ঢাকা ০২:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

কোরবানীর চামড়া নিয়ে ষড়যন্ত্র চরমে,কেনার লোক নেই, পড়ে আছে যত্রতত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১১:৩১:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫
  • / ২০৩ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কোরবানী পশুর দাম চড়া। কিন্তু চামড়ার  দাম নেই। অথচ এক সময় এই চামড়া ক্রয়ে দেশজুড়ে হৈচৈ লেগে যেতো। মাঠ পর্যায়ে অগ্রিম বলে আসা হতো। একটি চামড়া ক্রয়ের জন্য একাধিক লোকের ভীড় হতে দেখা যায়। ঈদের তিনদিন ধরে বেচা কেনা চলতে হরদমে। চামড়া বুজে দর হাঁকানো হতো। দুই,তিন,চার পাঁচ হাজার এমন কি তারও উপরে। কিন্তু সময় গড়াতে সেই চামড়া এখন আর কেউ কিনতে আসে না। সরকার কতৃক দর নির্ধারণেও সাড়া পড়েনি। অর্ধেকের চেয়েও কম দামে দর হাঁকাচ্ছেন চামড়ার মহাজনরা। ফলে সিজনাল এবং ছোট ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে। লোকশানগুনতে হচ্ছে তাদের। যে কারণে ঈদের দ্বিতীয়দিনে চামড়া ক্রয়ে দেখা যায়নি তেমন কোন আগ্রহ।

এমন কি রাজধানী ঢাকায় কোথাও কোথাও কোরবানীর পশুর চামড়া ক্রয়ের ক্রেতা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। উপায়ন্তর না দেখে রাস্তার পাশে অনেককে চামড়া ফেলে যেতে দেখা যায়। সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি এসে রাতে তা নিয়ে যায়। আজ রোববার ঈদের দ্বিতীয় দিনেও দেখা মিলেছে এমন চিত্র। আছর নামাজ পড়ে খিলগাও রাস্তা ধরে যেতেই আমতলী মসজিদের পাশেই চামড়ার স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

গরুর চামড়ায় কিছুটা দরদাম উঠলেও ছাগলের চামড়া নিতে চরম অনীহা। ময়লা হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিনে চলে ছাগলের কাাঁচা চামড়া গুলো। অথচ কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গতবারের চেয়ে এবার ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্স ল্যাব ও পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকা ঘুরে গতকাল দেখা যায়, লবণ ছাড়া বড় ও মাঝারি গরুর কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর যেসব গরুর চামড়া আকারে তুলনামূলক ছোট ও মান কিছুটা খারাপ, সেগুলো ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে দাম আরও কম।

চামড়ার আড়তদার ও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ঈদে ৮০-৮৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ট্যানারিগুলো। ঈদের দিন কাঁচা চামড়া আসার হারও সন্তোষজনক। গতবারের চেয়ে প্রতি পিস চামড়া কিছুটা বেশি দরে কিনছেন বলেও দাবি করেন তাঁরা। যদিও গত কয়েক বছরের মতো এবারও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চামড়া বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য মেলেনি। কেউ কেউ বলেছেন, গতবারের চেয়েও দাম কম।

গত ২৬ মে কোরবানি পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এ ছাড়া ঢাকায় কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাধারণত বড় আকারের গরুর চামড়া ৩১-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ঢাকায় মাঝারি আকারের গরুর ২৫ বর্গফুটের একটি লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬২৫ টাকা।

পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। সেখানে গতকাল শনিবার বিকেলে বড় ও মাঝারি আকারের গরুর কাঁচা চামড়া সর্বোচ্চ ৭০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সায়েন্স ল্যাব ও হাজারীবাগ এলাকায় একই দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। গত বছরও প্রায় একই রকম দাম ছিল।

জানতে চাইলে পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি মঞ্জুরুল হাসান  বলেন, সরকার নির্ধারিত দরে ট্যানারির মালিকেরা আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া কিনবেন। তবে আড়তদারেরা চামড়া কেনার সময় ২০-৩০ শতাংশ বাদ দেন। আবার ২০ ফুটের কম আয়তনের চামড়া তাঁরা নিতে চান না। সব মিলিয়েই আসলে কাঁচা চামড়া কেনেন আড়তদারেরা।

অবশ্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি এবার ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ১০৬ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ১২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর ১০৪ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চলতি অর্থবছর রপ্তানি বেড়েছে। সেই হিসাবে চামড়ার দামও কিছুটা বেশি হওয়া উচিত। ট্যানারির মালিকেরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গতবারের চেয়ে ১০০-১৫০ টাকা বেশি দামে কিনেছেন প্রতিটি চামড়া। তবে বিকেলে দাম পড়ে গেছে।

সর্বশেষ ২০১৩ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বেশি ছিল। সেবার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৮৫-৯০ টাকা। তার পর থেকে বিভিন্ন কারণে চামড়ার দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। ২০১৯ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে বড় ধরনের ধস নামে। ন্যূনতম দাম না পেয়ে দেশের অনেক অঞ্চলে চামড়া সড়কে ফেলে ও মাটিতে পুঁতে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তাতে প্রায় ২৪২ কোটি টাকার চামড়ার নষ্ট হয়। পরের বছর সরকার তৎপরতা বাড়ালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। তবে বর্গফুটপ্রতি দাম কমে ৩৫-৪০ টাকায় দাঁড়ায়। তারপর গত চার বছর সরকার নির্ধারিত দাম কিছুটা বাড়লেও কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে সেই দরের চেয়ে কম দামে।

চামড়া দরপতনে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম।  তিনি বলেন, ইসলামবিরোধী চামড়া সিন্ডিকেট কৌশলে দরপতন ঘটিয়ে কোরবানির চামড়ার বাজার ধ্বংস করছে। এতে করে একদিকে গরিব-অসহায় মানুষ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ভাবে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোও বঞ্চিত হচ্ছে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা থেকে। রোববার (৮ জুন) সংগঠনটির প্রচার ও দাওয়াহ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।

মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, দেশে ইসলামী অনুশাসনের অভাবেই আজও অনেক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। কোরবানির সময় বহু মানুষ লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে কোরবানিতে অংশ নিতে পারে না। অথচ কোরবানির চামড়া বিক্রি করে দেশের অনেক কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যায়। সেই চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার যে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করেছে, বাস্তবে কেউ সে দামে চামড়া কিনছে না। এতে বোঝা যাচ্ছে, চামড়া সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় এবং এটি কওমি শিক্ষা ব্যবস্থাকে আর্থিকভাবে দুর্বল করতে ষড়যন্ত্র করছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কোরবানীর চামড়া নিয়ে ষড়যন্ত্র চরমে,কেনার লোক নেই, পড়ে আছে যত্রতত্র

আপডেট সময় : ১১:৩১:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

কোরবানী পশুর দাম চড়া। কিন্তু চামড়ার  দাম নেই। অথচ এক সময় এই চামড়া ক্রয়ে দেশজুড়ে হৈচৈ লেগে যেতো। মাঠ পর্যায়ে অগ্রিম বলে আসা হতো। একটি চামড়া ক্রয়ের জন্য একাধিক লোকের ভীড় হতে দেখা যায়। ঈদের তিনদিন ধরে বেচা কেনা চলতে হরদমে। চামড়া বুজে দর হাঁকানো হতো। দুই,তিন,চার পাঁচ হাজার এমন কি তারও উপরে। কিন্তু সময় গড়াতে সেই চামড়া এখন আর কেউ কিনতে আসে না। সরকার কতৃক দর নির্ধারণেও সাড়া পড়েনি। অর্ধেকের চেয়েও কম দামে দর হাঁকাচ্ছেন চামড়ার মহাজনরা। ফলে সিজনাল এবং ছোট ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে। লোকশানগুনতে হচ্ছে তাদের। যে কারণে ঈদের দ্বিতীয়দিনে চামড়া ক্রয়ে দেখা যায়নি তেমন কোন আগ্রহ।

এমন কি রাজধানী ঢাকায় কোথাও কোথাও কোরবানীর পশুর চামড়া ক্রয়ের ক্রেতা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। উপায়ন্তর না দেখে রাস্তার পাশে অনেককে চামড়া ফেলে যেতে দেখা যায়। সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি এসে রাতে তা নিয়ে যায়। আজ রোববার ঈদের দ্বিতীয় দিনেও দেখা মিলেছে এমন চিত্র। আছর নামাজ পড়ে খিলগাও রাস্তা ধরে যেতেই আমতলী মসজিদের পাশেই চামড়ার স্তুপ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

গরুর চামড়ায় কিছুটা দরদাম উঠলেও ছাগলের চামড়া নিতে চরম অনীহা। ময়লা হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিনে চলে ছাগলের কাাঁচা চামড়া গুলো। অথচ কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গতবারের চেয়ে এবার ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্স ল্যাব ও পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকা ঘুরে গতকাল দেখা যায়, লবণ ছাড়া বড় ও মাঝারি গরুর কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর যেসব গরুর চামড়া আকারে তুলনামূলক ছোট ও মান কিছুটা খারাপ, সেগুলো ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে দাম আরও কম।

চামড়ার আড়তদার ও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার ঈদে ৮০-৮৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ট্যানারিগুলো। ঈদের দিন কাঁচা চামড়া আসার হারও সন্তোষজনক। গতবারের চেয়ে প্রতি পিস চামড়া কিছুটা বেশি দরে কিনছেন বলেও দাবি করেন তাঁরা। যদিও গত কয়েক বছরের মতো এবারও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চামড়া বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য মেলেনি। কেউ কেউ বলেছেন, গতবারের চেয়েও দাম কম।

গত ২৬ মে কোরবানি পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এ ছাড়া ঢাকায় কাঁচা চামড়ার সর্বনিম্ন দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সাধারণত বড় আকারের গরুর চামড়া ৩১-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ঢাকায় মাঝারি আকারের গরুর ২৫ বর্গফুটের একটি লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬২৫ টাকা।

পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। সেখানে গতকাল শনিবার বিকেলে বড় ও মাঝারি আকারের গরুর কাঁচা চামড়া সর্বোচ্চ ৭০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সায়েন্স ল্যাব ও হাজারীবাগ এলাকায় একই দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। গত বছরও প্রায় একই রকম দাম ছিল।

জানতে চাইলে পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি মঞ্জুরুল হাসান  বলেন, সরকার নির্ধারিত দরে ট্যানারির মালিকেরা আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া কিনবেন। তবে আড়তদারেরা চামড়া কেনার সময় ২০-৩০ শতাংশ বাদ দেন। আবার ২০ ফুটের কম আয়তনের চামড়া তাঁরা নিতে চান না। সব মিলিয়েই আসলে কাঁচা চামড়া কেনেন আড়তদারেরা।

অবশ্য চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি এবার ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ১০৬ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ১২ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর ১০৪ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চলতি অর্থবছর রপ্তানি বেড়েছে। সেই হিসাবে চামড়ার দামও কিছুটা বেশি হওয়া উচিত। ট্যানারির মালিকেরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গতবারের চেয়ে ১০০-১৫০ টাকা বেশি দামে কিনেছেন প্রতিটি চামড়া। তবে বিকেলে দাম পড়ে গেছে।

সর্বশেষ ২০১৩ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বেশি ছিল। সেবার দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ৮৫-৯০ টাকা। তার পর থেকে বিভিন্ন কারণে চামড়ার দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। ২০১৯ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে বড় ধরনের ধস নামে। ন্যূনতম দাম না পেয়ে দেশের অনেক অঞ্চলে চামড়া সড়কে ফেলে ও মাটিতে পুঁতে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তাতে প্রায় ২৪২ কোটি টাকার চামড়ার নষ্ট হয়। পরের বছর সরকার তৎপরতা বাড়ালে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি। তবে বর্গফুটপ্রতি দাম কমে ৩৫-৪০ টাকায় দাঁড়ায়। তারপর গত চার বছর সরকার নির্ধারিত দাম কিছুটা বাড়লেও কোরবানির চামড়া বিক্রি হয়েছে সেই দরের চেয়ে কম দামে।

চামড়া দরপতনে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম।  তিনি বলেন, ইসলামবিরোধী চামড়া সিন্ডিকেট কৌশলে দরপতন ঘটিয়ে কোরবানির চামড়ার বাজার ধ্বংস করছে। এতে করে একদিকে গরিব-অসহায় মানুষ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ভাবে দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোও বঞ্চিত হচ্ছে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা থেকে। রোববার (৮ জুন) সংগঠনটির প্রচার ও দাওয়াহ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি।

মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, দেশে ইসলামী অনুশাসনের অভাবেই আজও অনেক মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। কোরবানির সময় বহু মানুষ লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে কোরবানিতে অংশ নিতে পারে না। অথচ কোরবানির চামড়া বিক্রি করে দেশের অনেক কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যায়। সেই চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার যে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করেছে, বাস্তবে কেউ সে দামে চামড়া কিনছে না। এতে বোঝা যাচ্ছে, চামড়া সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় এবং এটি কওমি শিক্ষা ব্যবস্থাকে আর্থিকভাবে দুর্বল করতে ষড়যন্ত্র করছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’