দ্বিতীয় মেয়াদের শাসনে ট্রাম্পের ১০০ দিনে ১০ আলোচিত ঘটনা

- আপডেট সময় : ০২:৩৬:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫
- / ৬২ বার পড়া হয়েছে
এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের জনগন ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর ভরসা রেখে তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর চরম পতন। এক মেয়াদ পর আবারো যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের পছন্দের নেতা হয়ে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। মূলত তাকে ফের ক্ষমতায় বসানোর রহস্যটাই হচ্ছে ফিলিস্তিনি ইস্যু। ফিলিস্তিনিদের উপর নির্মম অত্যাচারের জন্য বাইডেন প্রশাসনকে দায়ী করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জনগন। যার ফরে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ফিরে আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস এন নজির বিহীন ঘটনা ঘটেছে। দেশটির প্রায় আড়াইশো বছরের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে এক মেয়াদের বিরতিতে দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট।
৫ বছরের জন্য দ্বিতীয় মেয়াদে শাসনভার গ্রহন করা ট্রাম্পের ১০০ দিন পূর্ণ হলো আজ। চেয়ারে বসেই নানা সিদ্ধান্তে ঝড় তুলেন তিনি। হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে বৈশ্বিক নানা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও কূটনৈতিক অবস্থানে বড় পরিবর্তন এসেছে। তার সিদ্ধান্তগুলো যেমন বিশ্ববাজারে প্রভাব ফেলেছে, তেমনি পররাষ্ট্রনীতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশাসনের দিক থেকেও নানান আলোড়ন তুলেছে।
নিচে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঢাকা ডেইলি মেট্রোর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো…
১/ ২০ জানুয়ারি: রেকর্ড সংখ্যক নির্বাহী আদেশ
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কার্যালয়ে ফিরে প্রথম দিনেই ট্রাম্প ২৬টি নির্বাহী আদেশে সই করেন—যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং চার বছর আগে ক্যাপিটল হিলে হামলায় জড়িত দণ্ডপ্রাপ্তদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।
২/ ৪ ফেব্রুয়ারি: গাজা পুনর্গঠনের বিতর্কিত প্রস্তাব
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা ১৮ মাস ধরে চালানো এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৫১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। হামলার পাশাপাশি ইসরায়েল গাজাতে সর্বাত্মক অবরোধও জারি রেখেছে।
এর ফলে গাজায় বহু মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছেন। এমন অবস্থায় সমস্যার টেকসই সমাধানের পথে না হেটে ট্রাম্প গাজা পুনর্গঠনের বিতর্কিত প্রস্তাব দেন।
মূলত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প গাজা উপত্যকাকে “মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা” বানানোর প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তা পুনর্গঠনের কাজ করবে—যেখানে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বসবাস করেন। তার মন্তব্যে বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
৩/ ১২ ফেব্রুয়ারি: মাস্ক ও ‘ডোজ’ নিয়ে হোয়াইট হাউসে শোরগোল
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের ও বিলিওনিয়ার ইলন মাস্ক ও তার ছেলেকে ওভাল অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইলন মাস্ক “ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি” বা (ডিওজিই) নামে ট্রাম্প প্রশাসনের একটি সরকারি দপ্তরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এই দপ্তরের কাজ যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি খরচ কমাতে উদ্যোগ নেওয়া। যদিও মাস্কের এই দায়িত্বে স্বচ্ছতা ও স্বার্থের সংঘাত নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে সেদিনের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের বক্তব্যের সময় মাস্কের ছেলে এক্স — যার পুরো নাম X Æ A-Xii — বকবক ও ছটফট করায় সেখানে শোরগোল সৃষ্টি হয়।
৪/ ১২ ফেব্রুয়ারি: পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন ট্রাম্পের
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯০ মিনিটের এক দীর্ঘ ফোনালাপ করেন, যা পশ্চিমাদের কাছে কূটনৈতিক চমক হিসেবে সামনে আসে। পরে আরও একটি ফোনালাপ করেন তারা ও এরপর ইউরোপকে বাদ দিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বন্দি বিনিময় হয়েছে দুইবার।
৫/ ১৪ ফেব্রুয়ারি: ইউরোপকে ধমক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের
মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউরোপীয় দেশগুলোকে বাকস্বাধীনতা সীমিত করার জন্য ধমক দেন। একইসঙ্গে ইউরোপীয় দেশগুলোতে সেদিন তিনি সামরিক খরচ আরও বাড়াতে বলেন এবং অভিবাসন নীতির কঠোর সমালোচনা করেন।
এতে ট্রাম্প প্রশাসনের ইউরোপে ঐতিহ্যগত সম্পর্কের অবসান স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
৬/ ২৮ ফেব্রুয়ারি: জেলেনস্কিকে অপমান
এদিন হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স প্রকাশ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার জন্য যথেষ্ট কৃতজ্ঞ না হওয়ার অভিযোগে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন।
জবাবে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টও প্রত্যুত্তর দেন এবং একপর্যায়ে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। এই ঘটনায় ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার বলেন, “ট্রাম্প ও ভ্যান্স পুতিনের কাজকে সহজ করছেন।”
৭/ ৭ মার্চ: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করে, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিরোধী ও ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এর জেরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল কেটে দেওয়া হয় এবং হার্ভার্ডের ২.২ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ আটকে দেওয়া হয়।
এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কথা মতো কাজ না করলে ভবিষ্যতে আর কোনও বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এমন কথা জানিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট।
৮/ ১৫ মার্চ: গণপ্রত্যাবাসন
একটি যুদ্ধকালীন আইনের ব্যাখ্যায় ২০০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজন গ্যাং সদস্যকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এল সালভাদরের একটি উচ্চ নিরাপত্তার কারাগারে পাঠানো হয়। আদালতের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করায় বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। এক বিচারক বলেছেন, আদালত অবমাননায় দোষী হতে পারে ট্রাম্প প্রশাসন।
৯/ ২৬ মার্চ: গ্রিনল্যান্ড দখলের ইচ্ছা
দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ড দখল করতে সামরিক শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়ে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত মার্চের শেষ সপ্তাহে ট্রাম্প আবারো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন। তিনি বলেও দেন, প্রয়োজনে বলপ্রয়োগেও তা সম্ভব।
তবে ডেনমার্কের নেতারা ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স ও তার স্ত্রী কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি ঘুরে ফিরে আসেন।
১০/ ২-৯ এপ্রিল: বিশ্বব্যাপী শুল্ক যুদ্ধ
ট্রাম্প প্রথমে বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তবে পরে তিনি বেশিরভাগ পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ১০ শতাংশে সীমাবদ্ধ করে ৯০ দিনের জন্য ছাড় দেন, যদিও চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক কার্যকর থাকে। এতে বৈশ্বিক বাজারে কার্যত ধস নামে। একইসঙ্গে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পায় এবং ডলারের মান পড়ে যায়।