ঢাকা ১১:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

নজর কেড়েছে চীনের তৈরি ফাইটার বিমান জে-১০সি ভিগোরাস ড্রাগন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:০৯:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫
  • / ৪২ বার পড়া হয়েছে
অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

পাকিস্তানের সামরিক শক্তি দেখে হতবাক ভারত। পাকিস্তানের বিমান হামলাগুলো ভারত সরকারকে হতবাক করে দিয়েছে। ভয়ঙ্কর বিপদ আশঙ্কা করেই আমেরিকার প্রস্তাব মেনে নিয়েছে ভারত। ভারতের বিপক্ষে আকাশ লড়াইয়ে পাকিস্তান ব্যবহার করেছে চীনের তৈরি জি-১০ ভিগোরাস ড্রাগন ফাইটার জেট। ভারতের আধুনিক ফাইটার জেটগুলোর মোকাবিলায় ২০২২ সালে পাকিস্তান এই অত্যাধুনিক ফাইটার জেটগুলো সংগ্রহ করে এবং পরে নিজেদের বিমানবাহিনীতে যুক্ত করে।

ভারতের বিপক্ষে চীনা এই যুদ্ধবিমানের অংশগ্রহণ শুধু জেটটির সক্ষমতাই প্রমাণ করেনি, বরং চীনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানিতে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকেও সামনে এনে দিয়েছে। রোববার (১১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।

জে-১০সি তৈরি করেছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন। এটি মাঝারি ওজনের, একক ইঞ্জিনবিশিষ্ট মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান, যার কাজ মূলত আকাশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। তবে এটি আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানার কাজেও দক্ষ।

২০০৪ সালে প্রাথমিকভাবে জে-১০ চালু হলেও, জে-১০সি সংস্করণটি প্রযুক্তিগত ও সামরিক দিক থেকে অনেক উন্নত এবং পশ্চিমা বিশ্বের এফ-১৬-এর মতো উন্নত যুদ্ধবিমানের সঙ্গে তুলনাযোগ্য।

জে-১০সি ফাইটার জেটের নানা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অত্যাধুনিক এই চীনা ফাইটারের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— কানার্ড-ডেল্টা উইং ডিজাইন। এটি মূলত ককপিটের ঠিক পেছনে দুটি ছোট পাখা, যা এই যুদ্ধবিমানের নিয়ন্ত্রণ ও গতি বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়া অত্যাধুনিক এই চীনা যুদ্ধবিমানে ১১টি অস্ত্র বহনের জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে যুদ্ধবিমানের বডিতে ৫টি ও প্রতিটি ডানায় ৩টি করে অস্ত্র বহনের ব্যবস্থা রয়েছে।

জে-১০সি যুদ্ধবিমানটি অত্যাধুনিক নানা ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। এর মধ্যে আকাশ-থেকে-আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র— পিএল-৮, পিএল-১১, পিএল-১২, পিএল-১৫ (সবই চীনা), এবং আর-৭৩ ও আর-৭৭ এর মতো কিছু রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রও এই বিমানটি বহন করতে পারে।

এছাড়া আকাশ থেকে স্থল ভূখণ্ডে হামলার ৫০০ কেজির ৬টি পর্যন্ত বোমা বা রকেট বহন করতে পারে চীনা এই মাল্টিরোল ফাইটার জেটটি। এটি একটি ২৩ মিমি কামানও বহন করতে পারে।

অন্যদিকে জে-১০সি যুদ্ধবিমানে এইএসএ (AESA) রাডার রয়েছে। এর মাধ্যমে একসাথে ১০টি লক্ষ্য খুঁজে ৪টিকে আক্রমণ করতে পারে অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমানটি, সেটিও প্রায় ১০০ কিমি দূর থেকেই।

এছাড়া ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার ও লেজার-গাইডেড পড প্রযুক্তি চীনা এই ফাইটার জেটটিকে শত্রুর রাডার থেকে লুকোতে এবং নিখুঁত আঘাত হানতে সাহায্য করে।

জে-১০ যুদ্ধবিমানের প্রাথমিক সংস্করণগুলোতে ছিল রাশিয়ান এএল-৩১ ইঞ্জিন, যা এসইউ-২৭-এর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু জে-১০সি যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত হচ্ছে চীনের তৈরি ডব্লিউএস-১০বি ইঞ্জিন, যা পারফরম্যান্সে উন্নত এবং চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতিফলন।

২০২৫ সালে ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে পাকিস্তানের জে-১০সি ব্যবহারের মাধ্যমে এটি প্রথমবারের মতো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়। পাকিস্তানের প্রায় ৮০ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম এখন চীন থেকে আসে, যার ফলে জে-১০সি অন্তর্ভুক্তি তাদের বিমানবাহিনীকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, জে-১০সি অনেকাংশেই অত্যাধুনিক এফ-১৬-এর মতো এবং এর পিএল-১৫ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি পাল্টে দিতে পারে। এই সাফল্যে চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট কোম্পানির শেয়ারের দাম এক সপ্তাহে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

চীনের বৈশ্বিক অস্ত্রবাজারে এগিয়ে চলা
২০২৪ সালে দুবাই এয়ার শো-তে চীনের “আগস্ট ফার্স্ট অ্যারোবেটিক্স টিম” জে-১০সি নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রদর্শনী করে। এটি ছিল জে-১০সি-এর আধুনিকায়নের পর প্রথম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী।

পাকিস্তান ২০২০ সালে প্রথম ২৫টি জে-১০সি অর্ডার করে, পরে অর্ডার করে আরও ১১টি। ২০২৫ সালের মধ্যে তারা ২০টি হাতে পেয়েছে।

চীন এখন এই সফলতা কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে লক্ষ্য করছে। মিসর ইতোমধ্যেই এই যুদ্ধবিমানের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। এছাড়া আলজেরিয়া ও সৌদি আরব — যারা ইতোমধ্যে চীনা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে — তারাও এই মাল্টিরোল ফাইটার জেটের দিকে ঝুঁকছে।

মূলত জে-১০সি একসময় ‘নকল’ বা অন্য ফাইটার জেট থেকে ‘অনুপ্রাণিত’ ডিজাইন হিসেবে সমালোচিত হলেও এখন এটি প্রমাণ করেছে যে— এটি আধুনিক, কার্যকরী এবং চীন-নির্মিত অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান।
যদিও ডিজাইনে মিরাজের প্রভাব আছে, এর ক্যানার্ড-ডেল্টা স্ট্রাকচার, নিজস্ব ইঞ্জিন, উন্নত রাডার ও অস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি নিজস্ব পরিচয় তৈরি করে নিয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নজর কেড়েছে চীনের তৈরি ফাইটার বিমান জে-১০সি ভিগোরাস ড্রাগন

আপডেট সময় : ০৪:০৯:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫

পাকিস্তানের সামরিক শক্তি দেখে হতবাক ভারত। পাকিস্তানের বিমান হামলাগুলো ভারত সরকারকে হতবাক করে দিয়েছে। ভয়ঙ্কর বিপদ আশঙ্কা করেই আমেরিকার প্রস্তাব মেনে নিয়েছে ভারত। ভারতের বিপক্ষে আকাশ লড়াইয়ে পাকিস্তান ব্যবহার করেছে চীনের তৈরি জি-১০ ভিগোরাস ড্রাগন ফাইটার জেট। ভারতের আধুনিক ফাইটার জেটগুলোর মোকাবিলায় ২০২২ সালে পাকিস্তান এই অত্যাধুনিক ফাইটার জেটগুলো সংগ্রহ করে এবং পরে নিজেদের বিমানবাহিনীতে যুক্ত করে।

ভারতের বিপক্ষে চীনা এই যুদ্ধবিমানের অংশগ্রহণ শুধু জেটটির সক্ষমতাই প্রমাণ করেনি, বরং চীনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানিতে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকেও সামনে এনে দিয়েছে। রোববার (১১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।

জে-১০সি তৈরি করেছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন। এটি মাঝারি ওজনের, একক ইঞ্জিনবিশিষ্ট মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান, যার কাজ মূলত আকাশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। তবে এটি আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানার কাজেও দক্ষ।

২০০৪ সালে প্রাথমিকভাবে জে-১০ চালু হলেও, জে-১০সি সংস্করণটি প্রযুক্তিগত ও সামরিক দিক থেকে অনেক উন্নত এবং পশ্চিমা বিশ্বের এফ-১৬-এর মতো উন্নত যুদ্ধবিমানের সঙ্গে তুলনাযোগ্য।

জে-১০সি ফাইটার জেটের নানা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অত্যাধুনিক এই চীনা ফাইটারের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— কানার্ড-ডেল্টা উইং ডিজাইন। এটি মূলত ককপিটের ঠিক পেছনে দুটি ছোট পাখা, যা এই যুদ্ধবিমানের নিয়ন্ত্রণ ও গতি বাড়িয়ে দেয়।

এছাড়া অত্যাধুনিক এই চীনা যুদ্ধবিমানে ১১টি অস্ত্র বহনের জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে যুদ্ধবিমানের বডিতে ৫টি ও প্রতিটি ডানায় ৩টি করে অস্ত্র বহনের ব্যবস্থা রয়েছে।

জে-১০সি যুদ্ধবিমানটি অত্যাধুনিক নানা ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। এর মধ্যে আকাশ-থেকে-আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র— পিএল-৮, পিএল-১১, পিএল-১২, পিএল-১৫ (সবই চীনা), এবং আর-৭৩ ও আর-৭৭ এর মতো কিছু রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রও এই বিমানটি বহন করতে পারে।

এছাড়া আকাশ থেকে স্থল ভূখণ্ডে হামলার ৫০০ কেজির ৬টি পর্যন্ত বোমা বা রকেট বহন করতে পারে চীনা এই মাল্টিরোল ফাইটার জেটটি। এটি একটি ২৩ মিমি কামানও বহন করতে পারে।

অন্যদিকে জে-১০সি যুদ্ধবিমানে এইএসএ (AESA) রাডার রয়েছে। এর মাধ্যমে একসাথে ১০টি লক্ষ্য খুঁজে ৪টিকে আক্রমণ করতে পারে অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমানটি, সেটিও প্রায় ১০০ কিমি দূর থেকেই।

এছাড়া ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার ও লেজার-গাইডেড পড প্রযুক্তি চীনা এই ফাইটার জেটটিকে শত্রুর রাডার থেকে লুকোতে এবং নিখুঁত আঘাত হানতে সাহায্য করে।

জে-১০ যুদ্ধবিমানের প্রাথমিক সংস্করণগুলোতে ছিল রাশিয়ান এএল-৩১ ইঞ্জিন, যা এসইউ-২৭-এর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু জে-১০সি যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত হচ্ছে চীনের তৈরি ডব্লিউএস-১০বি ইঞ্জিন, যা পারফরম্যান্সে উন্নত এবং চীনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রতিফলন।

২০২৫ সালে ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষে পাকিস্তানের জে-১০সি ব্যবহারের মাধ্যমে এটি প্রথমবারের মতো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়। পাকিস্তানের প্রায় ৮০ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম এখন চীন থেকে আসে, যার ফলে জে-১০সি অন্তর্ভুক্তি তাদের বিমানবাহিনীকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, জে-১০সি অনেকাংশেই অত্যাধুনিক এফ-১৬-এর মতো এবং এর পিএল-১৫ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি পাল্টে দিতে পারে। এই সাফল্যে চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট কোম্পানির শেয়ারের দাম এক সপ্তাহে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

চীনের বৈশ্বিক অস্ত্রবাজারে এগিয়ে চলা
২০২৪ সালে দুবাই এয়ার শো-তে চীনের “আগস্ট ফার্স্ট অ্যারোবেটিক্স টিম” জে-১০সি নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রদর্শনী করে। এটি ছিল জে-১০সি-এর আধুনিকায়নের পর প্রথম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী।

পাকিস্তান ২০২০ সালে প্রথম ২৫টি জে-১০সি অর্ডার করে, পরে অর্ডার করে আরও ১১টি। ২০২৫ সালের মধ্যে তারা ২০টি হাতে পেয়েছে।

চীন এখন এই সফলতা কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে লক্ষ্য করছে। মিসর ইতোমধ্যেই এই যুদ্ধবিমানের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। এছাড়া আলজেরিয়া ও সৌদি আরব — যারা ইতোমধ্যে চীনা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র কিনছে — তারাও এই মাল্টিরোল ফাইটার জেটের দিকে ঝুঁকছে।

মূলত জে-১০সি একসময় ‘নকল’ বা অন্য ফাইটার জেট থেকে ‘অনুপ্রাণিত’ ডিজাইন হিসেবে সমালোচিত হলেও এখন এটি প্রমাণ করেছে যে— এটি আধুনিক, কার্যকরী এবং চীন-নির্মিত অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান।
যদিও ডিজাইনে মিরাজের প্রভাব আছে, এর ক্যানার্ড-ডেল্টা স্ট্রাকচার, নিজস্ব ইঞ্জিন, উন্নত রাডার ও অস্ত্র ব্যবস্থার মাধ্যমে এটি নিজস্ব পরিচয় তৈরি করে নিয়েছে।