প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন : ড.ইউনুস

- আপডেট সময় : ১২:৩৬:০৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
- / ৪০ বার পড়া হয়েছে
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিস্কার বার্তা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে । যে কারণে নির্বাচন আয়োজনের শেষ সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। তবে এই নির্বাচন হবে চলতি বছরের ডিসেম্বরেও আবার হতে পারে। বড় রাজনৈতিক দলগুলো থেকেও এই দাবি ওঠছে।
দেশের নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার জাপানের রাজধানী টোকিওতে নিক্কেই ফোরাম: ৩০তম ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলন-২০২৫’-এ মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেন তিনি। বর্তমানে চারদিনের সফরে জাপানে অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সম্মেলনে বক্তব্যের শুরুতে ড. ইউনূস বলেন, নিক্কেই ফোরাম:৩০তম ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলনের এ গৌরবময় অনুষ্ঠানে আপনাদের সামনে কথা বলার সুযোগ পেয়ে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। নিক্কেই ফোরাম এশিয়ার ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা ও আলোচনার এক বাতিঘর হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত।
নতুন এক বাংলাদেশ গঠনে জাপানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তরুণদের সঙ্গে নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়তে চান। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক তরুণ জনগোষ্ঠী। তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বপ্নের বাংলাদেশে রূপান্তরিত করা সম্ভব।
সম্মেলনে মূল বক্তার বক্তব্য শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমরা পুরনো বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাই না। নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে সরকার জাপানসহ বন্ধু ও সহযোগী দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংস্কার আমাদের একটি এজেন্ডা। এরপর ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচার এবং তৃতীয় এজেন্ডা হচ্ছে নির্বাচন। চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অনেকেই বলছেন কেন জুনের মধ্যে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যে কেন হবে না? এটা নির্ভর করছে আমরা কতটুকু সংস্কার করতে পারছি তার ওপর। আমরা এভাবে দেশকে ছেড়ে দিতে পারি না। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা এমন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, যা ন্যায়বিচার, সমতা, স্বাধীনতা এবং মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করবে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রে একটি শান্তিপূর্ণ ও কার্যকর রূপান্তর ঘটাবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ এবং সংঘর্ষে অসংখ্য মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংস হচ্ছে। ইউক্রেন, গাজা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সংঘর্ষ চলছে। আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সাম্প্রতিক ভূমিকম্প সেই মানবিক বিপর্যয়কে আরও গভীর করে তুলেছে। সম্প্রতি, আমাদের দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি হলেও ব্যয়বহুল যুদ্ধ হয়েছে।
এই দুই দেশের নেতাদের যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য ড. ইউনূস ধন্যবাদ জানান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাপান সফরের প্রথম দিনে টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লিগের (জেবিপিএফএল) প্রেসিডেন্ট তারো আসো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালেও নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলেছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি জানিয়েছেন, যে কোনো পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে সময় তারো আসোকে প্রধান উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে- সংস্কার, ছাত্র-জনতার খুনিদের বিচার এবং সাধারণ নির্বাচন।
নিক্কেই ফোরাম:৩০তম ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলনে যোগ দিতে বুধবার (২৮ মে) স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৫ মিনিটে জাপান পৌঁছান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত দাউদ আলী টোকিও বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। এর আগে মঙ্গলবার (২৭ মে) বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ২টার দিকে জাপানের উদ্দেশে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন প্রধান উপদেষ্টা।