বিসিবি সভাপতি পদে ফারুক আউট বুলবুল ইন, ক্রিকেটাঙ্গনে উড়ছে নানা গুঞ্জন

- আপডেট সময় : ০১:০৬:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
- / ৪২ বার পড়া হয়েছে
ফারুক আহমেদ এর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাকে বিসিবি সভাপতি পদ থেকে বাদ দিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। বাংলাদেশে এমন নজির এবারই প্রথম। কিন্তু ফারুক তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেও সে দিকে কোন ভ্রুুক্ষেপ নেই ক্রীড়া উপদেষ্টার। তবে ক্রীড়া পাগল সাধারণ মানুষ মনে করেন ফারুকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত হওয়া জরুরি। তা না হয় বিষয়টি বিতর্কীতই থেকে যাবে বলে মনে করেন ক্রীড়া সংগঠকদের অনেকেই।
ক্রিকেট সংগঠনদের অনেকের মতে, দোষ তুলেই যদি ক্ষমতা কেড়ে নেয়া যায় তাহলে সেটা হবে অত্যান্ত দু:খ্যজনক। এমন কি একজন খ্যাতিমান ক্রিকেটারের ব্যক্তিত্বে এমন কালিমা দেয়া একটি বাজে উদাহরণ হয়ে থাকবে ক্রীড়াঙ্গেনে। নাম না প্রকাশে একজন সংগঠন বলেন, যার ক্ষমতা বলে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে বাদ দেয়া হয়েছে সেই ক্রীড়া উপদেষ্টার বিরুদ্ধেও তো ক্ষমতা অপব্যাবহার ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। তাকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য একটি রাজেনৈতিক দল থেকে লিখিত অভিযোগও দেয়া হয় প্রধান উপদেষ্টার দরবারে। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। তিনি মাপ ছেয়ে ক্ষমতা আকড়ে ধরে আছেন। তবে এক শ্রেণীর সমালোচকরা মনে করছেন সেনা প্রধানের সাথে ফারুক আহমেদের ভালো সম্পর্ক থাকার কারণেই ক্রীড়া উপদেষ্টার চক্ষুরোষে পড়েছেন সদ্য বিদায়ী সভাপতি।
জানা যায় ক্রিকেটের অনিয়মে শুদ্ধতা আনার জন্য ফারুক আহমেদ অনেকের চোক্ষুরোষে পড়েন। যাদের সবাই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোষর হিসেবে পরিচিত। তরুণ ক্রীড়া উপদেষ্টার সিদ্ধান্তের ফলে শেষ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে ফ্যাসিস্টদের উয়োৎসব হলো। আর তাই ক্রীড়াঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে সম্বন্বয়ক থেকে ক্রীড়া উপদেষ্টা হওয়া আসিফ কাদের পক্ষে কাজ করছেন?
সবার বিশ্বাস ক্রীড়া উপদেষ্টা ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করে দেখবেন। তদন্তে সত্যতা মিললে উপযুক্ত শাস্তি প্রদানের দাবি উঠছে ক্রিকেটাঙ্গনে।
ফারুক আহমেদকে সরিয়ে বিসিবি সভাপতি পদে নিযুক্ত করা হয় সাবেক জাতীয় দলের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে। দেশের ক্রিকেটাঙ্গনের অভিবাবক হিসেবে এই প্রথম দুই জন ক্রিকেটার সভাপতি পদে বসেছেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এ নিয়ে বিসিবিতে দুটি চিঠি পাঠায়। যার একটি ছিলো ফারুকের কাউন্সিলরশীপ বাদ দেয়া,অন্যটি হচ্ছে তার স্থলে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে কাউন্সিলর নিযুক্ত করে বিসিবি’র পরিচালক হিসেবে পাঠান। পরবর্তীতে মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে বোর্ড মিটিংয়ে সবার ভোটে বুলবুল সভাপতি হয়ে যান।
সভাপতির আসনে বসেই তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন টি-টুয়েন্টি ইভেন্টে চমক দেয়ার। অল্প সময়ের জন্য আসাটাকে তিনি প্রমান করতে চান। দেশের ক্রিকেটকে ডিসেন্ট্রালাইজ করতে চান। কথা বলেছেন সাকিব আল হাসানের দলে ফেরা নিয়েও। যার দ্বায়িত্ব কিনা নির্বাচকদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন।
বুলবুল বিসিবি’র সভাপতির আগ মুহুর্ত পর্যন্ত আইসিসিতে চাকরিরত ছিলেন। এই পেশায় দীর্ঘ ১৯ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন। সব মিলে ক্রিকেটাঙ্গনের সঙ্গে আছে প্রায় চল্লিশ বছরের মতো। খেলোয়াড় জীবন শেষ করে ক্লাব ক্রিকেটে কোচিং করিয়েছেন এরপর আইসিসি ও এসিসিতে ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করেছেন।
এবার বিসিবি সভাপতির পদে এসেছে শর্টটার্মের জন্য। যাকে তিনি টি-টুয়েন্টি ইভেন্টের সাথে তুলনা করেছেন। তবে এই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কিছু একটা চমক দেখাতে চান। সভাপতি পদে বসেই সে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথম ১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলে। ওই বছরেই পাকিস্তান এবং স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে চমক দেখায় বাংলাদেশ।
পরের বছর বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন। খেলা ছাড়ার পর বুলবুলের পরিচয় হয়েছে ক্রিকেট উন্নয়ন কর্মকর্তা হিসেবে। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ও আইসিসির হয়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বুলবুলের হাত ধরে ক্রিকেটের চর্চা শুরু হয়েছে। অথচ সেই বুলবুলের ক্রীড়াঙ্গনে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ফুটবলার হিসেবে।
রাজধানী ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় বুলবুলের বেড়ে ওঠা। আশির দশকে ফূটবলও খেলেছেন। আর সেই সময় গেন্ডারিয়াতে গেন্ডারিয়া ফেমাস, ইস্ট এন্ড ক্লাব ঘরোয়া ফুটবলে বেশ সমাদৃত। অন্য দশ জনের মতো বুলবুলের শৈশব কেটেছে ফুটবলে। এলাকার দল গেন্ডারিয়া ফেমাস, ইস্ট এন্ড হয়ে পরবর্তীতে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ভিক্টোরিয়া ক্লাবের হয়ে ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগ খেলেছেন।
আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে তাই অন্য চোখে দেখেন সাবেক ফুটবলাররা। তাকে নিয়ে আলাদা গর্বও করেন তারা। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার মামুন বাবুর বেড়ে উঠা গেন্ডারিয়াতেই। তাই বুলবুলকে একেবারে ছোটবেলা থেকেই তার চেনা। ফুটবলার বুলবুল নিয়ে মামুন বাবুর মন্তব্য, ‘এলাকায় বুলবুল আমাদের পরের ব্যাচ। বেশ ভালো ফুটবলারই ছিল সে। বিশেষ করে গোল করার অ্যাবিলিটি দারুণ ছিল। সে যদি ফুটবলেই থাকত তাহলে ফুটবলার হিসেবেও অনেক বড় হতে পারত।
তবে ক্রিকেটের পেছনেও তার অনেক সাধনা ছিল। ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। খেলোয়াড় বুলবুলের মতোই মানুষ বুলবুল অসাধারণ। এক সময়ের ফুটবলার এখন দেশের ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি বিষয়টি ফুটবলারদের জন্য দারুণ রোমাঞ্চের।’
সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক তিন যুগ আগের স্মৃতি হাতড়ে বলেন, ‘আমি মোহামেডানের হয়ে খেলছিলাম বুলবুল ভিক্টোরিয়ার। আমার এক ট্যাকেলে সে আঘাত পায়। ঐ আঘাত কাটিয়ে আর ফুটবলে ফিরেনি, পরে ক্রিকেটে মনোযোগ দিয়েছিল।’
সাবেক তারকা ফুটবলার ও বাফুফে নির্বাহী সদস্য গোলাম গাউস বুলবুল সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের সময়ে ফুটবলার-ক্রিকেটার ও হকি খেলোয়াড়দের মধ্যে অত্যন্ত দারুণ সম্পর্ক ছিল। আমরা একেকজন একেক খেলার একেক ক্লাবের হয়ে একে অন্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। আমাদের মধ্যে এখনো সেই সম্পর্ক রয়েছে।’