধিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তনের পর নতুন ব্যবস্থাপনা আমানত সংগ্রহে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তারা সুদহার বাড়িয়ে নতুন আমানত আকর্ষণ করে এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ নেয়। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে সামগ্রিক আমানত প্রবৃদ্ধিতে।

এদিকে, তিন মাসে আমানত যেমন বেড়েছে, তেমনি ঋণও বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। গত প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এই পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা বা এক দশমিক ৭৭ শতাংশ।

ঋণের ক্ষেত্রেও শহর এবং গ্রামের মধ্যে বড় পার্থক্য দেখা গেছে। মার্চ শেষে মোট ঋণের ৯২ শতাংশ, অর্থাৎ ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা গেছে শহরাঞ্চলে। অন্যদিকে, গ্রামীণ অঞ্চলে গেছে মাত্র এক লাখ ৩৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের মাত্র আট শতাংশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

তিন মাসে ব্যাংকখাতে আমানতে বেড়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা

আপডেট সময় : ০৯:১৮:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিন মাসে দেশের ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এতে করে মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে আমানতের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে এই পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৩৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা, যা প্রায় ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমানত বেড়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ২০২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের মার্চ শেষে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।

এই সময়ে গ্রামীণ এলাকায় আমানত প্রবৃদ্ধি ছিল তুলনামূলক বেশি। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে গ্রামীণ এলাকায় আমানত বেড়েছে তিন শতাংশের বেশি, যেখানে শহরাঞ্চলে প্রবৃদ্ধি ছিল এক দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে মোট আমানতের অধিকাংশই এখনো শহরকেন্দ্রিক। মার্চ শেষে শহরাঞ্চলের আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ২২ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের প্রায় ৮৪ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে আমানতের পরিমাণ তিন লাখ এক হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমানতের সঙ্গে সুদহারও বেড়েছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে গড় সুদহার ছিল ৬.০৪ শতাংশ, যা মার্চ শেষে বেড়ে সোয়া ছয় শতাংশ হয়েছে। সুদহার বৃদ্ধিই আমানত প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে জনগণের আস্থা কমে গিয়েছিল। বেশ কয়েকটি ব্যাংকে তারল্যসংকট দেখা দেয় এবং কিছু ব্যাংক আমানত ফেরত দিতেও ব্যর্থ হয়। সরকারও ব্যাংক খাত থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে বেশি পরিমাণে অর্থ ধার করায় সুদহার বেড়ে যায়, যার ফলে আমানতের প্রবৃদ্ধি স্থবির হয়ে পড়ে।

তবে গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর একাধিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পর্ষদে পরিবর্তনের পর নতুন ব্যবস্থাপনা আমানত সংগ্রহে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তারা সুদহার বাড়িয়ে নতুন আমানত আকর্ষণ করে এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে কার্যকর উদ্যোগ নেয়। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে সামগ্রিক আমানত প্রবৃদ্ধিতে।

এদিকে, তিন মাসে আমানত যেমন বেড়েছে, তেমনি ঋণও বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। গত প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এই পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ২৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা বা এক দশমিক ৭৭ শতাংশ।

ঋণের ক্ষেত্রেও শহর এবং গ্রামের মধ্যে বড় পার্থক্য দেখা গেছে। মার্চ শেষে মোট ঋণের ৯২ শতাংশ, অর্থাৎ ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা গেছে শহরাঞ্চলে। অন্যদিকে, গ্রামীণ অঞ্চলে গেছে মাত্র এক লাখ ৩৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের মাত্র আট শতাংশ।