রুপপুর প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন আবারো পেছাচ্ছে

- আপডেট সময় : ০৭:২৬:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
- / ৪৩ বার পড়া হয়েছে
সঞ্চালন লাইনের কাজের ধীর গতির কারণে আবারো পেছাচ্ছে রুপপুর প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন। নদী দিয়ে গ্রিড লাইন পারাপারের কাজ শেষ না হওয়ায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে নির্মিত দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের উৎপাদন শুরু হয়েও হতে পারছে না। এ কারণে ও দেরি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি, আন্তর্জাতিক পারমানবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সদস্যরা পদ্মা নদীর পাড়ের এই প্রকল্প এলাকায় কাজের আগ্রগতি পরিদর্শনে আসেন। তাদের সঙ্গে আলোচনায়ও গ্রিড লাইন কাজের বিলম্বের বিষয়টি বারবার উঠে আসে।
প্রকল্পের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে আইএইএ প্রতিনিধি দল ২৪ ক্যাটাগরিতে ভালোভাবে কাজ সম্পন্ন করার জন্য সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও সুনির্দিষ্ট ১৭টি বিষয়ে আরও উন্নতি করার সুপারিশ এসেছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
প্রকল্পের উৎপাদন শুরু করতে যেসব প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে অসম্পন্ন গ্রিড লাইনের কাজের বিষয়টি উঠে এসেছে। আইএইএর ১৭টি পরামর্শের মধ্যে অন্যতম হলো—প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রকল্প এলাকায় পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করাসহ প্রকল্পের কাজের বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক।
আইএইএর প্রতিনিধিদলের পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের উৎপাদন শুরুর আগে সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা পাওয়া গেছে বলে মনে করছেন প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা ড. জাহিদুল হাসান জানান, ‘আইএইএর নির্দেশনা মেনে রূপপুর প্রকল্পের প্রতিটি কাজের অগ্রগতি হচ্ছে’ ।
প্রকল্পের উৎপাদন শুরু করার আগে আইএইএর নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ দল প্রকল্পের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পরেই উৎপাদন শুরুর দিকে যেতে পারবে দেশের সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল এ বিদ্যুৎ প্রকল্পটি। এ লক্ষ্যে আইএইএর প্রতিটি নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করেই কাজের অগ্রগতি হচ্ছে বলে জানান প্রকল্প কর্মকর্তা।
সম্প্রতি মার্চে আইএইএর প্রতিনিধি দল প্রকল্প পরিদর্শনের পরে ২৪টি দিক তুলে ধরেছে, যা প্রকল্পের এ পর্যায়ে একটি বড় অর্জন বলে মনে করা হচ্ছে। ড. জাহিদুল হাসান বলেন, ‘প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের কাজ ৯৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু করার জন্য পদ্মা নদীর উপর নির্মিতব্য গ্রিড লাইনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হবে। এবং সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হওয়ার পরে উৎপাদনে যেতে ৩-৪ মাস পর্যন্ত সময় লাগবে ‘
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর প্রকল্পের জন্য ১৬ কিলোমিটার নদী পারাপার লাইনসহ ৬৬৯ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে, পদ্মা নদীর উপর ২ কিলোমিটার নদী পারাপার লাইন প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরুর আগেই শেষ করতে হবে। যমুনা নদীর উপর ১৪ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরুর আগে প্রয়োজন হবে বলে জানান প্রকল্প কর্মকর্তারা।
তবে পদ্মা নদীর উপর সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় রূপপুর প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরুর আগে প্রয়োজনীয় অনেক পরীক্ষা এখনো শুরু করা যায়নি বলে জানা যায়।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, নদী পার করার সঞ্চালন লাইনের টাওয়ার নির্মাণ কাজ শেষ দিকে। এখন নদীর মাঝের টাওয়ার নির্মাণের কাজ চলমান। নদী পারাপার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. দেলওয়ার হোসেনের মতে, ‘ইতোমধ্যে পদ্মা নদীর উপর সঞ্চালন লাইনের কাজের ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। মে মাসের মধ্যে এই সঞ্চালন লাইনের কাজ পুরোপুরি শেষ হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
জানা যায়, ইতোমধ্যে রূপপুর-বগুড়া ৪০০ কেভি সিঙ্গেল সার্কিট লাইন ও রূপপুর বাঘাবাড়ি ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন সচল রয়েছে। এ লাইনগুলো দিয়ে ৪ হাজার মেগওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব। ফলে প্রকল্পের যন্ত্রপাতি পরীক্ষার জন্য এসব লাইন দিয়ে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।তবে পারমাণবিক প্রকল্প অন্য সব প্রকল্পের মতো নয়। এখানে প্রতিটি কাজ শতভাগ নিশ্চিত করেই তবে পরবর্তী ধাপে যেতে হয়।
প্রকল্প সুত্র জানাযায়, ইতোমধ্যে প্রকল্পের চলমান লাইন দিয়ে প্রথম ইউনিটের প্রাইমারি সার্কিটের ২৪ দশমিক ৫ মেগাপিক্সেল প্রেসার দিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা। তারাই চালাচ্ছে নানা ধরণের পরীক্ষা-নিরিক্ষা। এরপরেই প্রকল্পের উৎপাদনে যাওয়ার প্রস্তুতির পালা।